বক ওত শা ্য কী

বাণী বামমণি

অহামায়া দেবী

বেশ্বাস পাবলিশিং হাভস

৫1১৩ কহে ৫1, কন্দিকা ভা-৯

ওুক[শক 2 গ্রাবীরেজ্দ্নাথ বিশ্বাস ৫1১এ কলেজ রো, কল্িকাঁতা---৯

দ্বিতীয় প্রকাশ--টবশাখ, ১৩৬৭,

প্রচ্ছদ ব্ব্যসাচী দাসগুগ্ত

মুর্রাকক্ জআ্রীহর্িনারাষ্মণ দে গোপাল শ্প্রিন্টিং ওক্সাক্কস্‌ ২৫1১৬ কালীদাস ব্িংহ নেন, কলিকাতা-৯

এক

দরিদ্র পরিবারে জন্মালেও মা রামপ্রিয়া আদর করে মেয়ের নাঁম রাখেন রাণী। সত্যিই যেন রাণী হতে জন্মেছেন তিনি। মেয়ে তো সকলেরই আছে। তাদের মতে। এত লক্ষ্মী মেয়ে ক'জনের হয়।

ঘর আলো করা মেয়ে। আকাশে চাদ বুঝি সেদিন তাদের কুড়ে ঘরে নেমে এসেছিল সুন্দর সুগ্রী তার মুখশ্রী। সুনিপুণ দেহের গঠন ফসণ গায়ের রঙ

মা'র দেওয়া রাণী নামটি পরে মেয়ের জীবনে আশ্চর্যভাবে মিলে গিয়েছিল। তখন কে ভেবেছিল গ্রামের এই শিশুকন্যা বাঙলার আকাশে উজ্জল নক্ষত্রের মতো শোভা পাবে। ছন-ভ্রীবনে জনপ্রিয় হবেন ছিনি।

বাণী ছাড়াও শিশুকন্যার আর একটি নাম রাখা হয়েছিলঃ রালনণি।

রাসমণি পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিলেন না' তার বড় ছু'ভাই ছিল। বামচন্দ্র গোবিন্দ এই ছুটি পুত্র-সম্ভান জন্মাবার অনেক দিন পরে, পিতা হরেকৃষ্ণ দাসের ঘরে.-'বামপ্রিয়ার কোলে এলেন রাসমণি

বৃদ্ধ বয়সে এই সুন্দরী শিশু-কন্তাকে পেয়ে গ্রিতামাতার আর আনন্দের সীমা রইল ন1। খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল হরেকৃষ্জর |

তিনি জাতে ছিলেন মাহিষ্য। তিনি লোকের ঘর বেঁধে চাষ- আবাদ করে কোনরকমে দিন চালাতেন। অভাবের অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন খুব। গ্রামের লোকের! তাকে হারু ঘরামি বলেই ডাকত।

রাসমগি-_-১

জীবিকার জন্য তো খাটতে হতই। ছাড়া মান্থষের সেবায় কম পরিশ্রম করতেন না তিনি। কারোর উপকারের জন্য গায়ে খাটতে তার কার্পণ্য ছিল ন1।

রাসমণি ঘরে আসার পর, পিভাঁর সাংসারিক অবস্থাও একটু ভালোর দিকে যায়। মেয়ে তার লক্ষ্মী মেয়ের প্রতি তার স্েহের মাত্রাও বেড়ে যায়। সংসারে একটা খুশীর শআ্রোত বইতে থাকে

কতদিনকার আগেকার কথা এসব। রাসমণির পবিত্র জীবন- আজও মানুষের মুখে মুখে শুনা যায়

সেদিনটি ছিল বুধবার, ১১ই আশ্বিন, ১১০ বঙ্গাৰঝ। শরতের শিউলী ফুল ফুটে আছে গাছে গাছে। পদ্ম গ্ুকৃতির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে পুজার আনন্দে প্রতি মান্য মনে মনে পুলকিত মণ্ডপে মণ্ডপে মৃতি গড়ার তাগিদ পড়ে গেছে।

একটি শুভলগ্নে পৃথিবীর মাটিতে জন্ম নিলেন রাসমণি। হালি- সহরের কাছে কোন! গ্রামের এক কোণে, একটি ছোট্ট কুটিরে। হালিসহর সাধক কবি রামপ্রসাদের জন্মস্থান আর এক মহাপ্রাণের পিঠস্থান হলো। এখানে কোনা গ্রামও খুব ছোটে? ছিল তখন গঙ্গার পূ উপকূলে কোন গ্রাম অবস্থিত

পিতামাতার স্রেহনীড়ে একট একটু করে বড় হতে থাকেন রাসমণি। ছোট্ট বালিকার আচার আচরণে শুধু পিতামাতা নয়, পাড়া প্রতিবেশিরাও খুব খুশি হয়। ছোটে রাসমণি সেদিনই সকলের মন জয় করে নেয়। আদর কেড়ে নেয়। ]

রাসমণির প্রশংসা! ছড়িয়ে পড়তে থাকে পাড়ার যে কোনো নারী-পুরুষ রাস্তায় হরেকৃষ্ণকে দেখলেই তার মেয়ের কথ। জিজ্ঞাসা করে। শান্ত, নসর, ফুটফুটে এই সুন্দর মেয়েটি কোনা গ্রামের অনেকের মনের রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছিল

রাঁসমণি না ডেকে অনেকেই তীকে রাণী বলেই ডাকতেন। ছোটে। নাম তার উপর রাণীর মতই দেখতে হয়েছেন। কেউ কেউ

ন্‌

আঅও আদর করে রাণু বলেও ডাকতেন। পাড়ার সেরা মেয়ে সেরা সুন্দরী সেরা গুণবতী

সংসারের প্রতি তার একট। অকৃত্রিম টান ছোঁটবেলাতেই দেখা গেছে সঙ্গীদের সঙ্গে কখনও তিনি ঝগড়া করেন নি। সর্ধদ। সর্বক্ষণের জন্ত তার মুখে হাসি লেগে থাকতে! তার মিষ্টি ব্যবহারে কেউ তার ওপর কোনদিন রাগ করতে পারেনি বাবা-ম। পর্যস্ত তাকে কড়া কথ। বলবার স্থযোগ পাননি

স্বযোগ তার! পাবেন কেন ?

সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করলেও রাসমণি তো গাঁয়ের আর পাঁচট। মেয়ের মতো! সাধারণ মেয়ে ছিলেন না। বুদ্ধি আর বিবেচনায়ও তিনি ছিলেন গায়ের সের। মেয়ে

ধর্ম-আলোচনা, ধর্মকথ। শুনবার প্রতি প্রধান আকর্ধণ ছিল তার। ওই বয়সে মেয়েরা সাধারণতঃ খেলাধুলায় মেতে থাকেন, কিন্তু রাসমণি মা'র পাশে পাশে থেকে তার কচি হাতে মাকে সাহায্য করবার চেষ্টা করেছেন।

কোনে! কিছু চাওয়ার তাগিদ ছিল নাতার। তার! গরীব বাবার সামান্য আয়ু অভাবের সংসারে ভালো জামা-কাপড় চেয়ে বাব। মা'র মনে তিনি কষ্ট দেননি একদিনও

ভাবতে অবাক লাগে। উত্তর জীবনে ধিনি বাংলার একজন এশ্বধশালিনী মহিলা হয়েছিলেন তার বাল্যজীবন কত দারিদ্রতার মধ্যে কেটেছে ছু'বেল। ছু"সুঠো অন্ন জুটেছে মাত্র সখ করে সুন্দর ফ্রক গায়ে দিতে পারেন নি একদিনও | তারজন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে রাণীর ছুঃখ ছিল না একটুকু

হরেকৃষ্ণ রামপ্রিয়। হু'জনেরই ধর্মের ওপর ভীষণ বিশ্বাস ছিল। তারা গভীর ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তারা ছিলেন বিষুণর পূজারী বিষ্ণুর ভক্ত

পিতামাতাকে দেখে দেখে, ছোট বেলা থেকে মেয়েটির মনে

ভগবানের প্রতি ভক্কি শ্রদ্ধার বীজ দান। বাধতে থাকে রামায়ণ- মহাভারতের গল্প শুনতে তার কত আগ্রহ। এক এক সময় তাকে দেখে বৈষ্ণববাল! বলে ভূল হতো বৈষ্ণবদের মতো তিলক কেটে, মাল! পরতে পেলে শিশু রাসমণর আর আনন্দের সীম] থাকতো। না! কিশোরী কন্যাকে বৈরাগিণীর বেশে দেখাতও বেশ।

মেয়ের পুরা-আচারের এই ঝোক কারোর দৃষ্টি এড়ায়নি। পাড়া-প্রতিবেশীর। মুগ্ধ হয়ে মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। সাক্ষাৎ গোলকের লক্ষ্মী যেন মর্তে নেমে এসেছে হরেকৃষ্চর আর কোন হ,খ থাকবে না।

কন্সার এই প্রশংসায় হরেকুষ্ণর গরের অন্ত ছিল না। মেয়ে রাসমণির সুখ্যাতিতে আনন্দে ভরে উঠে মা'র বুক। তিনি কন্যাকে কোলে তুলে নেন। নেহের আবেগে কন্তার কচি অধরে চুম্বন, করতেন তিনি ভগবানের কাছে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থন। করতেন, তার এই মেয়ে যেন শতাঁয়ু হয়।

স্ুখে-ছুঃখে, হাসি-কানায় দিনগুলো কাটছিলো বেশ

কস্ত বেশিদিন আর এইভাবে কাটলো না। আঁকন্মিক বজপাতের মতই এই সংসারে একদিন বজ্রপাত হলো। সুখের সংসারে শোকের বান ভাকলো।। শোকের সীমা নেই শেষ নেই। এক্ষতির পুরণ নেই। অন্ত নেই।

রাসমণির বয়ন তখন বছর সাতেক হয়তে। হবে হঠাৎ জরে পড়লেন রামপ্রিয়।। জ্বর তো৷ কত. লোকেরই হয়! অস্থখ তে। মানুষের নিত্য সঙ্গী

কিন্ত মাত্র আটদিনের জ্বরে ঘটলে। এক চরম ছুর্ঘটন। এই পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতে। বিদায় নিলেন রাম প্রিয়া তার কর্ম- চঞ্চল দেহট। নিশ্চল পাথরের মৃত্তির মতো নীরব হয়ে গেল। চোখ বুক্ষে যেন কালনিদ্রায় শুয়ে আছেন সতীলক্ষ্মী রামপ্রিয়া স্বামীর

কোলে মাথা রেখে মরা নারীর যে কি সুখ, কি শাস্তি রামপ্পরিয়া তা অন্গভব করেছিলেন মরার মুহুতে

মার উপর নির্ভবশীল বালিকার মনে গভীর হুঃখের ছাপ পড়ল। রাসমণি খুব কীদলেন মার জন্য এই করুণ কান্নায় সেদিন অনেকের চোখের পাতাই ভিজে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা প্রবোধ দেন-- কারোর ম।'ই চিরদিন থাকেন নী তিনি ন্বর্গে গেছেন। ভগবানের ডাক পড়লে এমনি করে সকলেরই চলে যেতে হবে।

পিত। সান্ত্বনা! দেন কন্তাকে। মা গেলেও তিনি তো আছেন।

ম1 হারানো মেয়ের মন থেকে মায়ের অভাব দূর করতে হবে

কন্যার সুখের জন্য খুব ব্যাকুল হয়ে ওঠেন হরেকৃষ্ণ। আদরে স্নেহে বড় করতে লাগলেন তিনি রাসমণিকে পিতা হয়ে সঙ্গীর মতই সবদ তিনি কন্তার পাশাপাশি থাকতেন

দুই

ক্রমে ব্লাসমণি বারো বছরে পা দিলেন। যৌবনের পরিবন হয় অনেকটা এই বয়সেই তিনি সংসারের অনেক কাজ নিজের ঘাড়ে তৃলে নিয়েছিলেন পাঁক। গৃহিণীর মতই কৃর্তব্য কর্মগুলো তিনি করতেন নিজ হাতে

গঙ্গায় রোঞ্ই স্নান করতে যেতেন রাসমণি গঙ্গার ওই পবিত্র সললে স্নান না করলে তার মন তৃপ্ত হতে! না। জল তো কতই রয়েছে। পাড়ায় পুকুরের অভাব নেই। বেশি হাটতে হয় না। বাড়ির কাছেই একট। পুকুর ছিল। কিন্তু গঙ্গায় যাওয়া! তার বন্ধ হয়নি এক দিনও

এক অবশ্য কখনও আসতেন গঙ্গার ঘাটে | গ্রামের মেয়ে

খারাপ দেখতে লাগে সেটা তা ছাড়া সঙ্গীর সংখ্যা তে। কম ছিল ন। তার। রাসমণি বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গায় আসতেন নান করতে জল ছিটিয়ে খেলাও করতেন জলের মধ্যে

এক একদিন এই জলকেলীতে এমন আত্মহার। হয়ে যেতেন যে কোনদিকে খেয়াল থাকতো! না। সময়ও অনেক বয়ে যেতো। একদিন রাসমণি তার সঙ্গীদের সংগে গঙ্গায় সান করতে এসেছেন এই সময় জল পথে কোনাপল্লীর পাশ দিয়ে ত্রিবেণীতে যাচ্ছিলেন রাজচন্দ্র দাস।

_ কলিকাতার জানবাজারের প্রবল-প্রতাপ জমিদার গ্রীতরাম দাসের পুত্র তিনি খুব ধনী তারা। রাজচন্দ্র পর পর ছ'বার বিয়ে করেন। প্রথম! স্ত্রী পরমা সুন্দরী গুণবতী মহিলা ছিলেন। দেবকন্তার মতো! ছিল তাঁর বপ। তার প্রমোদ-উদ্যানে পদ্ম ফুলের মতই শোভ। পাচ্ছিলেন তিনি *

রাজচন্দ্রের আনন্দের সীমা ছিল না। তিনিক্ত্রীকে নিয়ে দেশ ভ্রমণে বেরোবার মনস্থ করেন। কিন্ত বেশিদিন এই সুখ তার ভাগ্যে টিকলে। না। তার প্রথমা স্ত্রী মারা গেলেন। রাজচন্দ্রের প্রমোদ- উদ্যান আ্রীয়মান হয়ে পড়ে মধু বিন ভ্রমরের নৃত্য তো' হয় না!

পিতা প্রীতরাম শোকাচ্ছন্ন পুত্রের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন পুত্রের পুনরায় 2ববাহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চারদিকে ঘটক ছুটতে নুরু করলো দ্বিতীয় স্ত্রী যখন রাঁজচন্দ্রের মারা গেলেন, তখন তিনি নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে লাগলেন। প্রিয়তমার সান্নিধ্য হয় তে! তার ভাগে) নেই।

দ্বিতীয়! স্ত্রী মার গেলে গ্রীতরাম পুত্রকে তৃতীয়বার বিয়ে করতে বললেন। তিনি নিজে পুনরায় রাজচন্দ্রের বিবাহের চেষ্টা করেন। কিস্ত তিনি পুত্রকে কিছুতেই পুনরায় বিবাহে রাজী করাতে পারছিলেন না এবার বেঁকে বসেছিলেন রাজচন্দ্র

একট ভ্রান্ত ধারণা তার মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। স্ত্রী-ধন

তার ভাগ্যে নেই। তিনি বিপত্বীক থাকবেন বরাবর জমিদারী কাজকর্মে ব্যস্ত থাকবেন সবক্ষণ। |

ত্রিবেণী তীর্থে প্রায়ই স্নান করতে আসতেন রাজচন্দ্র। গঙ্গা-ক্ষে নৌকা ভ্রমণ হতে! এই উপলক্ষ্যে ফুরফুরে হাওয়া আর নৌকার মৃছ কম্পন তার বেশ ভালই লাগতে।। এক এক সময় নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের নিঃসঙ্গতার কথ! ভেবে ব্যাকুল হয়ে উঠতেন রাজচন্দ্র।

এই দীর্ঘ জীবনট। এক এক। কি করে কাটাবেন? তার তো। অভাব নেই কোনে কিছুর--ধন-দৌলত, লোক-জন সব কিছুই রয়েছে তার। শুধু নেই একজন মনোরম প্রেয়সী। প্রেমের সৌরভ থেকে কি সে চিরদিন এই ভাবে বঞ্চিত থাকবে

ভাবতে ভাবতে এক একদিন রাজচন্দ্র স্মৃতির সমুদ্রে তলিয়ে যান। পৃথিকীটাকে ভার খুব নির্মম বলে মনে হয়। ভাগ্যের এই বিভম্বনা থেকে কি তার নিস্তার নেই ?

নৌক। থেকে রাজচন্দ্র এবার রাসমণিকে দেখতে পেলেন। ভার অন্তর মুহুর্তের জন্য আন্দোলিত হয়ে উঠলো।

রাসমণির এদিকে কোন জক্ষেপ ছিল না। তিনি তখন জান করছিলেন।

অপরিচিত এই গ্রাম্যবালাকে মনে মনে ভালবেসে ফেললেন রাজচন্দ্র। ত্রিবেণী থেকে ফিরে গিয়ে পিতাকে জানালেন মনের ইচ্ছা। ওই মেয়েটিকে পেলে তিনি পুনরায় বিবাহ করতে প্রস্তুত আছেন। পুত্রের বিবাহে মত হয়েছে জেনে পিতা খুব খুশী হলেন। গ্রীতরাম লোক পাঠালেন। পুত্রের ইচ্ছাই তীর প্রধান হলো তিনি কন্যার কুল-শীল-মান কিছুই গ্রাহ্য করলেন ন1।

রাসমণির পিত। হরেকৃঞ্চ দাস এই অসম্ভব প্রস্তাবে প্রথমে হতবাক হয়ে গেলেন। হাতে আকাশ পেলেন তিনি। প্রজাপতির বন্ধন না থাকলে বিয়ে সম্ভব হতো না। তার কন্তার প্রতি

ভগবানের কৃপাতৃষ্টি রয়েছে দেবতার ' আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে জন্মেছেন রাসমণি। |

কলকাতার এতবড় নামজাদা ধনী পরিবারের ছেলের সংগে তাঁরই মতো! গরীবের মেয়ের বিয়ে! কথা ভুলেও কল্পনা কর! যায়না কী অসম্ভবব্যাপার ! কি আশ্চার্ষ প্রস্তাব

রাসমণির পিতা খুব গরীব জ্গেনেও, গ্রীতরাম শীঘ্রই নিজের ছেলের সংগে তার কন্যার বিবাহের ওস্তাব করে পাঠালেন। শুভ-কাজ শীঘ্রই সম্পন্ন হওয়। উচিত 'অযথ1 দেগী করবার দরকার নেই

এখানে হরেকৃষ্খর আপত্তি উঠতেই পারে না। দ্বিরুক্তি না করে পরম শানন্দেই পাত্রপক্ষের প্রস্তাবে তিনি বাজী হলেন মত দিলেন মেয়ের বিয়েতে পিতা হিসাবে তার মত ব্যক্ত করার গুরুত্ব আছে। ্‌

শুভদিন ধাধ হলো।। ৮ই বৈশাখ সালট। ছিল ১২১১। মহা ধূমধামে, আনন্দ কলরবে রাপমণির সংগে পামচক্্র দাসের বিয়ে হয গেল। কন্যাপক্ষ গরীব হলেও পাত্রপক্ষ ভেো। গরীব নয়। জমিদার পুত্রের বিয়ে বেশ ঘট। করেই বিবাহ-টৎসব সম্পন্ন হলে!

শ[ম্ত) নম্র পল্লী-বালিকা রামমণি এসে উঠলেন শ্বশুরবাড়িতে সার্থক হলে। তার রাণী নাম। বাঁজপ্রাসাদের মতো। বিশাল অট্টালিকা জগিদার হলেও প্রীতিরাম দাসের প্রতিপত্তি ছিল রাজার মতই! তদানীন্তন ইংরেঞজ্জ সরকার তাকে যথেষ্ট সমীহ করতে

বধূ রাসমণি তার মিষ্টি বাবহারে অল্পদিনের মধ্যে স্বামীর মন জয় তে! করলেনই, শ্বশুরের চিত্তও জয় করে নিলেন। কিশোরী বধূর ন্তুনাম ছুড়িয়ে পড়লে: আত্মীয় কুলে পুত্রবধূর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন প্রীতরাম। রালমণির সেবা-শুশ্রধায় তার মন ভরে ওঠে। এইটুকু মেয়ের কর্তব্যবোধে বিস্মিত হতে হয়। এই

প্রামাদের প্রতিটি মানুষকে রাসমণি তাঁর ব্যবহারে আপন করে নিয়েছিলেন

রাজচন্দ্র প্রথম ভেবেছিলেন, গায়ের মেয়ে হয়তো! ঘরকুনে। হবে তেনন চালাক চতুর নিশ্চয়ন্ট হবে ন1। ফুলসজ্জার রাতে স্বামীর প্রেমাপিঙ্গনে তেমন সাড়। দিতে পারেননি রাসমণি। জড়সড় হয়ে খাটের একপাশে ঘোমট। টেনে বসেছিলেন

পিতার জন্য মন খু" ছিল চঞ্চল রাসমাণর পিতাকে ছেড়ে আসার সমঞ চোখের জলে শাড়ীর আচল ভিজে গিয়েছিল বাবার কথ ভাবছিলেন খুব তাকে ছেড়ে বাবার থাকতে খুব কষ্ট হবে। বাবা (সঠ ।চরছুঃখের মধ্যে পড়ে রইংলন। ভাগ্যের সুপ্রসন্নতায় আজ তিনি ধনীর গৃহিণী, প্রচুর সম্পদের অধিক্ণারিণী !

শ্বশুরবাড়ি এসে বাসমণি আগের চেয়ে আরো বিনয়ী, আরে। সেবাপরায়ণ। হয়ে উঠলেন তার সংল ব্যবহারে বাড়ির দাসদাসা পর্ধন্ত পরম তৃপ্তিশাভ করলো তিন সকলকেই মায়ার বন্ধনে আপন করে শিয়োছিলেন। তাঁর চরিত্রের এট। ছিল একটা মহৎ গুণ। অঙঙ্কার ভার মনে স্থান পায়নি একবিন্দুও সর্বদাই তিনি গৃহকর্মে ব্স্ত থাকতেন।

রাঞ্জচজ্র এক একদ্রিন অসময়ে বাড়তে এসে স্ত্রীকে ডভাকতেন। ন্বামীর স্নেহ ভাঁলবাঁনা। রাসমণির বড় পাথেয় ছিল একটি দিনের জন্যও তিনি স্বামীকে অনজ্ঞা কারননি। ' স্বামীকে যেমন ভাল- বাসতেন, ভক্তিও করতেন তেমনি।

রাসমণি তার কাজ আর বুদ্ধিতে বাড়ীর সর্বেসর্ব। হয়ে ওঠেন। রাসমণিকে বাদ দিয়ে কিছুই যেন ভাবা যায় না আর। শ্বশুর" শাশুড়ী রাপমণির খোক্ত করেন প্রতিমুহতে। তিনি ছাড়া কে তাদের সেবা করব, কে তাদের যত্ব করবে? বৃদ্ধ হয়েছেন তারা পুত্রবধূর ওপর সংসারের ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান তারা

একে একে রাসমণি সবাকছুর দাসত্ব নিজের ঘাড়ে টেনে নিলেন।

৪১

পাক1 গৃহিণী হয়ে উঠলেন তিনি। ঠাকুর পৃভোর ব্যবস্থা তিনি করবেন। বাড়িতে অতিথি এলে সেবা, দীনহুঃখীর অভাব দূর করণ, সব কাজেই এগিয়ে এলেন রাসমণি।

বিচক্ষণ বুদ্ধিমতী গুণবতী গৃহিণী পেয়ে স্বামী রাজচন্দ্রের আনদ্দের সীমা থাকে না। শাস্তির সুধা তিনি খুজে পেয়েছেন। মনে মনে স্ত্রীর প্রতি তিনি খুব অন্থুরক্ত হয়ে পড়েন। কাজকর্মে নতুন উৎসাহ খুঁজে পান। নতুন আশার আলে। দেখতে পান। যে উদাসভাব তার মনে বাঁসা বেঁধেছিল, তা মন থেকে সরে যায়। কুয়াশার মেঘ কেটে গিয়ে সুর্যের রডিন রশ্মি এসে পড়ে ছুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পান। একট। খুশীর আমেজ অনুভব করেন।

- তিন

মানুষ মরণশীল। কেউই চিরদিন বাচতে পৃথিবীতে আসেনি অসর কেউ নয| প্রত্যেকট জীবকেই মৃত্যুর কবলে নিজেকে বলি দিতে হবে। প্রকৃতির এই নিম্ম সত্যকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা! কারোর নেই। জন্গ্রহণের পর থেকেই মৃত্যুর জন্য তাকে প্ররস্তত থাকতে হয়। মায়া-মমতার স্থান নেই এখানে স্রেহের বন্ধন এখানে অচল একদিন ন। একদিন তাকে মরতেই হবে। মৃত্যুই মানব জীবনের শেষ পরিণাম

অর্থের প্রাচুর্য থাকলেও সংসারে একটান। সুখ বা আনন্দের ভ্রোত বয় না। নিয়মের চাকা ক্রমাগতই ঘুরছে নিয়ম লঙ্ঘন হবার নয়। তাই রাসমণির শ্বশুরবাড়িতে আনন্দের হাট জমে উঠতে না উঠতেই ত1 ভেঙ্গে গেল। শোকের ছায়া নেমে এল। ্রীতরাম একদিন মার1 গেলেন

মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল- চৌষট্রি। বয়স হলেও তার মনোবল দৈহিক শক্তি অটুট ছিল। চেষ্টা আর ধের্য থাকলে

মানুষ যে কত বড় হতে পারে, তিনি তার জীবন দিয়ে তা প্রমাণ করে গেছেন। আপন চেষ্টা আর অধ্যবসায় দিয়ে গ্রীতরাম সৌভাগ্য-লক্ষ্মীকে বরণ করে নিয়েছেন।

বাংলাদেশে তখন বর্গার উৎপাত খুব চলছিল এরা ছিল খুব নিষ্ঠুর ্বভাবের। ইস্পাত দিয়ে হয়তো এদের অন্তর গড়া ছিল নবাব আলীব্ী খার সময়ে চোথ বা কর আদায় করতে এর! প্রথম বাংল! দেশে প্রবেশ করে। স্ুজলা-স্ুফলা-শস্-শ্যামলা বাংলার খুব খ্যাতি ছিল। ধন-ধান্তে-পুষ্পে ভরা এই বাংলাদেশের প্রাতি অনেকেরই প্রলোভন ছিল।

ব্গারা ছিল দন্থ্ু-ভাবাপন্ন এই বর্গার! যে কী ভয়ানক নিষ্ঠুর ছিল ত। ভাষায় বলে শেষ করা যায় না। সীমানা অঞ্চলে যমদূতের মতে! এর! এসে ঝাপিয়ে পড়তো এরা নিরীহ প্রজাদের ঘরবাঁড় জ্বালিয়ে দিত শস্তক্ষেত্র তছনছ করে দিত। তাণগুব নৃত্যে তখন এদের জোড়া আর কেউ ছিল না। ধন-সম্পন্তি লুঠপাঠ করে নিত প্রাণের প্রতি এদের কোন মায়া মমতা ছিল না। নানারকমভাবে যন্ত্রণ। দিয়ে মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলতো। !

বগাদের অত্যাচারে সারা বাংলাদেশে অভাব, কামনা আর মৃত্যুতে ভরে উঠতো বর্গ আসছে শুনলেই ভয়ে প্রথণ বাঁচাবার জন্য গাঁ- ঢাক! দিত। জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে অন্থাত্র পালিয়ে যেত।

সারা দেশের এই ছুর্দিনে গ্রীতরামও পালিয়ে এলেন তাঁর জন্মভূমি থেকে হাওড়া জেলার খোষালপুর গ্রামেই তিনি ছিলেন এতদিন বর্গীর ভয়ে হঠাৎ গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন তিনি এই আকন্মিক পলায়নের জন্য টাকা-পয়সা সঙ্গে আনতে পারেননি সঙ্গে ছুটি ভাই ছিল। রামতন্ন আর কালীপ্রসাদ। কলকাতার এই জানবাজারে এসে তারা উঠলেন। তখন গ্রীতরামের চরম হুর্দিন। অক্রুর চন্দ্র মানা! মহাশয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিলেন।

মান্না পরিবারের সঙ্গে গ্রীতরামের একটু আত্মীয়তা ছিল। তার

১১

পিসিম। বিন্দ্বালার বিয়ে হয়েছিল এই বাড়িতে উদার হৃদয় অক্রুর মান্না শুধু আশ্রয় দিয়ে কর্তব্য শেষ করলেন না। তিনি এদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। স্বাবলম্বী হয়ে যাতে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে সেদিকেও তার দৃষ্টি ছিল।

মানত পরিবারে থেকেই গ্রীতরাম লেখাপড়া সুরু করলেন। বাড়ির অভিভাবন্ত অন্রুর মান্না তখন ছিলেন ভানকিন সাহেবের দেওয়ান। মাজে তার যথেষ্ট প্রতিপত্তি নুখাতি ছিল। অকন্রুর মান্নার একট, মহৎ গুন ছিল, তার অহ্হ্ক;।র ছিল না। অনেক লোকের তিনি উপকার করেছেন

অক্রুর বাবুর সাহাযোই শ্রীতরাম তার ভাগা ফেরাতে সক্ষম হয়েছিলেন পড়াশুন। শেষ হলে মান্না মশাই একদিন গ্রীতরামকে নিয়ে এলেন ডানকিন সাহেবের কাছে। একটা চাকরী করে দিতে হবে এই ছেলেটির খুন ভালে! ছেপে। যেমনি কর্মঠ, তেমনি বুদ্ধিষান। তাছাড়া একট। চাকরী এ'র ভীষণ প্রয়োজন

বেলেঘাটায় এই সাঙ্গেবেব লপণের কারখানা! ছিল ।- এখানে আনক লোক তখন কাক্ত করতে) এখানেই অল্প মাইনেতে যুহুরীর কাজে “নযুক্ত হলেন গ্রীতরাম। সুরু হলে জীবন সংগ্রাম ভাগ্যে সঙ্গে মোকাবিলা, জয়-পরাজ্জয় অনশ্চিত |

ক্রমে যশোরের ম্যাজিষ্রেটে সাহেবের সঙ্গে আলাপ হয় গ্রীতরামের ডানকিন সাহুবের চাকরী ছেড়ে দিয়ে এই সাহেবের সাহায্যে ঢাক! সহরে কিছুদিনের জন্য চাকরী করেন তিনি। উত্তর ক্ীবনে যিনি বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হবেন, তিনি কি এক ক্রায়গায় পড়ে থাকতে পারেন? নিজের অবস্থার উন্নতি করার জন্য সর্বদা তিনি সজাগ ছিলেন। তার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। সুতরাং ক্রমেই তার অবস্থ। ভাগে হতে থাকে।

অবশেষে ভগবান তার প্রতি প্রদন্ন হলেন। ভাগ্যের পরিবর্তন হলে নাটোরের মহারাজার দেওয়ান হলেন গ্রীতরাম। প্রচুর

৯২

অর্থ তিনি আয় করতে শুরু করলেন। অর্থের অভাব দূর হলো তার. জীবন থেকে কয়েক বছর বাদে দেওয়ান পদ থেকে অবনর নিলেন দ্তিনি। আর কারে চাকরি করবেন না বলে মনস্থির করলেন। তিনি ছিলেন ভীষণ দৃঢ়চেতা। পুরুষ একবার তিনি য! ভাবতেন তা তিনি করতেনই।

গ্রীতরামের কাজের ধারা বদলে গেল। এতদিন চাকরি করে যে অর্থ তিনি জমিয়েছেন, ত। দিয়ে ব্যবসা করব্নে বলে মন ঠিক করলেন! তার ব্যবস।-বুদ্ধি খুব তীক্ষুৎ ছিল

লক্ষ্যে পৌছতে গ্রীতরামের এবারও দেরী হলো না। জয়টীক। কপালে পরেই যেন তিনি জন্মেছিলেন। অগাধ সম্পত্তির মালিক হলেন তিঁন। বাণিজ্যেই লক্ষ্মীর বসতি গ্রীভরাম তার শৃন্তঘরে লক্ষ্মীকে সোনার খাঁচায় পুড়ে ফেললেন। তার অসাধারণ উন্নতি এবং উদ্ভম দেখে মানা পরিবারের যুগোলকিশোর নিজের মেয়েকে প্রীতরামের হাতে অর্পণ করলেন। বিয়েতে জামাইকে যৌতুক স্বরূপ দিলেন যোলো৷ বিঘে জমি |

পীতরামের তখন স্বচ্ছল অবস্থা, প্রচুর সম্পদের অধিকারী তিনি খ্যাতি, টাকাকড়ি, জমিদারি সব দিক দিয়েই উন্নতির শেষ পীমায় এসে পৌচেছেন তিনি। একপ্রিন এই মানুষটি নিঃন্য অবস্থায় জীবন নুরু করেছিলেন তখন অর্থ-বল, জন-বল তার কিছুই ছিল ন|।

বেলেঘাটায় ছটে। বড়.আড়ৎ ছিল। একটায় বাঁশের কারবার ছিল। অন্যায় বিভিন্ন জ্রিনিসপত্র বিক্রী হতো।। এইসব জিনিস- পত্র জোগাড় কর! হতে! মাকিমপুর পরগণ! থেকে এই মাকিমপুর তালুক তিনি উনিশ হাজার টাকায় পরে কিনে নেন।

শ্রীতরামের ভাগ্য স্র্য তখন মধ্যগগনে জানবাজারের এই বাড়িটি তিনি নির্মাণ করলেন। ছু'টি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে। তার। বড় ছেলের নাম হরচন্ত্র আর ছোটে! ছেলের নাম, রাখলেন রাঞচন্দ্র | |

১৩.

হরচন্দ্র অল্প বয়সে মারা যান। তার কোনো সন্তান ছিল না। ছোটে! ছেলে রাজচন্দ্র হলেন পিতার নয়নের মণি। পুত্র শোকে তিনি খুব মর্মাহত হয়ে পড়েছিলেন

ছ'লক্ষ টাকার ওপর সম্পর্তি রেখে গ্রীতিরাম মারা গেলেন। পিতার একমাত্র উত্তরাধিকারী হলেন রাজচন্দ্র। সোনার চামচ মুখে করে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিঙেন।

পিতা বর্তমান থাকতে প্রত্যক্ষভাবে কোনে। দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পড়েনি এবার তিনি স্কূর্ণ কাজের ভার তুলে নিলেন নিজের ওপর কোনে! ভাগিদার নেই সব কিছুই তার নিজের। গ্রমিদারী দেখাশুনা, সম্পত্তির হিসাব-নিকাশ সব কাঙ্গেই তিনি স্বয়ং হস্তক্ষেপ করলেন।

কাজের মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন ক্রমশই। অন্দরের বাইরেই তাকে থাকতে হয় বেশি। খুব ব্যস্ততার মধ্যে তার দিন কাটতে থাকে। স্ত্রী রাসমণি বোঝেন সব। তাই কাছে থাকতে না পারার জন্ কোনো অন্থুষোগ করেন না তার স্বামী তে। সাধারণ মানুষ নন। তার অগাধ কাজ স্বামীকে বরং তিনি আরে। উৎসাহ দেন। পুরুষ মানুষ, পরিশ্রম তো! করতেই হবে। যিনি আলম্তে দিন কাটান ভাগ্যলক্ষী তার প্রতি কখনই সুপ্রসন্ন হন না।

পিতার পদান্ক অনুদরণ করলেন রাজচন্দ্র। তিনি তার কাজের দায়িত্ব সুন্দর ভাবেই পালন করতে লাগলেন আর এই সব ব্যাপারে তাকে সর্বদা সাহায্য করেন তারই সুযোগ্য! স্ত্রী রাসমণি।

পৈত্রিক অর্থ দিয়ে রাজচন্দ্র জাহাজী ব্যবসা সুরু করলেন। পিতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবস! রয়েছেই, নতুন কিছু করতে ন৷ পারলে আনন্দ কোথায়! নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় চাইতে। | নান। ব্রব্যপুর্ণ জাহাক্ত কিনে তা পুনরায় বেশি দামে বিক্রী করতে থাকেন। তসরের চাঁদর, মুগনাভি, আফিং নীল এইসব জিনিস তিনি 'বিলেতে রপ্তানী করতে সুরু করেন ইংলণ্ডের কোলভিন কোম্পানী ছিল তার এজেন্ট।

১৪

প্রচুর পয়স। আমদানি হতে থকে। তার এই নতুন ব্যবসা! বেশ জমে ওঠে এই কেনা-বেচার ব্যবসা তার পিতা 'গ্রীতরামও করেছেন। পিতার ব্যবসায়ী বুদ্ধি পুত্রের মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছিল তিনিও বহু টাক উপায় করলেন ব্যবস! করে

রাজচন্দ্র শুধু একজন বড় ব্যবসাদার ছিলেন না, তিনি একটার পর একট বড় কাজও করে গেছেন। সাধারণ লোকের উপকারে, সাধারণ লোকের জন্য অনেক টাকা তিনি জলের মতো! খরচ করেছেন যেমন ছিল তার অঢেল পয়সা, তেমনি ছিল তার উদার মনোভাব। বড় হতে গেলে বড় মন চাই। স্বামীর এই মহৎ কাজে রাসমণি সবক্ষণ তার পাশে থেকেছেন

চার

রালমণির বাব মারা গেলেন সে বছর বাংল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বন্ত। দেখা দিয়েছিল। জলের সেকী উচ্ছাস! সে কী তার শ্রোত! জলের স্রোত বহু মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মানুষের গবাদি পশু যে কত মরেছল তার কোনে ইয়ত্ব। ছিল না। বন্তাতে। শুধু শব্য আর ঘর-বাড়ি নষ্ট করে না, সেই সঙ্গে আনে রোগ, অভাব, মৃত্যু আর মহামারি, কান্নার রোল পড়ে যায়। ছুতিক্ষও দেখ। দেয়

বন্যার কবলে পড়ে হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে যায়। সহায় সম্বলহীন মানুষ গুলে হুঃখে ভেঙে পড়ে, কি করবে এখন?

. মাথ! গুজবার স্থানটুকু পর্স্ত নেই। মনোবল পর্যস্ত হারিয়ে ফেলে। মানুষের এই 'বিপদের দিনে চুপ করে থাকতে পারেন না রাসমণি আর তার স্বামী ছু'জনে মিলে বন্তাপীড়িত মানুষদের সব রকম সাহায্যের. ব্যবস্থা করলেন। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে রাসমণিও বড় হয়েছেন অনেক। তিনি এখন মেয়ে নন, জননী হয়েছেন। একটি কন্ঠাসস্তান জন্মগ্রহণ করেছে

১৫

অসংখ্য নরনারীকে তিনি মুক্ত হস্তে দান করেছেন। টাকাকড়ি খাবার-দাবার এমন কি পরবার কাপড় পর্ষস্ত এক একজনকে অকাতরে দান করেছেন মাথ। গৌজবার আশ্রয় করে দিয়েছেন সেই সব অসহায় মানুষগুলো রাণী আর রাজচন্দ্রের সুখ্যাতি করতে লাগল শতমুখে।

ভগবানের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ মানুষের সেবা মানেই ভগবানের সেবা কর।

রাজচন্দ্রের দানের সীম! ছিল না। লোক-হিতকর অনেক কাজ তিনি করেছেন। তখনকার দিনে কলকাতায় গঙ্গার অনেক ঘাটই বাধানে ছিল না। স্সানার্থীদের কষ্টের অন্ত ছিল না। কাদায় সব সময় পিচ্ছিল থাকতো। গঙ্গার ঘাট অনেকে পড়ে যেত। খুব সজাগ থেকে সাবধানে পা ফেলতে হতো, একটু অন্থমনস্ক হলেই ছুর্ঘটন। ঘটতো। তাদের

এক্জন্ত রাজচন্দত্র কতগচলেো। কাচা ঘাট বাঁধিয়ে দিলেন, আহিরীটোলার গঙ্গায় সাধারণের সানের ঘাট, হাইকোর্টের কাছে বাবুঘাট, ইটালী, তালতলা, জানবাজার, বহুবাঙ্রার প্রভৃতি জায়গায় স্নানার্থী লোকদের জন্য ঘাট তৈরী সবই রাজচন্দ্রের সুকীতি।

মৃতগ্রায় ব্যক্তিদের জন্ত তিনি একটি আশ্রয়স্থান নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশ তখন সংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন মানুষ মারা যাবার আগেই তাকে দাহ করবার জন্য গঙ্গার ঘাটে অন। হতো।। মৃত্যু পর্ষস্ত অপেক্ষা করতে। সকলে গঙ্গার বুকে মৃত্যু হলে হিন্দুরা পরম পুণ্যের কাজ বলে মনে করতেন।

এই পুণ্যলাভের আশায় আত্মীয়ন্বজ্বন মুর্মষু ব্যক্তিটিকে গঙ্গার তীরে নিয়ে আলতেন। কোনো কোনে সময় তাদের এক আধদিন গঙ্গার ঘাটে থাকতে হতে।। থাকার কোন স্থুব্যবস্থ। ছিল না তখন ।' গঙ্গাযাত্রীদের খুৰ অন্ুুবিধেয় পড়তে হতে। |

পরোপকারী রাজচন্দ্র সাধারণের এই কষ্ট অনুভব করলেন

৯৬

এদিকেও দৃষ্টি পড়লো। ভার। কেউ কেউ এসে তাকে অন্থুরোধও করে। তিনি নিমতলায় গঙ্গাযাত্রীদের নতুন আশ্রয়স্থান তৈরী করে দিলেন

অনেক গ্রন্থাগারে বই কেনার জন্য অর্থ সাহায্যও করেছেন রাজচক্্র শিক্ষাবিস্তারে গ্রন্থাগারের একট গুরুত্ব আছে। প্রত্যঙ্গ ভাবে শিক্ষাবিস্তারে হস্তক্ষেপ করতে না পারলেও গ্রন্থাগারের উন্নতিকল্পে অর্থদান করেছেন। মেটকাফ্‌ হলের সরকারী গ্রন্থাগারে ' রাজচন্দ্র বই কেনার জন্য একবার দশ হাজার টাক! দান করেছিলেন।

তার এই জনহিতকর কাজের মধ্যে বেলেঘাটার খালটিও ধরা" যেতে পারে বেলেঘাটার এই খাল খননের জন্য তাকে অনেকট। জমি ছেড়ে দিতে হয়। খুশী মনেই তিনি এই জমি সরকারকে দান করেন। একট। সর্ত ছিল। গরীব সাধারণ লোক বিনা করে খাল পারাপার হবে। একটি পয়সাও কর হিসাবে সরকার তাদের কাছ থেকে নিতে পারবে না।

তার দেশগ্রীতি ছিল অসাধারণ। দেশের প্রতিটি মানুষকে তিনি আপন জ্ঞান করতেন।

একবার রামরতন বাবু এলেন রাঅচন্দ্রের কাছে। তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। রামরতনবাবু হুক ডেভিডসন এগ কোম্পানীতে চাকরি করতেন। তখনকার দিনে একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠ]ন হিসাবে এই কোম্পানীর খ্যাতি ছিল। একট। বিশেষ প্রয়োজনে কোম্পানীর কিছু টাকার খুব দরকার হয়ে পড়ে। রামরতন এসে রাজচন্দ্রকে ধরলেন কিছু টাক। তাদের কোম্পানীকে ধার দিতে হবে। খুব অন্থুবিধায় পড়েছে কোম্পানী

এই বিদেশী কোম্পানীকে সাহায্য করার ইচ্ছে রাজচন্দ্রের ছিল না। অনেক টাক। ধার দিতে হবে। টাকার অহ্কট। তো। কম নয়। এক লক্ষ টাকা রামরতন কিন্তু বন্ধুকে এসে ধরলেন। খণ তাকে দিতেই হবে। বার বার একজন বন্ধু এসে অনুরোধ করায় রাজচন্্র

১৭ রাসমপি--২

ধার' নিতে স্বীকৃত হলেন। তার এই টাকা পেলে যর্দি কোম্পানীর বিপদ ক:টে, তিনি দেবেন একলক্ষ টাক!

কথ। দেবার ক'দিন পরেই খবর বেরলে। কোম্পানী দেউলে হয়েছে রাজচন্দ্রও শুনলেন সে কথা। কিন্ত তিনি যে কথা দিয়েছিলেন বন্ধুকে, সেটাতো। আর ফিরিয়ে নেওয়। যায় না। ফেরত পাবার আশ। না করে কথ। মতো। তিনি সাহেবের হাতে তুলে দিলেন 'এক লক্ষ টাকা

গলের মতো। শোনালেও রাজচন্দ্র যেমন ছিলেন দানশীল, তেমনি ছিলেন সত্যবাদী লক্ষ্মীর বরপুত্র এই মহাপুরুষটির গ। বেয়ে অর্থ এসেছে যখন তিনি যে কাজে হাত পিয়েছেন প্রচুর পরিমাণে তাতে তার মুনাফা হয়েছে

রাজচন্দ্র কি রকম ব্যবসাদক্ষ ভাগ্যবান পুরুষ ছিলেন, তার একটা পরিচয় দিচ্ছি। একদিন তিনি নিলামে পঁচিশ হাজার টাকার আফিং কেনেন। অনেকে নিষেধ করেছিল, এতে নাকি তার ক্ষতি হবে। কারোর কথ। শোনেন নি তিনি। পঁচিশ হাজার টাকার আফিং পঁচাত্তর হাজ্জার টাকায় নিক্রি হলে। সেই দিনই একদিনেই তার পঞ্চাশ হাজার টাক। লাভ হয়। লোকে বলতো যেদিন বিশ হাজার টাক। লাভ ন। হত সেদিন খুব কম লাভ হতে। বলে তিনি মনে করতেন। কোনো কোনোদিন তার এই লাভের অঙ্ক লক্ষ টাকায়ও উঠেছে

একবার ইস্ট-ইগ্ডিয়া কোম্পানীর এক ধনী, অভিজাত সাহেব ভারতে বেড়াতে এলেন। সাহেবের নাম জেন বেব। বাংলাদেশে তিনি রাজচন্দ্রের অতিথি হলেন। তার সমাদর আর যত সাহেব খুব মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি কিছুদিন ভারতে ছিলেন। লগুনে ফিরে গিয়ে বন্ধু রাজচন্দ্রকে তিনি একটি সোনার ঘড়ি পাঠান। (সেট। ছিল তার বন্ধুর প্রতি প্রীতি আর ভালবাসার স্মরণ চিহ্

স্বামীর সৌজন্যে তখনকার অনেক গণামান্ত ব্যক্তির সংগেই

১৮

পরিচয় হয়েছিল রাণী রাসমণির। প্রিন্স: দ্বারকানাথ, কালীগ্রসন্ন সিংহ, রাজ। রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ব্যক্তিবৃন্দ তখনকার কলিকাতার বিশিষ্ট নাগরিক ছিলেন।

প্রিন্স দ্বারকানাথ ছিলেন যেমন ধনী, তেমনি দানবীর হিন্দু- কলেক্গ, মেডিক্যাল কলেক্জ প্রতিষ্ঠা করতে তিনি অনেক অর্থ দান করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক সৎ কাজে প্রচুর পয়সা তিনি ব্যয় করেচছন। _ কালীপ্রসন্গ সিংহ সে সময় কলিকাতায় একজন গণ্যমান্ত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আঠারো পর্বের বিরাট সংস্কৃত মহাভারত তিনি বাংল! ভাষায় অন্থুবাদ করেন। দেশের মঙ্গল সমাজ-উন্নয়নের চিন্তাই তার মন জুড়ে থাকত সব সময়। সে যুগে বিদেশী ভাবধারা আর খৃষ্টান ধর্মের প্রভাব থেকে সনাতন হিন্দুধর্ম তার কৃষ্টিকে বাচাবার চেষ্টা ধার! করেন রাজ। রাধাকান্ত দেব তাদেরই একজন।

এ'র প্রত্যেকেই রাজচন্দ্রের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।

নতুন অট্টালিকা করে রামচন্দ্র সপরিবারে সবে সেই প্রাসাদে এসেছেন তার কিছুদিন পরেই সেজ মেয়ে করুণাময়ী মার! যান। কন্টার এই মৃত্যুতে তিনি খুব ভেঙে পড়েন। কোন ছেলে ছিল ন! রাসমণি রাজচন্দ্রের। চারটি মেয়ে। পন্মমণি, কুমারী, করুণাময়ী জগদস্বা। তিনটি মেয়েরই বিয়ে হয়েছিল

রামমণির বড় জামাই মানে পদ্মমণির স্বামীর নাম ছিল প্যারীমোহন চৌধুরী মেজ মেয়ে করুণাময়ীর বিয়ে হয়েছিল মথুরনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে

বিয়ের অল্পদিন পরেই করুণাময়ী মার! যান। সেজ জামাই মথুরনাথকে রাসমণি খুব ভালবাসতেন কোনো, পুত্র না থাকায় সম্পূর্ণ পুত্রস্েহটুকু পড়েছিল মথুরনাথের ওপর রাসমণি তার ছোট মেয়ে জগদস্বাকে মথুরনাথের হাতেই তলে দেন।

১৪

জামাইয়ের মধ্যে মথুরনাথই রাসমণিকে সব কাকে, সব ব্যাপারে সাহায্য করতেন। তিনিই রাণীর ছেলের অভাব দূর করেন। তিনি শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন বেশি ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত মথুরনাথ যেমন কর্তব্যশীল আর বুদ্ধিমান ছিলেন, তেমনি গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা আর ধার্সর প্রতি গভীর ভক্তি ছিল। দক্ষিণেশ্বরে রাণীর মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ে মথুরনাথের কর্তব্যবোধ আর ভক্তমনের সুন্দর পরিচয় পাওয়া যায়।

রাণী রাজচন্দ্রের দু'জনেই দু'জনের পরামর্শে নিজেণ নিজের কাজ করে চলেছেন। এই সময় বিনা মেঘে বস্ত্রপাতের মতে। একদিন সন্যাস রোগে রাজচন্দ্র মারা যান। অতান্ত ছুঃখের দিন ঘনিয়ে এল রাণীর জীবনে ১৮৩৬ গ্রীষ্টাকের ১লা জুন রাজ চন্দ্র বিদায় নিলেন এই পৃথিবী থেকে তীর কর্মজীবনের যবনিকাপাত ঘটলে।। তখন তার বয়স মাত্র উনপঞ্চাশ বছর

' রাজচক্দ্রের ওই নতুন বিরাট বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে রাক্রচন্দ্র প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাক! ব্যয় করে ফ্রীস্কুল ট্রীটের উল্টোদিকে এই প্রাসাদটি তৈরী করেন সাতটি মহল আর তিনশ' ঘর ছিল এই বিরাঁট অট্রালিকায়। পরে এই বাঁড়িই “রাণী রাসমণি? কুঠি নামে সুপরিচিত হয়।

পাঁচ স্বামীর মৃত্যুতে রাসমণি ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন স্বামীই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। একমাত্র বন্ধু। তার সকল কাজের প্রেরণ। তাকে হঠাৎ হারিয়ে ছু'চোখে অন্ধকার দেখলেন রাণী তিনদিন পর্যস্ত মুখে জল ঠেকাননি। তিনি শোকে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন কর্তব্যের ডাকে তাঁকে সাড়। দিতে হলো এখন তে শুধু

ত্২০

শোক করার সময় নয় তার। সামনে যে একটা বড় কাজ রয়েছে। নত্রীজীবনের পরম বৃহৎ কর্তব্য স্বামীর পারলৌকিক ক্রিয়া পরম পবিভ্রভাবে সম্পন্ন করতে হবে সেটা সুন্দর করে শেষ করাই তার প্রধান ধর্ম। রাণী চিরদিনই ভক্কিমতী ছিলেন।

তার মহান্থুভব স্বামীর শেষ কাজ যাতে উপযুক্তভাবে পালিত হয়, তার সব আয়োজন করলেন রাশী রাসমণি। ধনী-দরিদ্র, পণ্ডিত মূর্খ, কেউই অনিমন্ত্রিত রইলেন না তার বাড়িতে কেউ নিরাঁশ হয়ে ফিরলে না তার বাড়ির দরজা থেকে অনেক টাকা ব্যয়ে মহাসমারোহে শ্রদ্ধান্ুষ্ঠান শেষ হয়

পূজাপাঠের জন্য এসেছেন খ্যাতনামা ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের দল। দ্বামীর পুণার্জনের আশায় হু'হাতে দান করতে লাগলেন রাসমণি। দান গ্রহণ করতে এলেন অসংখ্য ব্রাহ্গণ। ব্রাহ্মণের দান গ্রহণ করে রাসমণিকে আশীর্বাদ করতে করতে ফিরে চললেন। অন্নহীন গরীব মানুষদের রানী পেট ভরে খাওয়ালেন। তাদের হাতে দিলেন কাপড়, কম্বল, পশমী বন্ত্র। তার! তৃপ্ত হয়ে শতমুখে রাণীর যশ গাইতে গাইতে ফিরে চললো।। রাণীর পতিভক্তির 'কথা ছড়িয়ে পড়লে। চারদিকে মান্থুষের মুখে মুখে

অনুষ্ঠানের শেষের দিনে একজন সন্যাসী রাণীর বাড়ির দরজায় এসে উদয় হলেন। তার পরণে সামান্ত এক কৌপীন। শিরে জট]। সারা দেহে ভন্ম মাখা কিন্তু তার মুখে অপূর্ব দিব্যকাস্তি। চোখে ঝরে পড়েছে স্থির সিদ্ধ দৃষ্টি

সন্ধ্যাসীকে দেখেই চিনতে পারলেন রাসমণি। পরম শ্রদ্ধাভরে তাকে বাড়ির ভেতর এনে বসালেন। স্বামী বেঁচে থাকতে এই সন্যাসী হঠাৎ একদিন এসেছিলেন। সেদ্দিন তিনি রাজচন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি অতি মনোহর সর্বাঙ্গস্থন্দর শ্রীরঘুনাথজীর মৃতি। রাজচন্দ্র মাথা পেতে সন্গ্যাসীর এই দান গ্রহণ করেছিলেন সৃত্তিটিকে তিনি গৃদেবতার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন

২১

বহুদিন পরে সেই সঙ্গ্যাসী আবার এসেছেন. তাদের বাড়িতে রাসমণির আনন্দের আর সীম! থাকে না। এটা বুঝি ভগবানেরই আশীর্বাদ এই হুঃখের দিনে বাণীর মনে একটা নতুন ভাবের সঞ্চার হয়।,. তিনি কিছু দান গ্রহণের জন্য সন্যাসীকে অনুরোধ করেন

কিন্ত দান নিতে জন্ন্যাসী অনিচ্ছুক। তিনি তো গৃহী নন। কৌপীন সম্বল সাধু তিনি। দান সামগ্রীর কোনো প্রয়োজন নেই তার। কি হবে ওসব দিয়ে। রাসমণির কোনো কথা শুনতে রাজী নয়। আজ এই পুণ্য দিনে তিনি তাকে শুষ্ত হাতে যেতে দেবেন না। কিছু দান তাকে গ্রহণ করতেই হবে। অগত্যা সাধু বলেন, তিনি একট কম্বল আর একট] জলপাত্র নিতে পারেন। রাসমণি মহাহধে তখনই কম্বল আর ভ্বলের পাত্র এনে রাখলেন সন্াসীর সামনে

রাণীর কাছ থেকে বিদায় নেবার আগে সন্ন্যাসী বললেন, ভিনি একবার শ্রীরঘুনাথজীকে দেখে যাবেন। তিনিই একদিন এই মৃতিটি বাড়িতে এনেছিলেন রাণী তখুনি তাকে দেবালয়ে নিয়ে যান। দেবত। দর্শন করে আনন্দে সম্যাসীর চোঁখে জলের ধার! নামে তিনি রুগ্শিকে প্রাণভরে আশীবাদ করে বিদায় নেন।

রঃ '্ীবচোয় আশ্চর্য রাসমণির জীবনে আর কখনও এই সন্গ্যাসীর

দর্শন পাননি তীর্থক্ষেত্রের কোথাও এই সাধুর দেখা মেলেনি ! রাসমণি নিজের জীবনকে নতুন করে ঢেলে সাঁজালেন।

মৃত্যুকালে রাজচন্দ্র প্রায় আশীলক্ষ টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন। কে এই বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করবে! রাণী যেন কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার পাশে রয়েছেন কেবল মেয়েরা তখনকার দিনে মেয়েদের এত স্বাধীনত ছিল না অনেক বাড়িতে তাদের ঘরের বাইরে যাওয়ার অন্থুমতিও ছিল ন1।

সকলের চোখে পড়লো রাণীর ব্রহ্মচারিণীর রূপ। রাসমুণির একটি অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। জীবনে তিনি যখন যে অবস্থায় ছিলেন, তিনি নিজেকে সেই অবস্থায় সুন্দর করে মানিয়ে নিয়েছেন

ছোটোবেলায় বাবা মা'র কাছে ছিলেন ভক্তিমতি, আদরিণী কন্যার মতো! | ধনী শ্বশুর বাড়িতে নম, সেবাপরায়ণা, ধর্মশীঙা বধূ হয়ে ক্রমে বাড়ির কত্রাঁ হলেন। তারপর স্বামীর মৃত্যুর পর আবার নিজেকে বদলে ফেললেন।

অন্ধকার রাত থাকতে ঘুম থেক উঠতেন সকাল-সন্ধ্যায় দেবতার পুজো-অর্চনা সুরু করেন। জপ-তপ, ধ্যান-জ্ঞানে তার. সকালটা কাটে গলায় তুলসীর মাল! শোভিত! রাসমণিকে দেখলে মনে হবে না যে তিনি গৃহী মানুষ মনে হবে, তিনি সংসারের বাইরে। ভগবত চিস্তায় কিন্তু একেবারে ডুবে যাননি রাসমণি তার মনের প্রসার খুব বেশী। অপরিসীম ভক্তিমতী হলেও অনেক টাকার বিষয় সম্পন্তিকে তিনি অবহেল! করেন নি। বিষয় কার্য পরিচখলনাতেও তিনি এমনই দক্ষত। দেখিয়েছিলেন যে কোথাও অর্থের অপব্যয় হয়নি বুদ্ধির অভাঁবে কখনও সম্পত্তির হাস ঘটেনি |.

এই বিষয়ে তিনি জামাইদের সাহায্য নিতেন। তাদের সংগে পরামর্শ করতেন। তিনিও স্বামীর পদাহ্ক অনুসরণ করেছিলেন কপণের মতো! তিনি অর্থ জমিয়ে রাখেন নি। নানা সংকাজে, তীর্থভ্রমণে, দেবতার অলংকার নির্মাণ, পৃজাপার্বনে প্রচুর টাকা খরচ করেছেন রাসমণি।

আজকের মতো৷ তখনকার দিনে কলকাতায় আমোদ-আ!হলাদের এত উপকরণ ছিল না পুরনো আমলের কলকাতায় একটার পর একটা পৃজে। নিয়ে মেতে থাকতো! উৎসব পাগল শিশু যুব! নরনাঁরী। পৃজোমণ্ডপে মানুষ এসে ভীড় করতো। | আনন্দ গুঞ্জনে পুজো -প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠতো। দোল, রাস, হূর্গাপুজো, বাসম্তী পুজো, সরস্বতী পৃজেো। কাতিক পুজে। প্রভৃতি পুজোর কি শেষ ছিল !

আজকাল অবশ্য অনেক পুজোই সার্বজনীন। সকলে মিলে টাদা তুলে একট পুর্জোর আয়োজন করে। কিন্তু তখনকার দিনে এই ব্নীতির প্রচলন একদম ছিল না। কোনে ধনীর গৃহে সার!

বছর নান পৃঙ্জোর আয়োজন হতো! বাড়ির পৃজে। হলেও তাতে কাতারে কাতারে নরনারী এসে যোগ দিতো সকলেই সেই পুজোকে নিজের মনে করে আনন্দে মত্ত হয়ে উঠতো | :

রাসমণির বাড়িতে তুর্গাপুজে, লক্ষ্মীপুজো, সরন্বতীপুজো, দাল প্রভৃতি সমস্ত বড় বড় পুজো অনুষ্ঠানই হতো

একবার ছূর্গাপুক্সায় এক সাহেবের সংগে বিবাদ বাধে রাসমণির শারৎকাল। উৎসবের সাড়া পড়ে গেছে চারদিকে মহাষষ্ঠীর প্রভাতে ব্রাহ্মণের দল চলেছেন গঙ্গার দিকে নব পত্রিক৷ সান করাবেন। তুমুল বাজনার শবে, জয়ধ্বনিতে, লোঁক-সমাবেশের কলরবে চারদিক মুখরিত - মাতৃপৃজার আনন্দে পাগল হয়ে উঠেছে যেন সমস্ত দলটি

প্রাতঃকালে এই দীপ্ত কলরবে ঘুম ভেঙে যাঁয় এক সাহেবের সকাল বেলার আরামের ঘুম, মেজাজ গরম হয়ে যায় তার। এই অসভ্য মানুষগুলোকে শায়েস্তা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সে! বন্ধ করতে হবে অযথা এই হৈ-চৈ। দ্বুমের অসুবিধে হয় এতে

আমাদের দেশ তখন ইংরেজদের অধীনে সাহেবর! বাঙালীদের হেয় চোখে দেখতো! সাহেবটি ব্যাপারট। ইংরেজ সরকারের কানে তুললো বন্ধ করতে হবে ধরণের পুজাপাধন। মূর্খ সাহেব রাসমণির ক্ষমতা আর মনোবল কল্পনা করতে পারে নি। রাণী কোনে শক্তিকেই পরোয়া করেন ন1।

পরাধীন দেশের নাগরিক হলেও সরকারের রাঙাচোখ তার জন্য নয়।

এই পুর্জা আর উৎসবের মূলে যিনি ছিলেন, তিনিও কম অভিজাত নন। কলকাতার জানবাজারের সের। ধনী জমিদার- গৃহিণী। সকলের কাছে তিনি রাণী নামে পরিচিত। ব্রাহ্মণের দলে এসে নালিশ করলেন রাণীর কাছে। সাহেবের মাথা গরম হয়ে ওঠার কথ শুনলেন রাসমণি।

২৪

বিধমীর এই আক্ষালনে রাণীর হয়তে। আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। তিনি তত্ক্ষণাৎ তার কর্মচারীদের বললেন--পরের দিন আরে জোরে বাজ্বন৷ বাজিয়ে গঙ্গার ধার দিয়ে যেতে হবে সকলকে আরো প্রবল কণ্ঠে মাতৃনাম নিয়ে পুর্ণ করে তুলতে হবে প্রভাত গগন

ভয় ভাবন। তাদের মন থেকে মুছে গেল। বাণীর কর্মচারীর! পরম উৎসাহে প্রভাতের অপেক্ষায় রইলেন। পরের দিন তীব্র উৎসাহ আর উত্তেজনায় মা তুর্গার নাম করতে করতে, বাজন! বাজিয়ে তারা গঙ্গার ধার ধরে এগিয়ে চলেছেন

সাহেব ভীষণ রেগে গিয়ে রাণীর বিরুদ্ধে শীস্তিভঙ্গের মামল। উপস্থিত করলে ইচ্ছে করে তার ঘুমের ব্যাঘাত-করেছে। দেশের সরকার বিদেশী। সাহেবও বিদেশী। তাই সরকার পক্ষপাতিত্ব করলে বিচারে একজনের অস্থুবিধেটাই বড় করে দেখলো তার।। একটি জাতির জাতীয় উৎসবকে তার! গুরুত্ব দিল না বিচারে রাণীর পঞ্চাশ টাক জরিমানা হলো বিন। প্রতিবাদে রাণী সরকারের দপ্তরে জরিমানার টাকা দিলেন।

এত সহজে পরাজয় স্বীকার করতে বাণী প্রস্তুত নয়। এবার শুরু হলে ভার আর এক যুদ্ধ। বুদ্ধির লড়াই। 'জরিমানার টাক! জম! দিয়েছে সত্যি কিন্তু সাহেবদের কাছে নতি স্বীকার করতে তিনি রাজী নন। জ্ঞানবাজার থেকে গঙ্গাতীরে বাবুঘাট পর্যন্ত সমস্ত সদর রাস্তাটা গরাণ কাঠ দিয়ে মজবুত করে বন্ধ করে দিলেন। রাস্তায় লোক চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। অনেক টাকা. খরচা হলেও সরকারকে জব্দ করতে রাণী পিছু হটলেন না

সরকার-পক্ষ রাস্তা! বন্ধে আপত্তি করলেন | রাণী বলে পাঠালেন --এতার নিজের সম্পত্তি খাস জমিদারীভুক্ত। জমিতে তিনি য1 খুশী তাই' করতে পারেন কেউ বাধ! দিতে পারবে না। পরম সাহসের পরিচয় দিলেন তিনি

সতি) সত্যি সরকারের এবার কিছুই করার নেই, অথচ সর্ব-

সাধারণের ব্যবহারের একটা প্রয়োজনীয় রাস্তা, এট! বন্ধ থাকলে চলে কি করে? অনেক আলোচনার পর নিরুপায় হয়ে সরকার' রাণীর জরিমানার সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে দিলো। রাণীও তখন সকলের চলাচলের জন্য রাস্ত। খুলে দ্িলেন।

কতখানি সাহস থাকলে একজন মহিল। হয়ে বিদেশী সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে ছন্দ যুদ্ধে নামতে পারে! যে জলে বাস করে কুমীরের সঙ্গে বিবাদ

কে এই অতুলনীয় রাণী ?

এই রাণী হচ্ছেন বাংলা দেশের প্রাতঃম্মরণীয়া, পুণ্যময়ী রাণী রাসমণি

একবার তিনি মনস্থ করলেন রথ-যাত্রার উৎসব করবেন সেট! ১২৪৫ সাল। জামাইদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন তিনি। জগন্নাথ- দেবকে বপোর রথে বসিয়ে পথ পরিভ্রমণ করানো হবে। ধর্মপ্রাণ! রাসমণির পুজে পার্বনে খুব আগ্রহ ছিল

রাজচন্দ্র দাস জীবিত থাকা কালীন নিজের বাড়ীতে ধৃমধামে প্রতিবছর ছুর্গাপূজে৷ হতো রাসমণিও স্বামীর এই পুণ্য অনুষ্ঠানটি বজায় রেখেছিলেন। তিনি অতি সমারোহে প্রতিবছর মায়ের আরাধন! করতেন। শোন! যায় তখনকার দিনে এই পৃর্দোয় রাণীর প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাক খরচ হতো ধনী-দরিদ্র, স্ত্রী-পুরুষ সক্চলকেই নিমন্ত্রণ করতেন। রাণী প্রতি বছর হাসিমুখে মায়ের সেবায় কোষাগার থেকে ওই টাকা ব্যয় করতেন

র্থযাত্রার উৎসবকে কেন্দ্র করে রাণীর পরিবারে একট! আনন্দের

সাড়া পড়ে গেল। কাজের ব্যস্ততা দেখ! গেল কর্মচারীদের মধ্যে জগন্নাথদেবের জন্য বূপোর নতুন রথ চাই।

কে এই রথ তৈরী করে দেবে? সামান্ত রথ তো হতে পারে না রাসমণির! আকারে যেমন বৃহৎ হবে, তেমনি কারুকার্ধ শোভিত সুন্দর হবে।

ত্ঙ

হামিপ্টন কোম্পানী তখনকার বিখ্যাত অন্রী। খুব নামডাক তার। দেশের গণ্যমান্য ধনীরা এই কোম্পানীতেই তাঁদের সৌহীন' জিনিষপত্র তৈরী করান! রাসমণি প্রথমে ভেবেছিলেন এদেরই ওপর কাজের ভার দেবেন। ভালে। কাজ করে। এদের উপর ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত থাক] যায়।

কিন্তু শীভই তাঁর মত বদলে গেল। কেন তিনি বিদেশী কোম্পানীকে দিয়ে রথ গড়াবেন? দেশে কি ভালে। কারিগর নেই ?

ভালো! জহুরীর খোঁজ করলেন তিনি। সন্ধানও মিললে ক'দিন বাদে। তার] পরমানন্দে এই রথ তৈরী করতে সম্মত হল। দেশী কারীগরেরা এক মাসের উপর কঠোর পরিশ্রম করে রূপোর রথ তৈরী করে ফেললো : |

রথ দেখতে এলেন রাণী। রথ দেখে তিনি অবাক! কী স্থন্দর রথ ঠৈরী করেছে তার দেশের কাঞ্চন-শিল্পীরা, রথ দেখে খুব খুশী হলেন রাসমণি। মজুরী তে। তারা পেলোই, ভালে। কাজ করায় প্রত্যেকে পুরস্কার পেল সেজন্য

শুভকান্ডের শুভদিন এগিয়ে এল। রথযাত্রার দিন জগন্নাথ' দ্বেবকে নিয়ে সেই রূপোর রথ প্রকাশ্য রাজপথে বেরোল। ফ্রী স্কুল স্বীটে৭ রাণীর ৰাঁড়ি থেকে যাত্রা! শুরু হলো রাস্তার ছুধারে ভ্রমশই লোক সমাগম হতে থাকে কলিকাতার বড় বড় পথধরেরথ চলতে সুর করলে! তিন তলা প্রকাণ্ড ঝড় রথ। রথের সামনে ছুট বলিষ্ঠ ঘোড়। রয়েছে নিখুঁত তাদের দেহ্কের আকৃতি তাঁর যেন এক্ষুণি ছুটে বেরিয়ে যাবে। এমনি তাদের চঞ্চল ভঙ্গী, ঘোড়াদের পেছনে উঁচু কোচবাক্সে বসে রয়েছে কোচম্যান। ঘোড়া ছুটির রশি তার হাতে ।:

মন্থর গতিতে রথটি এগিয়ে চলেছে রাস্তার ছু'পাশে কাতারে, কাতারে লোক ্রাড়িয়ে গেছে রাণীর এই রূপোর রথ দেখার জন্ তার! ব্যাকুল। বাঁড়ির ছাদে, জানালায় বা দরজায় শুধু মানুষের;

মাথা -তাদের তীক্ষ দৃষ্টি রথের দিকে এমন সুন্দর রথ তার! আগে আর দেখেনি কখনও

ওপরের প্রকোষ্ঠে বসে আছেন রথের অধিপতি জগন্নাথ, বলরাম স্ুভদ্রা। সমস্ত রথ ফুলে ফুলে ঢাকা তাছাড়। রয়েছে আরে! নানা আড়ম্বর উপকরণ। রথের স্কামনে পেছনে বাজন। বাজিয়ে চলেছে বাদকের দল। সহত্র কে রাণীর জয়ধ্বনি হতে থাকে রাণীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে দেশের জনগণ এই বিপুল অর্থ ব্যয় হওয়ার জন্য তিনি ছুঃখিত হন নি একটুও।

শুধু দেবপুজা। আর উৎসব অনুষ্ঠানে রাণীর মন তৃপ্ত হয়নি। তীর্থ ভ্রমণেও তার অসম্ভব ঝেশক ছিল। স্বামীর সংগেও কয়েকবার দেশ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ভারত তীর্থময়। পবিত্র এই ভারত ভূমির পথে-প্রাজনে, বনে-উপবনে কত মন্দির, “কত দেবদেউল ছড়িয়ে আছে। |

অদেখা! দেবতার টানে, পুণ্য সঞ্চয়ের আশায় আশ্রম থেকে সন্যানীর দল বেরিয়ে পড়েন পথে। তীর্ঘের আকর্ষণও কম নেই তাদের বন্দীজীবন তাদের কাম্য নয়। পরম পাওয়ার পবিত্র সংকল্প নিয়ে ছাড়ে গৃহবাসী মানুষ

বন্ধুর পথ তারা একটু একটু করে অতিক্রম করে। পথে কত বিপদ, কত রকমের কষ্ট, তীর্থের আকর্ষণে ধর্মপ্রাণ মানুষ সেগুলে। উতরে এগিয়ে যায়। শত বাধা বিপত্তি তাদের পথ রোধ করতে পারে না। ' দুর্জয় সাহস ভাদের মনে এসে বাসা বাধে ্‌

তারপর একদিন সেই মান্ুষ যখন দেবতার সামনে এসে গৌছয়, প্রত্যক্ষ অনুভব করে দেবতার স্পর্শ, তখন পথের শত বাধা; শত কষ্ট মুহুর্ঠে মন থেকে মুছে যায়। ভক্তি আর আনন্দে আত্মহারা! হয়ে পড়ে। আনন্দাশ্র চোখ থেকে নেমে আসে।

পরম পবিত্র লগ্নে ভক্তি আর ভগবান একাত্ম হয়ে মিলে যায় এক সুত্রে

খ্৮

ছয়

তীর্থভ্রমণে বেরোবার পূর্বে রাসমণি ভাবলেন, একবার জন্মভূমি থেকে ঘুরে আসবেন বহুদিন যাওয়! হয় নাই সুযোগের অভাব কাজের ব্যস্ততায় গ্রামে যেতে পারেননি

কথায় বলে জননী জন্মভূমি স্বর্গের চেয়ে বড়। রাসমণি কথাট। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাই রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি আর অপার এশ্বর্ষের মধ্যে থাকলেও, জন্মভূমির কথা তার মন থেকে মুছে যায়নি অবুঝ মনের সবুজ শোভা তিনি ভুলতে পারেননি মাঝে মাঝেই তার মনে পড়তো খেলা-ধূল। আর আনন্দ-ঘের! ছোটো কোন গ্রামটির কথা

কোন গ্রামের পাশে ত্রিবেণীতে তিনি কতবার জান করতে গেছেন। কিন্তু ফেরার তাড়। থাকায় গ্রামে নামা হয়নি জল- পথে নৌকা করে গেছেন তিনি। ত্রিবেণী পবিত্র হিন্দু তীর্থ! ত্রিবেণী ছুটো।। একট! উত্তর প্রদেশে, আর একট] বাংল দেশে উত্তরাপথের ত্রিবেণীতে গঙ্গ। হয়েছেন যুক্ত-বেণী। বাংলা দেশের ত্রিবেণীতে তিনি হয়েছেন মুক্ত-বেণী

ত্রিবেণীতে স্নান করতে চললেন রাসমণি। এবার ..ঠিক করলেন, স্নানের শেষে জন্মভূমি দেখে ফিরবেন। সঙ্গে তার ছোট জামাই মথুরনাথ রয়েছেন

পিতৃ-পিতামহের ভিটের খবর তিনি রাখতেন ভিটেতে এখন আর কুঁড়ে ঘরও নেই। কেউই থাকে ন! সেখানে রাসমণি কেবল বছর বছর খাজন। দিয়ে জমির অধিকারটুকু বজায় রেখেছেন

গ্রামে গেলে ক'দিন তো থাকতে হবে। অন্ততঃ তিনটি রাত.

২৯

তাকে থাকতে হবে জধ্মভূমিতে। তাই আগে থেকেই টাকাকড়ি 'দিয়ে রাসমণি কয়েক্ধন লোক পাঠিয়ে দিলেন কয়েকটা ঘর তার! এই ক'দিনে তৈরী করে রাখবে। |

গ্রামে সাড়া পড়ে গেল। রাণী আসছে তাদের গ্রামে বাংলার বিখ্যাত মহিলা সে। কোনার গব। যারা রাসমণিকে দেখেনি, তার! দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে যার তখন কিশোরী রাণীকে দেখেছেন, তারাও নতুন করে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেন। ছু'দশ ক্রোশ দূরের গ্রামেও খবর গিয়ে পৌছায়।

বহুদিন বাদে প্রায় পয়ত্রিশ বছর পরে রাসমণি তার জন্মভূমিতে এসে পা দিলেন কৈশোরের পুরনো। দিনের কত স্থৃতি এসে মনের মধ্যে ভিড় করে। তরুলতা, স্মৃতিকণা॥ পদ্মাবতী কে কোথায় আছে কেজানে! হয়তো কোন্‌ দূরদেশে তাদের বিয়ে হয়েছে। পরম সুখে স্বামীর ঘর করছে পুত্র-কন্ায় ঘর ভরে গেছে অনেক দ্রিনের হারিয়ে যাওয়া বাল্যকালকে যেন খুজে পেলেন আবার। আনন্দে তার মন আলোড়িত হতে থাকে বাব মা'র নেহ-ভালবাসা, প্রিয় সঙ্গীদের হান্য-কৌতুক একে একে সবই মনে পড়তে থাকে

রাঁসমণির আডিনায় জনতার ভিড় বাড়তে লাগল ক্রমশ কোনার নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব সকলেই তাকে দেখতে এসেছে। কোনা ছাড়িয়ে ছু'দশ ক্রোশ দূরের লোকও এসেছে রাসমণিকে দেখতে রাসমণির খ্যাতি তখন বাংলার চতুর্দিকে ছড়িয়ে রাণী সকলের সঙ্গে সমানভাবে আলাপ-পরিচয় করলেন

সঙ্গীদের খোজ করতে তার ভূল হলো। না। তরুলতা পাশের গ্রামেই ছিল। রাসমণি লোক পাঠিয়ে বাল্য-সহচরীকে ডেকে পাঠালেন। পরে রাণীর অভ্যর্থনায় ছ'জনের পুরনে। বন্ধুত্ব জমে উঠলে। আবার তরুলতার এখন তিন ছেলে, তিন মেয়ে। রাণী প্রত্যেকের অন্ত নতুন জাম। কাপড় কিনে আনলেন। মেয়েদের দিলেন রঙিন শাড়ী। বন্ধুদের দিলেন একখানা করে বেনারসী।

৩৩

স্বৃতিকণা তখন গ্রামেই ছিল। তার মা বেঁচে আছেন শুনে পাটের কাপড়, মিষ্টি নিয়ে রাসমণি চললেন বৃদ্ধার সঙ্গে দেখ “করতে বৃদ্ধা তে। অবাক ! ধনীর গৃহিণী রাসমণি এসেছেন তারই কুঁড়ে ঘরে এত নাম ডাক ধার, একটুও অহঙ্কার নেই তার মনে।

পদ্মাবতী অসুস্থ থাকায় সে দেখা করতে আসতে পারেনি তার বাড়িতেও করাসমণি গিয়েছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। রাণীর নঅ-মধুর ব্যবহারে গ্রামের সকলেই মুগ্ধ হয়ে যায়। অবস্থায় তারতম্য ঘটলেও মনের পরিবর্তন হয় নি একটুও

তিন রাত্তির জন্দুভূমিতে কাটালেন রাসম।ণ।

বিদায়ের লগ্ন এগিয়ে এল। হাতে তার এখন অনেক কাক্। বিদায়ের আগে গ্রামবাসীরা একত্রে এক অনুরোধ করে বসলে মকলের স্নানের অন্ত গঙ্গায় একট। ঘাট করে দিতে হবে তাকে রাণী আনন্দের সঙ্গেই প্রস্তাবে রাজী হলেন। এর জন্ত তিনি ত্রিশ হাজার টাক! মঞ্জুর কবলেন।

ফেরার পথে রাসমণি কোন থেকে বংশবাটিতে গেলেন। বদ্ধিধুঃ গ্রাম এখানে হিন্দুদের এক পবিভ্র মন্দির আছে। হংসেশ্বরী মন্দির। দেখতে এলেন এখানে প্রতি তীর্থক্ষেত্রে এসে রাসমণি ছু'হাতে দীন-দরিদ্র ত্রাক্মণদের দান করেছেন। এখানে এসেও তার কোনো ব্যতিক্রমে হলে! না। এখানকার দানশীল প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন রাজ নৃমিংহদেব। তার স্ত্রীর নাম শঙ্করী। তিনিও কম দয়াবতী নন।

ধনী হলেও তারা রাসমণির মতো। অত. বিত্তশালী নন। রাসমণি শঙ্করীকে বললেন, বংশবাটির ব্রাহ্মণদের তিনি কিছু দান করতে চান। এতে শঙ্করী খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তিনিও ছিলেন দানশীল। মহিলা তিনি বললেন, রাসমণি যদ্দি-ব্রাহ্মণদের অর্থাদি দান করে যান, তাহলে তার দানের আর স্থান থাকবে না। তারদানের আর মাম হবে না।

৩১.

রাসমণি শঙ্করীর ব্যথা বুঝলেন। শুধু নামের জন্য তে! তিনি দান করভেন না। যশ, খ্যাতি তার কম নগ্। দানের আনন্দে তিনি দান করে থাকেন। তিনি নিজের দানের প্রস্তাব তুলে নিলেন। কলকাতায় ফিরে এলেন তিনি।

সেট। ছিল ১২৫৭ সাল রাসমণি মনস্থ করলেন, আবার তিনি তীর্থ-ভ্রমণে বেরোবেন। নায়েব ছু" জামাইয়ের ওপর কার্যভার চাপিয়ে মুক্ত হলেন তিনি। ছোটে জামাই মথুর তার সঙ্গে যাবে! পুরী যাবেন এখন। জগন্নাথদেবকে দর্শন করবেন তিনি সাজ সাজ রব পড়ে গেল।

যাত্রার শুভ মুহৃর্ত ঘনিয়ে এল। তখন তীর্থ ভ্রমণ আজকের মতো এত সহঙ্গ ছিল না। জলপথে নৌকায় যেতে হতো সর্বত্র পথে অনেক অন্ুবিধায় পড়তে হতো প্রায়ই দস্যু ত্করের উপদ্র বও ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তে। ছিলই জল-ঝড়, জীব-জন্তর ভয় তে। ছিলই।

মেয়েদের গলার ব্বর ভারী হয়ে এল। চোখের পাতা জলে ভিজে গেল। কতদিন পর তার। আবার মাকে দেখতে পাবে। দাসদাসী, আতীয়-কুটুন্ব সকলেই গঙ্গার ঘাট পর্যস্ত এল রাণীকে বিদায় দিতে! সে এক শোভাযাত্রার মতই দেখাচ্ছিল

পাচখান1 ঝড় বড় নৌকো গঙ্গার বুকে চলতে সুরু করলে! লোকজন অনেক সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি লাঠিয়ালদের একটি দলও তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন। গন্কা উত্তীর্ণ হয়ে ক্রমে নৌকোগুলে। নদীর মোহনায় এসে পড়লো। গঙ্গানদী এখানে সাগরের বুকে এসে মিলেছে সার বেঁধে নৌকোগুলে। এগিয়ে চলছিল _ পথে জল-ঝড়, অনেক অস্থুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদেরকে শত কষ্ট আর অন্ুবিধে সহা করেও রাণী তার সঙগীদল নিয়ে শ্ত্রীক্ষেত্র, পুরীধামে এসে পৌছলেন।

৩২

তৃষ্ণার্ত প্রাণ যেন সুধারসের স্বাদ পেল এতদিনে নীলাচলের আরাধ্য দেবতাকে দর্শন করে পরম তৃপ্তিলাভ করলেন রাসমণি অনেকর্দিনের সাধ পুর্ণ হলো যেন এতদিনে পরম ভক্তি আর আনন্দে তিনি প্রদক্ষিণ করলেন দেবমন্দির দর্শন করলেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূতি।

শুধু দর্শনেই রাণীর মন তৃপ্ত নয়। হীরের মুকুট দিয়ে সাজিয়ে দেবেন এই তিন বিগ্রহকে | রাণীর ইচ্ছা! মতই কাজ হলে।। প্রায় যাট হাজার টাকা খরচ হলো তার। তিনটি হীরক-খচিত মুকুট তিনি দান করলেন।

পুরী থেকে জলপথে দেশে ফিরে এলেন রাপমণি। পথের অস্থবিধের কথা কিন্তু তিনি ভূললেন না। স্বর্ণরেখা থেকে জগন্নাথক্ষেত্র পর্ধস্ত একটি প্রশস্ত পথ তিনি নিমাণ করে দিলেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয় তার টাকার মায় রাসমণর ছিল ন1 পথের অব্যবস্থার ফলে তীর্ঘভ্রমণে বেরিয়ে তাকে এক এক জায়গায় খুব অস্থাবধার মধে। পড়তে হয়েছিল ' তীথযাত্রীদেরর অনেক দিনের স্থায়ী একটা অসুবিধে চিরদিনের মত দূর হয়ে গেল।

আগেকার [নে তীর্ঘভ্রমণে মুত্র আশঙ্কা ছিল খুব আলে [কিংবা ভাঙা ঘাপা) মেরে লুকিয়ে খাকে চোর ডাকাতের দল অসহায় পথিক বা ত.্থবাত্রীকে প্রাণে মের ভার সব 1কছু লুঠ করে নিয়েই এরা (দন চালায়।

বাসম!ণও এববার এই ডাকাতদের মুখোমুখি পড়ছিচলন নবদীপ থেকে ফেরা শাথ চন্দননগব্রে কাছাকাছি এক জজলের কাছে তিনি আক্রান্ত হন' তখনকার দিনে স্থলপথে পাক রাস্তার অভাব ছিল তীর্থাদি ভ্রমণ করতে হলে জলপথেই বেরোতে হতো রাণী নৌক। করে জলপথেই কলকাতায় ফিরছিলেন। নদীর ধারেই ছিল একট বড জঙ্গল।

এই জঙ্গলের মধ্যে একদল দন্দযু ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল।

৩৩ রাসমণি

রাণীর নৌকো তাদের কাছাছাছি আসতেই হৈ হৈ করে তার! নৌকে। আক্রমণ করলে। 'রাসমণির ভীষণ মনবঙ্গ দুর্জয় সাহস ছিল। দস্যুদের দেখে তিনি একটুও ভয় পেলেন না।

রাণী অবশ্য অরক্ষিত ছিলেন ন!। তার সঙ্গেও দেহ-রক্ষী, পরিচারক, দারোয়ান সবই ছিল লাঠি চালাতে এরা কম পটু ছিল না। দস্যুরা সংখ্ায় সেদিন বারোজন ছিল লাঠি বাগিয়ে তারা ছুটে আসে হঠাৎ আক্রান্ত হয়ে পড়ায় রাণীর রক্ষীদল একটু বিচলিত হয়ে পড়ছিল রাণী তাদের সাহস দেন। দাড়িয়ে মার খেতে তারাও রাজী ছিল না। তাদের রাণীমা'র গায়ে আঘাত লাগলে তারা মুখ দেখাতে পারবে না কাউকে তারাও এবার সকলে লাঠি বাগিয়ে ধরলো ছুপক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ বেধে গেল নীরব প্রান্তর লাঠির ঠকৃঠক্‌ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো কোনো পক্ষই সহজে হারতে রাজী নয়।

একদল তাদের আত্মসম্মান, মান-মর্ধাদা, ধন-দৌলত বাঁচাতে বদ্ধপরিকর প্রাণ দেবে তবু মান দেবে না জীবন থাকতে রাণীমা"র কোন ক্ষতি হতে দেবে না। ধন-দৌলশত লুঠ করবার লোভে অপর দল মরিয়া হয়ে উঠেছে অনেকক্ষণ মারামারি চললো অবশেষে দন্যুদলের কয়েকজন আহত হলে। জলের মধ্যে মাথ! ঘুরে পড়ে গেল একজন। দন্ুযুদের দলপতি ব্যাপারট। আবার মিটমিট করে নিতে চাইল। কোনো আক্রোশের বশবরভাঁ হয়ে তার! মারামারি করতে আসেনি মারামারি করা তাদের উদ্দেশ্য নয়! ধন-দৌলত, টাকাকড়ির দিকেই তাদের ঝেশেক। ওসব পেলেই তার! চলে যাবে।

রাণী শুনলেন দলপতির কথা অর্থের অভাব তার নেই তিনি দলপতিকে বললেন, টাঁকাকড়ি নেওয়াই যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আমার কাছে যা আছে তা তোমরা নিতে পারো আমার কাছে এখন সামান্য টাকা আছে। নিয়ে খুশী হলে নিতে পারো, আমার কোনো আপত্তি নেই

৩৪

রাসমণির কথার উত্তরে দলপতি কোন কথা বলতে পারে না ঘুদ্ধে তাদের হার হয়েছে জোর করার কিছু নেই। রাণীর ব্যক্তিত্ব আর তার দেবীস্থলভ চেহারায় সে অভিভূত হয়ে পড়েছিল। তাকে নীরব দেখে রাসমণি আবার বলেন, যদি এই সামান্য অর্থে তোমর! সন্তুষ্ট না হও, তাহলে আমাকে বিশ্বাস কর, কাল ঠিক এই সময় তোমাদের বারোজনের অন্য আমি বারো হাজার টাকা পাঠিয়ে দেব। আমারই দারোয়ান তোমাদের হাতে টাকার থলিটা দিয়ে যাবে।

রাণীর কথ বিশ্বাস করে দম্্ুর। চলে গেল সেদিনকার মতো রাণীও ফিরলেন তার কলকাতার বাড়িতে তার দলের জন ছুই একটু জখম হয়েছিল। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। দন্থ্যদের কথা দেওয়া আছে। পরের দিন থলে ভরে বারো হাজার টাক। পাঠিয়ে দ্রিলেন।

গল্পের মতে। শুনলেও ঘটন। সত্য। কথার দাম রাখতে তার স্বামী রাজচন্দ্র দাস দেউলে ব্যবসায়ীর হাতে একলক্ষ টাক! তুলে দিয়েছিলেন। কারণ সাহেবকে টাক! দেবেন কথা দিয়েছিলেন ঘতনি। রাণীও তার সত্য রক্ষা করলেন

সাত

দ্বিতীয়বার যখন রাসমণি নবদ্ীপে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে সাধু-সঙ্জন, বৈষ্ণব বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের অকাতরে দান করেছিলেন সেই দানের অর্থের অঙ্ক দাড়িয়ে ছিল প্রায় কুড়ি হারার টাক।। নানাস্থানে তীর্ঘভ্রমণে বেরিয়ে রাণী চার বছরে প্রায় পাঁচলক্ষ টাক! দান করেছিলেন। তিনি যেখানেই গেছেন মুক্তহস্তে দান করেছেন।

৩৫

দানে রাসমণির কোনে! তুলনা হয় না। কয়েক শতকের মধ্যে বাংল দেশে এতবড় দাতার আর আবির্ভাব হয়নি ধনী ব্যক্তি বাংল। দেশে আজও আছে, কিন্তু মহৎ মনের অভাব ঘটেছে খুব। আজকের ধনীর! খুব স্বার্থ-সন্ধানী অথলোভী হয়ে পড়েছেন। দানের কথ! তারা কল্পনা করতেও পারেন না, সাহায্য করা তো দুরের কথা তার! বিভিনন দিক থেকে দেশের সাধারণ মান্ুবদের শোষণ করছেন :

পরবতীকালে রাসমণি নিজে প্রজাদের স্ুুবিধের জন্য একটি খাল খনন করান। একলক্ষ টাকার মতো তার খরচ হয়েছিল এই খাল খনন করতে মন্্মতী নদীর সঙ্গে নবগঙ্গাকে মিলিয়ে দিয়েছে এই খাল। টোনার খাল" নামে এই খালটি পরিচিত তিনি উদ্যোগী হয়ে সোনাই, বেলেঘাট।, ভবানীপুরে বাজার বসালেন কালীঘাটে ক্লানের ঘাটও তিনি নির্মাণ করেন,

একজন মাত্র মহিলা কিন্তু দিকে দিকে তার কল্যাণ-হস্ত প্রসারিত “দবতা ব্রাহ্মণদের প্রতি তিনি ছিলেন গভীর ভক্তি- পরায়ণা। গরীব, দুস্থ মানুষদের নিকট তিমি মায়ের মতো! সেহশীল। |

শুধু কোমল স্বভাবা, দয়াবতী ম“হলাই ছিলে না তিনি, শত গুণে গুণান্থিতা ছিলেন তিনি। রাণী রাসমণির মধ্যে ছু'টি সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী গুণের ধারা এসে মিলেছে ' কোমলতা কঠোরতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখ! গেছে তার মধ্যে যেমন ছিল তার আত্মসম্মান বোধ, তেমনি ছিল তার মনের তেজন্বীতা। সহজ সরল আচরণের মধ্যে অদ্ভূত দৃঢ় সন্ত্রমবোধ ছিল তার যেমন ছিল রাসমণির প্রখর বুদ্ধি, তেমনি ছিল তীক্ষ বিষয় নিপুণত

পরোপকারী, মহাপ্রাণা রাসমণি শরণাগতদের রক্ষা করতে খুবই ভালবাসতেন। তার কাছে সাহায্য চেয়ে কেউ কখনও বিমুখ হয়নি অনেক কন্যাদায়গ্রস্থ পিতামাতাকে তিনি অর্থ সাহায্য করেছেন।

ওত

একবার একদল গরীব জেলেকে রাসমণি কি অপূর্বভাবে রক্ষা করেছিলেন; সে কথা গল্পের মনে। আজও লোকের মুখে মুখে শোনা যায়! তার সাহসের জলস্ত নিদর্শন রয়েছে এর মধ্যে

গঙ্গায় মাছ ধরেই জেলেরা ক্জীবন যাপন করে এজন্য কোনে! কালে কোনে। বাজ বা জমিদারকেই কর ব! শুক্ক দিতে হতে। না তাদের পিতা-পিতামহর আমল থেকেই বাবস্থা চলে আসছে বংশ পবস্পরায় এই গঙ্গায় জেলেরা মাহ ধরে খাজে

বাংলাদেশ তখন ইষ্ট উপ্ডিয়া কোম্পানীর হাতে; ?কাম্পানীর কর্তৃপক্ষরা ঠিক করলো গঙ্গায় যাব। জাঁল ফেলবে, তাদের সকলকেই সরকারকে কর দিতে হবে বিনা করে গঙ্গা আর মাছ ধরা চলবে না এর নাম জলকব। সরকারেরর আয় বাবে তাতে

বিনা মেঘে বজ্রাপাত। গরীব জেলের মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লে! তাদের এতদিনকার অধিকার। বিনা কর-এ মাছ ধরে এসেছে এতদিন মাছ ধরে তাদের সামান্য আয় হয়। সেই আয় থেকে সরকারের কর দিতে হলে তার খাবে কি? মাছ ধরাই তাদের শেষ পরস্ত হয়তে। বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবী অভাবের কালে। ছায়ায় তারা চঞ্চল হয়ে উঠলো

জেলেরা সকলে মিলে সরকারী দন্তরে এসে ভিড় করলো কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদনও করলো" তারা এই কর তুলে নেওয়া! হোক। শক্তিমান বিদেশী সরকার গরীব জেলেদের কাতর অনুরোধে কণপাত করলে। না। ছুবলের প্রার্থনায় তারা কেন সাড়া দেবে?

'জলেদের তুর্ভাবনার অন্ত নেই। অগত্যা! তারা এল রাণী রাসমণির কাছে তার কাছে তারা নিবেদন করলো নিজেদের ছুঃখ আর বিপদের কাহিনী এই বিপদ থেকে একমাত্র রাণীমা"ই তাদের রক্ষা! করতে পারেন ! নতুবা তাদের বিপদ কাটবার নয়।

রাঁসমণি নীরবে শুনলেন সব কথা। বুখলেন টাকার লোভেই

৩৭

কোম্পানী এই অন্যায় করতে চলেছে। এই অর্থ-পিশাচ, লোভী বিদেশী সাহেবদের জব্দ করতে হবে দেশের নিরীহ, অসহায় গরীব জেলেদের এই করের হাত থেকে বাচাতেই হবে। কর তারা দেবে না। বিনা বাধায় তারা অবাধে মাছ ধরে যাবে।

ভেলেদের আশ্বাস দিয়ে বিদায় করলেন রাণী। তিনি এবার কাজে উদ্যোগী হলেন

প্রথমে চিনি কোম্পানীর লোকদের চটাতে চাইলেন ন1। মাছের বাবসা করবে বলে ঘুস্ুড়ি থেকে মেটেবুরুজ পর্যস্ত গঙ্গার সমস্ত অংশটা “কংম্পানীর কাছ থেকে জম! নিলেন কোম্পানী রাণীর এই ভিসান্ধ ধরতে পারলো না কোম্পানীর হাতে দন্শ হাঁজার টাকা ,লে দিলেন তিনি।

কোম্পানী খুব খুশী বাণীর ওপর, একসঙ্গে অতগ্চলো। টাকা? তর! পেয়ে গেল! তাছাড়া টাক আদ'য়েয় জহ্কা কোনো হাজাম: করতে হালে। ন৷

জম নেওয়ার পর বাশ আর দড়ি দিয়ে জম। বা! ইজারা নেওয়। গঙ্গার ওই খংশটা বেশ মজবুত করে ঘরে ফেললেন রাপমণি | গঙ্গার ওই অংশট। সম্পূর্ণ তার আয়ত্বাধীন ' পথ বন্ধ হয়ে ফেন্। ফলে ওই পথে নৌকা, জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে!

কোম্পানী এই নতুন সমস্যার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল ন1। খবর শুনে তারা তৎক্ষণাৎ ওই স্থান পরিদর্শনে এল রাসমণির এই কাজের তীব্র প্রতিবাদ করলে জলযানের পথ এরকম ভাবে আটক কর! চলবে | সাহেবদের এই ক্রোধে রাসমণি টললেন ন। একটুও তিনি তেমনি স্বরে জবাব দিলেন, মাছের ব্যবসা করবেন বলেই অত টাকা দিয়ে তিনি জায়গাটা! জম! নিয়েছেন। জাহাজ চলাচল করলে মাছের ক্ষতি হয়। জেলেদের কাজের অসুবিধে হয়। তাই সেইজন্য ওই অঞ্চলটা তিনি নিয়েছেন।

বেগতিক। বেড়া ভাঙবার কোনে। অধিকার নেই। কোম্পানীর

৩৮

সরকার তখন বুঝলে! রাণীর আসল উদ্দেশ্য নিজেদের নিরৃদ্ধিতার জন্য তার রাণীর কাছে হেরে গেল। কোম্পানী জলকর আইন তুলে নিয়ে রাণীর সঙ্গে আপোস করলেন। জেলেরা মাছ ধরবে। খুশী হয়ে রাণীও গঙ্গার বুক থেকে বেড়া তুলে ফেললেন আবার আগের মতই জাহাজাদি চলতে লাগলে! গরীব জেলেরা তাদের হারানো অধিকার ফিরে পেল রাণীর জন্য |

রাসনণির জয়জয়কার উঠলে। চারিদিকে একজন মেয়ে হয়ে সাহস আর বুদ্ধি দ্রিয়ে তিনি বিদেশী সরকারকে হারিয়ে দিলেন। আরও অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে রাণীর জীবনে এইসব ঘটনার মধ্য দিয়েই তার চরিত্রের বিভিন্ন দিক প্রকাশ পেয়েছে

কিছুদিন বেশ শান্তিতেই কাটে। নতুন গোলমালে আবার জড়িয়ে পড়লেন রাসমণি | অন্তায়ের কাছে তিনি কোনে! অবস্থাতেই মাথ! নত করতে রাজী নয়। অসির উত্তর অনির ঝংকারেই হওয়। ভালো, বিনয় সেখানে ছুরলতার নামান্তর

জগন্নাথপুরে রাসমণির খানিকট' জমি ছিল। তার কিছু প্রক্জাও ছিল সেই জমিতে এই জমির পাশেই ব্রাহ্মণ জমিদার রামরতন রাফের জমি ছিল। একে ব্রাহ্মণ বর্ণশ্রেষ্ঠ, তার ওপর জমিদার। দাপট খুব। সম্পত্তিও কম ছিল না। যশোহর জেলার নড়াইলের পরাক্রাস্ত জমিদার তিনি

তখনকার দিনে শক্তিশালী জমিদারদের একটা বদ্‌-অভ্যাস ছিল। সুযোগ পেলেই পাশের জমিদারের জমি তারা গ্রাস করতেন। লুঠতরাঁজ তাদের লেগে ছিল। ঘর বাড়িও পোড়ানো হতো রামরতন রায়ের এই বদগুণগুলি ছিল।

রামরতন রায় হয়তো রাসমণিকে হুর্বল ভেবেছিলেন !

রামরতন রাসমণির সংগে হঠাৎ বিবাদ মুর করলেন। রাসমণি স্ত্রীলোক। মুঠির জোর তার নিশ্চয়ই কম। তিনি রাসমণির

৩৪৯

জমিদারিতে নিতা নতুন উৎপাত সুরু করলেন। নিত্য নতুন হামঙ্গা। কোনদিন প্রজাদের ওপর হঠাৎ নির্যাতন নুরু হয়! তাদের সম্পত্তি লুটপাট হয়ে যায়। কোনদিন বা তাদের ঘরে আগুন নাগানো হয়। প্রজার হতাশ হয়ে পড়ে।

প্রজ্ঞার নিরুপায় হয়ে রাণীমার কাঠ নালিশ করে। রোজ বোজ রাসমণির কানে এসে পৌছয় এই উপদ্রবের কথা | প্রঙ্ঞাদের টিনি পুত্রের মতো নেহ করেন। প্রজাদের ওপর তিনি কে!নদিন অত্যাচার করেননি রাসমণি এতে খুব বিচলিত হয়ে পড়েন খুব বিব্রত বোধ করেন। কাহাত.চ আর মুখ বুজে সহা করা যায় এট জঘন্থ উৎপাত। নিশ্চয়ই কোনো বদ মতলব রয়েছে রামরতন রায়ের |

নড়াইলের এই জমিদার বেশ শক্তিশালী নম্র কথায় কোনো কাজ হবে না। তাকে ছুবল মনে করে তার ওপর হামল। করছে রাসমণি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। উপায় ভাবতে লাগলেন। কি করে শিক্ষা দেওয়া যাঁয় এই জমিদারকে 1

অবশেষে তিনি এক সিদ্ধান্তে এসে পৌছলেন। ঠিক করলেন, শক্তি দিয়েই শক্তির পরীক্ষা নেবেন। লাঠি দ্রিয়েই ঠেকাবেন লাঠির আঘাত! অকুতোভয়, নিভীত রাসমণি লড়বার জন্য প্রস্তুত হলেন এক ইঞ্চি জমিও তিনি ভয়ে তাকে ছেড়ে দেবেন না।

মহাবীরের ডাক পড়লে রাসমণির সিপাহী দলের সর্দার সে। লম্বা দোহারা গঠন যেমন বলবান তেমনি খুব বিশ্বাসী বেইমানি সে জানে না। বেইমানকে. সে ছাড়বেও না। রাসম-ণ শীঘ্রই তার পরিচালনায় বিরাট একট। সিপাহী আর লাঠিয়ালের দল পাঠালেন জগন্নাথপুরে অস্ত্রশস্ত্র আর নান। যুদ্ধ-উপকরণে প্রস্তুত হয়ে গেল তারা

মরবে নতুবা মারবে দেহে প্রাণ থাকতে রাণীমার অসম্মান হতে দেবে না তারা রাণীর এই অজেয় দল জগন্নাথপুরের মাটিতে তাবু খাটালে!।

৪০৩

শুধু দল পাঠিয়ে কত্তবা শেষ করলেন না তিনি, বলে পাঠালেন, জমিদারিতে অকারণ এরকম উৎপাত করা চলবে না। তিনি মহিল। হতে পারেন, কিন্তু কারোর ভয়ে ভীত নন। প্রয়োজনে তিনি খুব কঠোর নির্মম হতে পারেন। জমিদার রামরতন রাসমণির কথায় কর্ণপাত করলেন না তার শক্তিও তো। কম নেই।

রামরতন যদি একথা শুনতেন তাহলে গোলযোগ আর আগাতে। না। এখানেই মিটে যেত: অন্তায়ভাবে কারোর জমি গ্রাস করবার ইচ্ছা! ছিল না রাসমণির : তা বাদে তার জমি কউ ভয় দেখিয়ে কচ নেবে, তা ছে হয় না। অন্যায়ভাবে যে 0$উ তার জমিদারিতে মাথ। গঙ্গাবার চেষ্ট! করবেন, তাকে তিনি উচিত সাজ। দেবেন

জগন্নাথপুর গ্রামে সাড়। পড়ে গেল মহাবীরের পরিচালনায় কয়েকশো সিপাহীবাঠিনী এসে জড়ো হলো এত সৈম্ত আর নানা“কম অস্ত্রশস্ত্র দখে জমিদার রামরতন রায় এবার ঘাবড়ে গেলেন বাসমণির এক হাতে আছে বরাভয়, অন্ত হাতে অসি। বুদ্ধিমান রামনজ্নবাবু শক্তি পরীক্ষায় আর এগোলেন না। শুধু শুধু উভয় পক্ষের কিছু লোকক্ষয় হবে।

রাসমণির সঙ্গে তিনি সন্ধি করলেন। ছুই জমিদারের সঙ্গে বন্ধু স্থাশিত হলে ; সমানে সমানে বন্ধু জমে ভালে।। অনেক দিনের সঞ্চিত ক্রোধ আর মনোমালিন্য দূর হয়ে গেল। পাশাপাশি এই ছুঈ জমিদারের মিত্রত! বেশ গভীর হতে থাকে।

৪১

আট

সিপাহীদের মধ্যে তখন অসস্ভতোষের ক্ষোভ দান বেঁধে উঠেছে সিপাহীদের মধ্যে হিন্দ-মুসলমান ছ'ধর্মেরই লোক ছিল। তখন বন্দুকের টোট। দাঁতে কেটে বন্দ্ুকে ভরতে হতো তার! শুনলো! এই টোটায় গরু আর শৃয়রের চবি মাখানে। থাকে "গরু, শুয়রের চবি মাখানো টোট। দ্রাতে কাট। হয়েছে জেনে সিপাহীর। ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

সারা দেশের লোকের মনে কোম্পানীর ক্রিয়াকলাপে অসস্তোষ জম। হয়েছিল। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ছিল ইংলগ্ডের আর পাঁচটা কোম্পানীর মতই একটা! ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বুদ্ধির জোরে ক্রমে ক্রমে এই কোম্পানী সামান্ত অবস্থা থেকে ভারতের মতো! বিরাট দেশের শাসক হয়ে ওঠে ছলে-বলে-কৌশলে তার! রাজ্যের সীমা বাড়িয়ে নেয়

ধৃত এস্ট কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, যে সব দেশীয় রাজাদের কোনো পুত্রসস্তান থাকবে ন:, সেই সব রাজা দের মৃত্যু হলে, তাদের রাজ্য কোম্পানীর অধিকারে আসবে সাধারণ লোকের কোম্পানীর ওপর বাগ তে। ছিলই ; এই ব্যাপারে অপুত্রক দেশীয় রাজাঁরাও রেগে গেলেন খুব। সিপাহীচ্দর সাথে এইসব দেশীয় রাজ্ঞারা যোগ দেন।

সিপাহীর। প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণ! করলে! কোম্পানীর বিরুদ্ধে এমন একটা গোলযোগ বেঁধে গেল, যাতে দেশের লোক আর বিদেশী কোম্পানী উভয়ে উভয়ের পরম শত্রু হয়ে উঠলে।। সিপাহীর। বাহাহুর শাহকে তাদের নেতা বলে €মনে নিল। উত্তাল তরঙ্গের মত এই আন্দোলন ফেঁপে উঠলো! বিদ্রোহ সবচেয়ে প্রবল হয়ে ওঠে দিল্লী, কানপুর প্রভৃতি জানম্মগায়। সারা উত্তর ভারতে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে সিপাহীদের সঙ্গে জায়গায় জায়গায়

সাধারণ লোকও যোগ দিয়েছিল। তারা মিপাহীদের সঙ্গে মিশে নিবিচারে ইংরেজদিগকে হত্যা করতে লাগলো ইংরেক্রাও কঠিন হাতে এই বিদ্রোহ দমন করতে সচেষ্ট হয়

সাঁর। দেশ জুড়ে যখন এস্ট অশীাস্তির দাবানল জ্বগছে, ইংরেজ আর ভারতীয়ের মধ্যে যখন শুধু ঘৃণা আর হিংসার সম্বন্ধ, তখন ক্রী স্কুল দ্রিটে রাণীর বাড়ির সামনে একটা ঘটনা! ঘ;টছিল। লড়াষ্ট বেধেছিল কিছুক্ষণের জন্য সেদিন রাণীর স'হস আর মনোবল দেখে বিদেশী সৈম্তর] হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল !

ফ্রীষ্কুল গ্রীটে তখন একদল ইংরেক্ছ সৈম্থা বাস করতো এই গার সৈন্যরা খুব উচ্ছুখল ছিল। এর! মদ খেত, হৈ হুল্লোড করতে" প্রায়ই পথিকদের হাত থেকে দ্িনিষপত্র কেড়ে নিত। প্রতিবেশীদের যখাসর্ধবস্ব লুঠ কবে আনতো ক্রমশই ভাদের 'ত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে অকারণে পাড়ার মধ্যে মারামারি গণ্ডগোল ল'গিয়ে দিত. স্থানীয় নিরীহ অপিনাসীরা কোনো প্রকার করতে পারছিল ন!; কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করে 1র: ব্যর্থ হলে! অগত্যা! মুখ বুজে তাঁদের স্হা করতে হচ্ছিল এই 'গারা। সৈন্যদের সকল রকমের ছুব্যবহার |

রাসমণির দৃষ্টি এড়ায়ণন। তিনি নারবার এটা! ক্ষ করছিলেন বেয়াদপির মাত্র! ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে তার আর বরদাস্ত হচ্ছিল ন। এই অনাচার এই গোরা সৈম্যগুলোকে একদিন সমুচিত শিক্ষ? দিতে হবে! ভারতীয়দের তারা কি মনে করে? তারা কি অসহায়? তাঁর! কি ছুবল?

সুযোগ খু'্তরতে থাকেন রাসমণি। লক্ষ্য রাখেন এদের কাধ- কলাপের ওপর সুযোগ একদিন এসে গেল। অন্যদিনের মতো সেদিনও গোরা সৈম্তরা ঝাপিয়ে পড়লে। এক পথিকের ওপর মদ.

খেয়ে মত্ত অবস্থায় সকলে মিলে পথিকের ওপর নির্যাতন শুরু করে।

৪৩

লাঞ্ছিত, অপমানিত পথিকের মর্মবাণী যেন শুনতে পেলেন রাণী এর কি প্রতিকার হবে না আর? হামলাটা সেদিন রাণীর বাড়ির সামনেই হচ্ছিল। রাণী তার প্রাসাদ থেকে এই করুণ দৃশ্য দেখছিলেন মথুরবাবুও বাড়িতেই ছিলেন। তিনি দাকোয়ানদের হুকুম দিলেন, এই সুহ্ত্তে পথিকটিকে যেন ছাড়িয়ে আনে ; আর অসভ্য সৈন্যদের উত্তম-মধ্যম দিয়ে এখান থেকে যেন তাড়িয়ে দেয়। এট| রাজবাড়ি, এর সম্ভ্রম রক্ষা করতে ন। পারলে শাস্তি পেতে হবে।

সিংহের মতে। গর্জে দারোফানরা লাফিয়ে পড়লো হৃ'দাল কিছুক্ষণ সাঁপিটও হলে মাতাল সৈম্যগুলে। পারুখ কেন? ম!ব খেয়ে গোর! সৈম্তরা নিশেদের তাবুতে ফিরে গেল এদের মধ্যে কয়েকজন মাথায় আঘাত পেয়েছিল খুব

গোলমালটা কিন্ত এখানে শেষ হলো! না সুত্রপাত হলে। সবে। গোর! সৈম্তদের আচক্রাশ গিয়ে পড়লে রাণীর ওপর নিজেদের দোষ সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে সহকর্মীদের তারা ক্ষেপিয়ে তুললো রাণীর বিরুদ্ধে রাণীর লোকজন তাদের শুধু শুধু মেরেছে রাণীও তাদের সঙ্গে বিবাদ করতে শুরু করেছে কোম্পানীর রাজত্‌ হয়ে তাদের এই অপমান | এর প্রতিকার চাই উচিত সাজ দিতে হবে রাণীকে। অপমানের প্রতিশোধ নিতে হবে। সারা ছাউনী জুড়ে একট থমথমে ভাব বিরাজ করতে থাকে

সারাদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা! চলতে থাকে সৈন্যদের মধ্যে। ক্রমে দিন যায় রাত আসে। রাত তখন দশট1। রাসমণির জামার কেউই বাড়ি নেই ' এমন সময় গোর] সৈম্ভরা নানারকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়ি চড়াও করলো একদল সৈন্য হুমড়ি খেয়ে এসে পড়লে। গেটের ওপর। ম্ুসঙ্জিত এই সৈম্তদের তুলনায় রাসমণির দারোয়ানরা আর ক'জন তার ওপর তার। একদম প্রস্তুত ছিল না। একজন ছুটে গেল রাণীর সিপাহীদের খবর দিতে বাকী ক্ষন সৈম্তদের বাধ। দিল কিন্তু তারা পারবে কেন?

88

অল্পক্ষণের মধ্যেই তাদের পিছু হটতে হলো গোরা সৈন্যরা তাদের হারিয়ে বিকট উল্লাসে হৈ-হৈ করতে করতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো ছড়িয়ে পড়লো তারা বাড়ির আনাচে কানাচে বাড়ির মধ্যে ঢুকে তারা সুরু করলে। অত্যাচার লোকজনদের মারধোর করতে লাগলো রাসমণির সাজানো সুন্দর বাড়ি নিমেষের মধ্যে তার। তছনছ করে ফেললো? অনেক পশুপাহী পুষতেন তিনি আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললে সুন্দর হরিণগুলোকে বুনো পশুর মত তার! হিংঅ হয়ে উঠেছে . বাড়ির বড় বড় আয়না, আসবাবপত্র দারুণ শন্দে ভেঙে পড়তে লাগলে ক্রমশই তার মহলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ?

কে তাদেব বাধ। দেবে? নিরীহ মান্থুষগুলে। আত্মরক্ষায় বস্ত হয়ে পড়ে।

বিচলিত হয়ে পড়লেন রামমণি প্রাণভয়ে নয়, যদি গোরারা তার রঘুনাথজীর মন্দিরে ঢুকে পড়ে কলুষিত করে গৃহদেবতাকে ? আর তিনি চুপ করে থাকতে পারলেন না। তাঁর সিপাহীদের আগমনের আশায় কতক্ষণ আর নীরব থাকবেন? ভেতর থেকে অন্দর মহলের দরজ। বন্ধ করবার নির্দেশ দিয়ে তিনি ছুটে এলেন গৃহদেবতার মান্দরে-- তার রঘুনাথজীর কাছে, হাতে তুলে নিলেন এক্সখ।না মুক্ত ক্ুপাণ। যদ্দি কেউ রঘুনাথজ্ীর মন্দিরে ঢুকতে আসে, তাকেই উচি৩ আ।ঞজ| দেবেন। বীর দর্পে পরম শিভয়ে দেবতার দ্বার পাহারা দিলেন জ্যোত্িময়ী রাণী রাসম্নর সেই মৃতি ভূলবার নয়। তার দীর্ঘ লম্বা চুল খুলে পড়েছে পেছনে। সার! মুখে একট। থমথমে ভাব। ভয়ের লেশমাত্রও নেই কোথাও

ভক্তের ভগবান কোনো গোর! সৈম্তকেই রঘুনাথজীর মন্দির- মুখো। হতো। হলো না। মহাবীর তার সিপাহী 1নয়ে এসে পরম বিক্রমে লাফিয়ে পড়লো। গোরা সৈন্যের ওপর বাড়ির প্রাণে ছুই দলের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ বেঁধে গেল:

৪8৫

এই সমর ছোটে। জামাই মথুরনাথও সৈম্তাধ্যক্ষকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেন ' ইতিমধেয তাঁর কানেও এই খবরট। গিয়ে পৌছেছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ বাড়ি না এসে ছাউনির সৈম্তাধ্যক্ষের নিকট ছুটে ছিলেন। সৈন্যাধ্যক্ষকে দেখে সৈম্তার। দাড়িয়ে পড়লো যার য'র জায়গায়। জৌকের মুখে যেন চুন পড়ালা। মারমুখো সৈম্যরা লক্ষ্মী ছেলের মতে। সুভন্ুড় করে বেরিয়ে গেল রাসমণির বাড়ি থেকে !

গোলমাল অবশ্য মিটে গেল। কিন্তু রাসমণি এই ঘটনার অত্যন্ত অপমান বোধ করলেন ! তিনি খুব রেগে গিয়েছিলেন গোরাদের ওপর সমাজের কাছে, প্রতিবেশীর কাছে তার যথেষ্ট মর্যাদ। রয়েছে। তিনি 'মাইনের আশ্রয় নিলেন। আদালতে নালিশ করলেন গোরা সৈম্তরা তার যা কিছু নষ্ট করেছে, তা সবই ফিরিয়ে দিতে হবে তাকে

সত্যের জয় স্থনিশ্চিত। সত্য তার দিকে জয় তার হলো। মামলায় জিতলেন রাসমণি। আদালত নির্দেশ দিলো, সরকার তার ক্ষতিপূরণ দেবে সরকারের এই ক্ষতিপূরণ রাসমণি নিয়েছিজেন কিন! তা ঠিক বলাযায় না কারণ বিষয়ে হুটো। মত রয়েছে ক্ষতিপূরণ তিনি দিন বানা নিন সেট! বড় কথা নয়। তিনিষে নির্ভয়ে বিদেশী সরকারের বিরুদ্ধে দ্রাড়িয়েছিলেন ; সংগ্রাম করে নিজের মর্যাদা আদায় করেছিলেন এতেই তার শ্রেষ্ঠত্ব

সিপাহী-বিদ্রোহের আগুন তখন সারা ভারতে ভীষণ্ভানে 'ছুড়িয়ে পড়েছিল। বাংলা তথা দক্ষিণ ভারতে এই অন্দোলন কম হলেও উত্তর ভারতে সিপাহী-বিদ্বোহ দাবানলের মতো দাউ দাউ কবে জ্লছিল। এই অন্দোলনের সময় ভারতবাসীর মন ছিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

৪৬

অদূর ভবিষ্যতে কারা এই ভারতবর্ষ শাসন করবে? কোন্‌ দল ক্ষমতার আসনে অধিচিত হবে ?

সিপাহী পক্ষ না! ইংরেজ পক্ষ? কোন্‌ দলকে মেনে নেবে দেশের লোক? ভীষণ এক সমন্তার সম্মৃধীন হয়েছিল ভারতবাসী। বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু ঠিক করতে পারছিল ন। দেশের সাধারণ মানুষ

দিল্লী, আগ্রা, মিরাট, লাক্ষৌ কানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে সিপাহীদের সংগ্রাম তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এই সব অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের মধ্যে একটা আশা স্পষ্ট জ্েগেছিল, এই ভারতে সিপাহী- রাজ্য স্থাপিত হবে। কিন্তু বাংল “দশের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ বুঝেছিলেন, যুদ্ধের ব্তমান পরিস্থিতি যাই হোক কোম্পানীই শেষ পর্ধস্ত জয়লাভ করবে। সিপাহীদের শাক্ত ছিল বিচ্ছিন্ন এই ভাবে দেশের ভবিষ্যৎ ধীরা দেখতে পেয়েছিলেন, রাণী রাসমণি তাদের মধ্যে একজন

সিপাহী বিদ্রোহের সময় বাংলাদেশের লোক চেয়েছিল ইংরে কোম্পানীই জয়লাভ করুক। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে খন তেমন কে'নে। প্রতিক্রিয়। হয়নি ইংরেজ রাজত্ব বজায় থাকলে শিক্ষায়, সভ্যতায় দেশ এগিয়ে যাবে অনেকটা দেশের উন্নতি হবে। এই ইংরেজরাই সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞানের নতুন নতুন স্তা ধারার সংগে আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

ব্থলোক ভয়ে কোম্পানীর কাগজপত্র 'বক্রি করে দিচ্ছিল, কারণ তারা ভেবেছিল কোম্পানীর শাসন বোধহয় আর থাকবে না! হাজার হাজার টাকার কোম্পানীর শেয়ারের কাগজ নামমাত্র মূল্যে বিক্রী হয়েছে। বুদ্ধিমতী রাসমণি কিন্ত নিজের কাগজ বিক্রি করেননি! বরং যারা কম দামে বিক্রপ্ণ করেছে, সেগুলো! কিনে নিয়েছেন। পরে এই অল্প দামে কেনা শেয়ার পত্র থেকে তিনি

৪৭

অনেক টাকা লাভ করেছেন। এতে. রাসমণির দৃরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়। যায়। সুযোগ-স্থবিধা পেলেই সম্পন্তি বাড়িয়েছেন তিনি। স্বামীর সম্পত্তির যোগ্য পরিচালন। করেছেন তিনি।

রাসমণিকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়েছে সম্পত্তি বেশি হলে তার ঝকি বেশি হয়। সব দিকেই তার দৃষ্টি ছিল। তার প্রজাদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করে কেউ পার পায়নি দেশী বাঁ বিদেশী কাউকে তিনি ক্ষমা! করেননি

একবার এক বিদেশী বণিকের সাথে তার বিবাদ বাধে। রাসমণির মাকিমপুর পরগণার জমিদারিতে উৎপাত আরন্ত করোছল এক নীলকর সাহেব। তার নাম ডোনাল্ড! নীলের চাষ করতো! বলে সাহেবের আর একটি নাম হয়েছিল, সাধারণের মধ্যে নীঙ্গকর সাহেব বলেই সে পরিচিত। এই নীলকর সাহেবের! প্রায়ই ছিল ভয়ানক লোভী এবং কুট নিজেদের স্বার্থ আর লোভের দিকটা তারা সব্দ। বড় কবে দেখ'তা, চাষীদের দুঃখ-কু তাদের মন একটুও বিচলিত হতো! না: কর্ণপাতও তারা করতো না কাগোর কথায়

নল আমাদে। খুব ঞ্য়োজনীর খন্ড নানারকম জিনিস কং কর জণ্ত নীল খুব দরকার এখন আমরা যে নাল দেখতে পাই ত' রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরা হয়। আগে বৈজ্ঞানিক প্রথায় নীল রী হতো! না তাই নীলের চাষ করা হতো। অর এই নীল চাষ করাতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহেবরাই ! ভালো উর্বর জমি তার। বেছে নিতে। এই চাষের ক্ষন্য।

আমাদের দেশের গরীব চাষীদের তারা আগে থাকতে মোটা টাক! দিয়ে হাত করে ফেলতো।। অর্থের প্রলোভন এড়ানো সহজ নয়। যারাই নীলকর লাহেবরদ্দের এই টাকার জালে ধর! পড়তো, তাদের বাচবার আর কোনে! পথ থাকতে না। টাকা ফেরত দেবার

৪৮

ক্ষমত] তাদের কোনদিনই হবে না তাদের জমিতে তখন নীল চাষ করতে হতে! | ক্রমে ক্রমে নীলকর সাহেবের! চাষীদের নীল বুনতে বাধ্য করাতে তাদের আর ধান চাষ করতে দতো না।

ধান ন। বুনলে চাষীরা সারা বংসর খাবে কি? নীল চাষের লাভের টাকা তে। সাহেবদের পকেটে যাবে। কিন্তু চাষীদের কোনো কথাই শুনতে। না নীলকরবা দেনার দাষে চাষীরাও মাথ। তুলে প্রতিবাদ করতে পারতো না। চাষীর সব সময় শনুগ'ত না থাকল কাছারিতে টেনে নিয়ে গিয়ে বেত পন্ত মারতো।

প্রথম দিকে নীলকর সাহেবদের এই অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে সন্থ করেছিল চাষীরা মাত্র! ছাড়িয়ে গেলে বিপরীত ফলই হয়। চাঁষার। ক্রমে এই অন্যায়ের ৰিরুদ্ধে এক্যবদ্ধ হলে দীনবন্ধু মিত্র লিখলেন তার বিখ্যাত নাটক “নীলদপণ"। সাহিত্য সম্রাট বন্িমচন্দ্রও একজন নীলকর সাহেবকে সাজ! দিলেন দেশের শিক্ষিত লোকের চোখে ধরা পঙডলে। নীলকরদের এই অন্যয়*জুলুম |

চাষীদের এই নিদারুণ দুঃখের কথ। ক্রমে রাসমণির কানে এসে পৌহলো : রাসমদি কোনো কাজেই পিছু হটেন নি। তিনি ঠিক করলেন এর প্রাতকার করব্ন ভোনাল্ড সাহেবের ছুবাবহার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল তারই জমিদারী;ত বসে তার গ্রজ্গাদের চোখ রাঙ'বে। তিনি একদল দক্ষ সেপাইকে অন্ত্রশস্ত্রে সাজিয়ে মাকিমপুরে পাঠালেন। ডোনাল্ড মাহেবের সংগে মোকাবিল' করতে হবে।

খুব খানিক মারামারি হলো দাঙ্গা-হাঙ্গামায় উভয় দলেরই কিছু লোক জখম হলো রাণীর দলের সংগে পেরে উঠবে কেন ডোনান্ড সাহেব ! তার ভাড়া কর। গুণ্ডা গ! বাঁচিয়ে লড়েছিল। যুদ্ধে হার হলে। সাহেবের রানীর সিপাই সাহেবকে বুঝিয়ে এল, তার চেয়েও শক্তিশালী লোক তল্লাটে আছে নিরীহ গরীব চাষীকে ভয় দেখালেই বীর হওয়। যায় না।

কু, অপমানিত, লাঞ্ছিত সাহেব রাণীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী

৪৯ রাসমণি -৪

মামলা উপস্থিত করলেো।। তার দর্প রাণী গুড়িয়ে দিয়েছে মামলায় রাণীর হার সুনিশ্চিত, দেশের লোকও প্রমাদ গুনলো। |

কিন্তু ভাগাদেবী ধার ওপর প্রস্ম্না, তার হার হবে কেন? অত্যাচারী এই সাহেবের বিরুদ্ধে রাণীর অনেক ত্য প্রমাণ ছিল। অনেক সাক্ষী সাবুদ ভার হাতে মজুত রয়েছে। কেস সুরু হলে রাসমণি সেগুলো ঠিক ঠিক সময়ে আদালতে পেশ করলেন! ফলে মামলায় ডোনাল্ড সাহেবের চুড়ান্ত হার হলো

এই সময় সাহেবের সংগে দেশের লোকের মামলা হলে প্রায়ই সাহেবের জিত হতো! কিন্তু সতব্রতী রাসমণির বেলায় তার ব্যতিক্রম হলো তিনিই জয়লাভ করলেন। ডোনাল্ড সাহেবের এই পরাজয়ে নীলকর সাহেবেদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। এই ঘটনার পর আর কোনে নীলকর সাহেব রাসমণির জমিতে থেকে, তারই প্রজাদের ওপর অত্যাচার করতে কখনও সাহস

করেনি। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের হাত থেকে দেশীয় নিরীহ প্রজার! রক্ষ। পায়

লয়

মাঝে মাঝে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। রাসমণিরও কর্ম-প্রতিভার পাঁরবর্তন ঘটলে। ধর্মপ্রাণ রাসমণি এতদিন পরোক্ষ- ভাবে দেবসেবা করে এসেছেন এখন থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে ভগবত" সেবায় অত্বেনিয়োগ করলেন। সুরু হলে; তার জীবনের আর এক মহান ঈধায়।

অধ্যায়ের কাহিনী যেমন অপূর্ব, তেমনি গৌরবের যে জন্য রাসমণির স্মৃতি বাংলাদেশে বাঙালীর মনে চিরদিনের জন্য উজ্জল হয়ে আছে ত। ঘটেছিল এই পর্বে।

কলকাত। থেকে কয়েক মাইল দূরে গঙ্গাতীরের ওপর একটি মন্দির নির্মাণ করালেন তিনি। বামন হয়ে চাদে হাত! শুদ্রানী

৫০

হয়ে ব্রাহ্মণ আরাধিত দেবমন্দির স্থাপন করায় প্রচুর সমালোচনা আর সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় রাসমণিকে। সে যুগে হিন্দুসমাঞ্ডে ব্রাহ্মণের ছিল পূর্ণ আধিপত্য রাসমণি ধর্মবতী পুণাবতী মহিলা হলেও তি'ন ছিলেন নিয় জাতীয় শৃত্র। অশিক্ষায় কুসংস্কারে দেশের মানুষ তখন হীন থেকে হীনতর হয়ে চলেছে গোড়া চরমপন্থী ব্রা্মণর। তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন

প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে রাণী এক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরকে কেন্দ্র করে ধর্মের জয়যাত্রা সুরু হয়েছিল! এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই ভারতপাসীর বনু যুগ যুগান্তরের তপস্যা আর পুণ্যের ফলে শ্রীশ্রীরামকঞ্চদেবের আবির্ভাব

সব ধর্মই সত্য সর্ব ধর্ম সমন্বয় এবং পরম সহিষুণতার এই বাণী বিশ্বের দরবারে পৌছে দেবার ভার নিলেন রামকুষ্ণের মানস-সন্তান স্বামী বিবেকানন্দ সেই সঙ্গে তিনি প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি গৌরবের কথাও তুলে ধরলেন। জাতিভেদের ঘোরতর বিপক্ষে ছিলেন স্বামীজী। ধর্মের এই নবীন জয়যাত্রার অভ্যুর্থান সম্ভব হয়েছিল রাণীর জন্যই এই প্রগতিবাঁদের মর্মমূলে ঈাড়িয়ে রয়েছেন পুণ্যকীতি রাণী রাসমণি। রামকৃষ্ণদেবকে কেন্দ্র করে তার শি্তবর্ যে ধর্ম আন্দোলন বা জাগরণের স্ুচন। করলেন, তার অস্তস্থলে রয়েছেন মাতৃ ন্বরূপিণী এই নারী।

কথা অকপটে বলা যেতে পারে বে, যদি দক্ষিণেশ্বরের মন্দির তৈরী না হতো, তাহলে রামকৃষ্জদেবের আবির্ভাব হয়তো। ঘটতো। ন1। যদ্দি রামকৃষ্ণদেব অপ্রাশিত থাকতেন, তাহলে বিবেকানন্দের অভ্যুদয় ধর্ম প্রচারক হিসাবে হতো। না। বিবেকানন্দের আগমন না ঘটলে, পাশ্চাত্যে ভারতের বাণী বহনও সম্ভব হতো না।

১২৫৫ বঙ্গাবে রাণী রাসমণির প্রবল ইচ্ছ। হলে! কাশীতে যাবার কাশী হিন্দুদের পরম পবিত্র তীর্থস্থান ভারতের পুণ্য সংস্কৃতির ধারক এই কাশীধাম। কাশীর মণিকনিকার গঙ্গায় সঙ্ঞানে দেহত্যাগ

৫১

করলে মহাদেব স্বয়ং নাকি তাকে মোক্ষধামে নিয়ে যান। ত্বর্গলোকে পৌছতে পারেন তিনি। শিব-মাহাত্ব্য ছড়িয়ে আছে বারাণসীর প্রতি ধূলিকণায়। এখানকার কল-কল্লে!লিনী গঙ্গাও যেন অবিরাম শিব-সঙ্গীত গেয়ে চলেছে

বিশ্বনাথ অন্নপূর্ণা দর্শন এবং তাদের পৃজে! নিবেদনের জন্তে রাসমণির অস্তর ব্যাকুল হয়ে উঠল। রাণীর যখন একবার ইচ্ছে হয়েছে-তখন সেই মতো বাবস্থ। হতে লাগল রাণীর সঙ্গে যাবে দাঁসদাসী আত্মীয়স্বজন, তার দেহরক্ষীর দল! দেখতে দেখতে একশটা। ছোটেবড় নৌকো। এসে জড়ো হলে গঙ্গার ঘাটে এত লোকের আহার-সামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, জি/নসপত্র, পুজোর অজত্র উপকরণ থরে থরে সাঙ্জা/না হলে]

ক'দিন ধরে কাজের খুব ভোড়জোড় চললে।। সমস্ত আয়োক্গন শেষ হলো পরের দিন যাত্র। সুরু হবে। রাঁসমণি শাস্তমনে রাত্রে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। ঘুমের মধো তিনি অদ্ভুত এক ন্বপ্প দেখলেন দেখলেন, জগজ্জননী মঙাকালী তার অপুৰ দেবীরূপ নিয়ে রাসমণির সামনে এসে দাড়ালেন দৈববাণী শুনলেন তিনি দেবী তাঁকে বললেন'-তোর আর কাশী যাবার প্রয়োজন নেই পুণ্য- সলিল ভাগীরঘীর তীরে কোনো এক জায়গায় আমার মৃতি প্রতিষ্ঠা কর। ঘুমের ঘোরে রাসমণি এই দেবী দর্শনে ধন্য হলেন

চমকে ঘুম ভেঙে খেল রাণী রাসমণির

কী স্বপ্ন দেখলেন তিনি ! |

একটু পরেই তো? প্রভাত হবে। তার কাশী যাত্রা সুরু হবে। সব কিছু সম্পুর্ণ প্রস্তুত হয়ে আছে কেবল তার হুকুমের অপেক্ষায় রয়েছে, এখন কি করবেন তিনি ?

এত প্রস্তরতির পর কি করে বন্ধ করবেন তিনি এই যাত্রা ? সকলের আশা আনন্দ তিনি নষ্ট করবেন কি করে? অন্য এক চিন্তায় আবার তার মন ছলে ওঠে ন্বয়ং দেবী আদেশ করেছেন।

আদেশ লঙ্ঘন কর। উচিত নয়। রুষ্ট হবেন দেবী। জগজ্জননীর ইচ্ছ। কি বিফল হতে পারে?

ক্রমে দিনের আলে। বাড়তে লাগল রাণীর যাবার কোনে তাড়া নেই। ক্রমে মনস্থির করলেন তিনি মহাকালী মহামায়ার ইচ্ছারই জয় হোক। রাণী ।,ঘোষণ। করলেন, কাশী আর তিনি যাবেন না। তার স্বপ্নকেই তিনি সত্য করে তুলবেন।

তীর্থের জন্য থরে থরে সাজানে। হয়েছিল দ্রব্য সামগ্রী রাসমণি বললেন, দরিদ্র আর ব্রাহ্মণদের মধো এই সমস্ত বিতরণ করে দাও নিজের ব্যবহারে এসব দ্রব্য আর লাগাবেন না আদেশ পালিত হলো।

দেবতার পূজার জন্য তিনি যথেষ্ট টাকা আলাদা করে রেখেছিলেন সেই টাকার অঙ্ক কম ছিল না। দেবসেবায় ব্যবহণার করার জন্য সেই টাক। রাসমণি জামাই মথুরনাথের হাতে তুলে দিলেন। এই টাকা দিয়ে দেবীর ইচ্ছামতো। গঙ্গীতীরেই এক খণ্ড উপ্যুক্ত জমি কিনতে হবে। তারপর সেই জমিতে দেবীর জন্ত একটি সুচারু মন্দির নিমিত হবে।

জমির সন্ধানে চারিদিকে লোক পাঠালেন মথুরনাথ। গঙ্গার এপারে ওপারে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মনের মতে! এক খণ্ড জমি আর কিছুতেই পাওয়। যায় না। জমির খোঁজ আসে, কিন্ত তা কেন আর হচ্ছে না। যেজমি রাসমণি মথুরনাথের পছন্দ হয়, জমির মালিক সে জমি বিক্রী করতে রাজী হন না। আবার কোনো জমি তার মালিক হয়তো। বিক্রী করবার জন্য ব্যস্ত, কিন্তু রাসমণি বা মথুরনাথের তা উপযুক্ত বলে মনে হয় না

কিন্তু হাল ছাড়লেন না তিনি অনুসন্ধান চললো, অবশেষে এক খণ্ড জমি মিললে। দক্ষিণেশ্বরে হেস্টিং সাহেবের ষাট বিঘের একটি পছন্দ সই জমি আছে। খবরটা কানে আসতেই মথুরনাথ খবরটা এনে দিলেন রাসমণিকে হেষ্টিং সাহেব ছিলেন কলকাতা! হাইকোর্টের এটা |

৫৩

১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে হেগ্টিং সাহেবের কাছ থেকে পঞ্চানন হাজার টাক দিয়ে রাসমণি জমিটি কিনে নিলেন। ভাগীরথীর তীরে যেমন জমি তিনি খুঁজছিলেন, এখন সেই রকম জমিই পেয়ে গেলেন। জমিটি খুব পছন্দ হয়েছে রাণীর, পশ্চিম দিকে বয়ে চলেছে দীর্ঘ প্রসারিতা আনন্দময়ী গঞ্জ স্থান্টির উত্তরে সরকারী বারুদখানা, দক্ষিণে কলকাতা

জমি কেনা হলো এবার তিনি সাড়! জাগিয়ে মন্দির নির্মাণে হাত দিলেন মন্দিরের নক্সা, পরিকল্পনা আরম্বরের সঙ্গেই শেষ হলো। ধিলেতি কোম্পানী মেকিটস এই কাজের ভার নিলে। এদের ওপর কাজের ভার দিয়ে রাসমণি অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন বিদেশী কোম্পানী হলেও মেকিণ্টস ছিল খুব বৃহৎ বিশ্বাসী

দেখতে দেখতে মন্দির নিমাণ সুরু হয়ে গেল দীর্ঘ আট বছরে অনেক শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে নিমিত হলে? এই মন্দির মনোরম গঙ্গাতীরে অপূর্ব শোভায় প্রতিষ্ঠিত হলো কালী মন্দির তারই পাশে রাধাকৃষ্ণের মন্দির, দ্বাদশ শিব মন্দির নবরত্ব চূড়া

এরই মধ্যে রাসমণি উপযুক্ত ভাক্করকে দিয়ে নিখুত, নিপুন দেবী- মৃতি তৈরী করিয়েছেন। অপুর্ব সুন্দর হয়েছে কালী মুতি। কিন্তু দেবী মৃতি প্রতিষ্ঠার এখনও যথেষ্ট দেরী আছে। কাছাকাছি মন্দির প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত শুভ দিন নেই।

রাসমণি এখন কি করবেন ?

দেব সেবার সমস্ত কাজই তার সম্পূর্ণ। শুভদিন না হলে শুভ মহরত তো হতে পারে না। তাকে অপেক্ষা করতেই হবে দেবীর যাতে কোনরূপ অঙ্গহানি ন। হয়ঃ সেই জন্য মুত্তি তিনি বাক্সে ভরে রাখলেন। তাল। মেরে মুখ বন্ধা করে রাখলেন বাক্সে। কিছুকাল পরে একদিন তত্বাবধান করতে গিয়ে দেখলেন, আশ্চর্য ! দেবীর পাষাণ মুতি ঘেমে উঠেছে

€৪

অশুভ লক্ষণের আশঙ্কায় রাণীর মন চিস্তায় ভরে উঠলো ধর্মপ্রাণ মহিলা তিনি। কোন খু'ত তিনি চান ন|।

শীঘ্রই রাসমণি একট! স্বপ্ন দেখলেন, দেবী তাঁর সম্মুখে এসে াড়িয়ছে। দেবী যেন তাকে বলছেন, আমাকে আর কতদিন এভাবে বন্ধ করে রাখবি। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে প্রতিষ্ঠা কর। এবার রাসমণি খুব তৎপর হয়ে উঠলেন দেবীর নির্দেশ আর এক মুহুর্ত সময়ও নষ্ট করতে চাইলেন না৷ তিনি।

তিনি উঠে পড়ে লাগলেন মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজে। অনেক বিধিবিধান ঘে'টে ঠিক হলো ১৮৫৫ গ্রীষ্টাব্দের ও: শে মে, বৃহস্পতিবার, বাংলা ১২৬১ সালের ১৮ই জ্যেষ্ঠ সে দিনটি ছিল স্সানযাত্রার পবিত্র তিথি।

রাসমণি মধীর আগ্রহে শুভ দিনের প্রতীদ] করতে লাগলেন যে দিক সম্বন্ধে তিনি কোনরকম ভাবেন নি বা কোনরকম বাধা আশা! করেন লি; সেইদ্দিক থেছে অভাবিত অপ্রত্যাশিত বাধা এসে ভেঙে চুরমার করে দিতে চাইল ঠার এতদিনের স্বপ্নকে, এত বছরের সাধনাকে ত্রাঙ্গণরা একজোট হয়ে বিরোধিতা] সুরু করলেন। এই পর্বত প্রমাণ বাধা সরাবার জছ্য যুদ্ধক্ষোত্র নামলেন রাসমণি। দেবী মৃতি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের সঙ্গে শুরু হলো তার এক আশ্চর্য সংগ্রাম। অআীবনের কোনে। ক্ষেত্রে যিনি পরাজয় বরণ করেন নি, তিনি এবারও এই দ্বন্দে জয়লাভ করলেন। সকলের সংগে সংগ্রাম করে বিজ্রয়ী হয়েছেন বাংলার বিজয়িনী কন্তা। রানী রাসমণি।

রাসমণি বাংলাদেশের দ্রিকে দিকে আমন্ত্রণের চিঠি পাঠিয়েছিলেন | বিদ্বান, ভক্ত, সঙ্জন সকল স্তরের ব্রাঙ্মণদের তিনি নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু সব আমন্ত্রণ লিপি ফিরে এল রাণীর সাদর আহ্বান ত্রাঙ্গণেরা প্রত্যাখ্যান করলেন। স্পষ্ট করেই তারা জানিয়ে দিলেন, রাসমণির পৃজো৷ এবং উৎসবে তারা যোগ দেবেন না।

৫৫

রাসমণির মাথায় আকাশ ডে গড়লো। কেন সকলের এই সিদ্ধান্ত সমস্ত উদ্দীপনা উৎপাহ নিয়ে আগত সেই ন্নানযাত্রার দিনটির দিকে চেয়ে আছেন। পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সম্ভার সংগ্রহ হয়ে গেছে। সকলই তিনি ত্বার সাধ্যমত জোগাড় করেছেন। অপধাপ্ত খরচ, অপধাপ্ত বস্ত-সন্তার |

কাক্সের ভিড়ে বাসমণির কথা একদম মনে হয়নি, যে তার প্রতিষিত মন্দিরে কোনো উঁচু বংশের ব্রাহ্মণই পুক্ারীর পদ নেবেন না-যদিও বা পূজোর ব্যবস্থা কোনরকমে হয়, কিন্তু অনভোগ ? কখনই কোনো! ব্রাহ্মণ কাক্তে স্বীকৃত হবেন না। তিনি জাতে নীচু। তখনকার 'দনে ছিল- উচু জাত, নীচু জাতের ভারি কড়াকড়ি বিচার

দেবীকে অন্ভোগ নিবেদন করাই রাসমণির অনেক 1দনের ইচ্ছা। ব্রাঙ্দণেরা একজোট হয়ে তার সেই ইচ্ছাকে ধুলোয় লুটিয়ে দেবেন। রাসমণি কিন্ত হার মানলেন ন।।

তিনি আবার বাংলাদেশের এবং বাংলার বাইরের নামজাদ। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের কাছে ব্যাকুলভাবে মতামত চেয়ে পাঠালেন যদি কেউ কোনো বিধান দিতে পারেন, যাতে তার মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্ত এবারেও তার কাতর প্রার্থন। ব্যর্থ হলো কেউই এমন কোনো পথের সন্ধান দিতে পারলেন না, যে পথে গেলে জাতের বাধা! কাটিয়ে রাসমণির মন্দির প্রতিষ্ঠা সফল হয়ে উঠতে পারে বোধহয় ব্যথই হলে তার এতদিনের ন্বপ্প আর সাধনা নতুন করে অন্য কোন বুদ্ধি আর আসছে ন! রাসমণির।

রাসমণির এই অপরিসীম ছুঃখের দিনে হঠাৎ একট আশার বাণী শুনতে পেলেন যেন। গশীর হতাশায় তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে একটা আলোর রশ্মি দেখতে পেলেন যেন রাসমণির কাছে এই আশ্বাসের বাণী বয়ে নিয়ে এলেন কামারপুকুরের এক চতৃষ্পাঠীর অধ্যাপক, শ্রীরামকুমার চট্টোপাধ্যায়

৫৬

সুপগ্ডিত রামকুমার রাসমণিকে একট? পত্র লিখেছিলেন পত্রে তিনি সবিস্তারে সব কথা জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠার আগে রাণী রাসমণি যদি কোনো ব্রাহ্মণকে দান করেন এবং সব রকম খরচের জন্য যদি উপযুক্ত পরিমাণ টাকার সম্পন্ভিও ওই ব্রাহ্মণের হাতে তুলে দেন তাহলে মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজে আর কোনো বাঁধা থাকবে না'। ওই ব্রাহ্মণই তখন মন্দির গতিষ্ঠী করবেন এবং দেবতাকে অন্নভোগ দেবেন কোনো ত্রাহ্মণেরই আর অন্ন গ্রসাঁদ গ্রহণ করতে শাস্ত্রের নিষেধ থাকবে না।

অল্পখ্যাত এই ব্রাহ্মণের প্রস্তাবে সংগে সংগে রাসমণি রাক্ছী হয়ে যান। তিনি ডেকে পাঠান বামকুমারকে অতি শ্বশ্ঠই যেন তিনি দেখ। করেন বামতৃমার ছোটো! ভাই গদাধরকে সঙ্গে নিয়ে এলেন

এই গদাধরকেই আমবা পরবতী জীবনে রামকৃষঞ্জদেবরূপে পেয়েছি বন্ড "পাই বামকুমার রাসমণির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বিগ্রহে জীবন দান করলেন ছোট ভাই বামকৃষ্ণুদব মানব হৃদয়ের অন্তরস্থলে প্রতিঠিত করলেন এই বিগ্রহকে

শান্ের বাধা কাটলেও সমস্তা কিন্তু দূর হলো না। রাসমণি মন্দির আর মান্দরের লাগোয়া সমস্ত জমি নিজের কুলগুরুর নামে দানপত্র করে দিয়েছিলেন রামকুমারের বিধান খুব পছন্দ হয়েছিল রাসমণির। পণ্তিত রামকুমারের এই নতুন বিধানে যেমন সাহসের পরিচয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে উদার মনের পরিচয় | অন্য ব্রাহ্মণের! তাদের পুরানো সংস্কার কাটিয়ে কিছাতিই এই স্বাধীন মতটিকে সম্পূর্ণভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না! শৃদ্র জাতীয়! রাসমণির ঠাকুর বাড়িতে অনগ্রহণ করলে লোকে বলবে কি? লোকাচারের ভয় মন থেকে সুছতে পারছিলেন না।

মন্দিরের পূজোর ভার নেবার মতো৷ সদাচারা, উপযুক্ত ব্রান্মণেরও দেখ। মিললে! না মনের স"শয় কাটছে না! কিছুতেই। রাসমবণির

৫৭

এই ছদিনে একজন ব্র।ক্ষণ কর্মচারী এশিয়ে এলেন। তিনি রাণীর জমিদারী সেরেস্তায় কাজ করেন নাম মহেশচক্দ্র চট্টোপাধ্যায় তিনি অনেক কষ্টে বড় ভাই ক্ষেত্রনাথকে পূজোর ভার নিতে রাজী করালেন। মন্দিরের বিঞু পূজোর ভার নিলেন তিনি সমস্যা হয়তো! এবার কেটে যাবে। মহেশচন্দ্র ভেবেছিলেন--নতুন পথে প্রথাম কেউ এগোতে চায় ন: সত্যি কিন্তু কেউ যদি সাহস করে এগিয়ে মাসে, তখন তাকে অন্থপরণ করবার লোকের অভাব হুবে ন।। কিন্তু বার্থ হলো সেই ধারণা। ক্ষেত্রনাথ বিষুপুজোর ভার

নিলেন, কিন্তু কালীপৃুজোর তার নিতে কোনো! ব্রাক্মণই এগিয়ে এলেন না।

কিকরাযায়?

এদ্রিকে মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন 'এগিয়ে আসছে হাতে মাত্র আব ক'দিন সময়। “ই অস্তহীন বাধা কি শেষ হনে না তার?

মহেশচন্দ্র খুব তৎপর হয়ে ওঠেন। রামকুনারের সংগে তার অনেকদিনের পরিচয় রাসমণির কাছ থেকে একটা চিঠি নিয়ে চললেন তিনি রামকুমারের সংগে দেখা করতে নিরুপায় রাসমণি ছিঠিতে কাতর অম্ভুরোধ করলেন রামকুমারকেই মন্দিরের ভার নিতে হবে. তাহলেই রাণী এক ভীষণ দায় থেকে উদ্ধার হবেন

চিঠি নিয়ে এসে উপস্থিঘ হলেন মহেশচন্দ্র। কিন্তু মনে তার দারুণ সংকোচ রামকুমার এই দাহিত্ নেবেন তো | যেমন কারই হোক রামকুমারকে রাজী করাতেই হবে। তা না পারলে মুখ থাঁকবে ন! ভার রাণীর"কাছে।

রামমণির চিঠি পড়লেন রামকুমার। মহেশচন্দ্র তাকে বুঝিয়ে বলঙগেন, একমাত্র তিনিই এই বিপদ থেকে রাণীমকে উদ্ধার করতে পীরন। রাসমণির সমস্ত আয়োজন কি এভাবে পণ্ড হয়ে যাবে? কোনে। ব্রাঙ্মণই কাজে অংশ গ্রহণ করতে রাজী নয়।

রামকুমার নিজেই একদিন বিধান দিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি

৫৮

রাসমণির অন্ধুরোধ ফেলবেন কি করে? তিনি বললেন, মন্দিরের স্থায়ী পৃ্জকের পদ তিনি নিতে পারবেন না অন্ুবিধা আছে তার। তরে রাসমণির মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করলেন মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য রাণীকে আর ছুশ্চিন্তা করতে হবে না' তিনি নিশ্চিন্তে পূজোর আয়োজন করতে পারেন

সুখবর নিয়ে দ্রুত ছুটলেন মহেশচন্দ্র। তারও কম আনন্দ নয়। মনের আকাশে যে অন্ধকার জমেছিল, দমক। হাওয়ায় উড়ে গেল তা। সোনালী সূর্য কিরণে হেসে উঠলে। চারদিক। রাসমণি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। আনন্দের জোয়ার বইল চারদিকে

এসে গেল সেই জ্যৈষ্ঠের শুভদিন। দক্ষিণেশ্বরের ইতিহাসের সেই বিখ্যাত ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১২৬২ সাল। নানযাত্রার পুণ্য তিথি। অঙংখ্য নরনারীর জয়ধ্বনি এবং সারাদিন ধরে পৃজে।, হোম, পাঠ, কীর্তন, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি কাজ চললো।। অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ! রাণী রাসমণি মেতে উঠলেন দানে সোনা, রূপ।, টাকা-কড়ি কাপড়-চোপড়, গোধন কত জিনিস ন। দান করছেন তিনি তার দ্রান, ভক্তি, সেবা-সমাদরের অতুলনীয় পরিচয় পেয়ে সকলে ধন্য ধ্থা করতে লাগল দেবালয় নিমাণ এই প্রতিষ্ঠার কাজে রাসমণির নয় লক্ষ টাক। ব্যয় হয়েছিল।

মন্দির প্রতিষ্ঠা শেষ হলো কত বাধার পর আজ ত৷ পূর্ণ হলেো৷। রাসমণির বুক থেকেও পাষাণ ভার নামলে! এই আনন্দের মধ্যে রাসমণি কিন্তু ভার দায়িত্বের কথ। ভোঁলেন নি। মন্দিরের সেবা যাতে চিরকাল চলতে পারে তার জন্য কুলগুরুকে উপযুক্ত পরিমাণ সম্পত্তি দান করতে হবে।

৫৯

দগা॥

অল্পদিনের মধ্যেই ছুলক্ষ ছাবিবশ হাঁজার টাক নিয়ে ভ্রেলোক্য নাথ ঠাকুরের কাছ থেকে দিনাজপুরের জমিদারী কিনলেন রাসমণি। এই বিপুল সম্পণ্থি তিনি মন্দিরের জন্য দানপত্র লিখে দিলেন। আয় একটি তীর্থভূমি প্রতিষিত হলে! বাংলায়।

বাংলার নবদ্বীপ, বিষুপুর-ত্রিবেনী গ্রভৃতি বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে কত তীর্থ কত দেবায়তন। এদেরই সংগে উনিশ শতকে যুক্ত হলে। এই নবীন তীর্থক্ষেত্র ন্বচ্ছ সলিল শ্রোতন্থিনী গঙ্গার ধারেই এই কালীমন্দির। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র আড়াই ক্রোশ।

প্রতিশ্রুতি মতে৷ রামকুমার কিন্তু মন্দির প্রতিষ্ঠার পর চলে যান নি। তিনি ঝামাপুকুর ফিরলেন না। কারণ তিনি তে। মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন উপস্থিত ছিলেন এখানে বিরাট কর্মকাণ্ড দেখেছেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে

দাদার এই মন্দির প্রতিষ্ঠায় গদাধরের কোনো মত ছিল না| মনে মনে বরং তিনি অসন্তঃ্ হয়েছিলেন দাদার ওপর। প্রথম জীবনে গদাধর একটু সংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন। উচ্চকুলের ব্রাহ্মণ ছিলেন তারা তাদের ছিল কুলমর্ষাদ!-জ্ঞ।ন। তাই কোনদিন তিনি কারোর দান গ্রহণ করেননি কোনে শুদ্রের বাড়িও গুজে করেননি

দক্ষিণেশ্বরে উপস্থিত থাকলেও গদাধর কোনা জিনিস গ্রহণ করেন নি। হাত দিয়ে স্পর্শ করেননি পর্যন্ত অনেক বেলায় যখন বেশ ক্ষিদে পেয়েছে, তখন মন্দিরের বাইরে এসে এক পয়সার মুড়ি কিনে খেলেন। দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন অনেকক্ষণ। বেল। পড়ে এলে দাদার জন্য আর অপেক্ষা না করে ঝামাপুকুরের বাড়িতে একাই চলে 'আসেন।

দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পরিবেশটি তাঁর কিন্তু খুব ভালো! লেগেছিল। কুলকুল ছন্দে বয়ে চলে ভাগীরী। ছন্দের বিরাম নেই--শেষ নেই এখানেই গঙ্গার তীর থেকে পূর্বদিকে উঠে গেছে কালীমন্দিরের সি'ড়ি। পূর্বমুখী হয়ে দর্শনার্থীদের মা'র মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে। পিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার পর তীর্থযাত্রীদ্রে সুন্দর বসবার ব্যবস্থাও কর! হয়েছে এই াদনী রাসমনির বিখ্যাত, দ্বাদশ শিব মন্দিরের মাঝখানে! এরও উত্তরে ছয়টি এরং দক্ষিণে ছয়টি শিবমন্দির বিরাজমান! এই বারোটি শিব মুতির পৃথক পৃণক নামাকরণও কর! হয়েছে দক্ষিণ থেকে পর' পর মুতিগুলির নাম যজ্ধেশ্বর, জণলশ্বর, জগদীশ্বর, নাদেশ্বরঃ নদীশ্বর, নরেশ্বর, যোগেশ্বর, জটিলেশ্বর, অকুগেশ্বর, নাগেশ্বর নির্জড়েশ্বর |

টার্দনী দ্বাদশ শিব মন্দির পার হইলেই পূর্বদিকে বিশাল বাধানে। এই আঙ্গিনার শেষে শিবমন্দিরের উপ্টোদিকে পুর্ব প্রান্তে রয়েছে ,হেই মন্দির, একটি রাধাকান্তের, অন্যটি জগজ্জননী মহাকালীর।

এই ছুই মন্দিরের মধ্যে প্রথন হচ্ছে রাঁধাক'স্তের মন্দির পীতবাস পরিহিত, মালা-শোভিত, মোহন বংশীধারী, রাসবিহরী ত্রজের গোপাল বাঁমে শ্রীমতীকে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন নন্দর নন্দন শ্রীরাধাকৃ্ণ বিগ্রহের মুখ পশ্চিমদ্িকে ফেরানো উঠান থেক উঠ এমেছে এই মন্দিরে ওঠার বাধানো লিড়ি। মন্দিরের মেঝে মঙ্গর পাথরে গড্খ।

রাধাকান্তের মন্দিরের পরেই দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির মন্দিরে স্থন্দর পাঁষাণময়ী কালীপ্রতিম। এই কালীমন্দিরের চূড়া নবরত্ব মণ্ডিত। নীচে চারিটি চূড়া তার ওপরে মধ্যের থাকে আরো চারটি এবং সব চেয়ে ওপরে মধ্যবতাঁ একটি কেন্দ্রীয় চুড়াও বলা যেতে পারে।

কালীমন্দিরের সামনে নাটমন্দির। প্রসারিত নাটমন্ৰিরের,

৬৩১

ছ"দিকে উচু স্তর! তার ওপর ছাদ। ছাড়াও দক্ষিণেশ্বরের প্রসারিত পুণ্পোগ্ভানে মনোরম ফুলের প্রাচুর্য। দেবসেবার জন্য কত ফুলই ন। ফোটে বুমকে। জবা, গোলাপ, কাঞ্চনফুল, অপরাজিতা, ধূই, শিউলী। দেবী পুক্জার ফুলের কত সমাগম।

উৎনবের কোলাহল শাস্ত হলে রাসমণি রামকুমারকে একাস্ত- ভাবে ধরে বসলেন। এই পূজোর ভার তাকেই নিতে হবে। কিন্তু পর পর ক'দিন পুজো করলেও বরাবরের জন্য পুজোর ভার নিতে স্বীকৃত হলেন না তিনি। রামকুমার দ্বিধা করছেন দেখে রাসমণি বললেন অন্ততঃ যতদিন প্রকৃত পুজারী না পাওয়া যায়, ততদিন তাকেই পুর্জো চালিয়ে যেতে হবে। পুজো তো বন্ধ থাকতে পারে না।

রামকুমার কি করেন?

তিনি হিন্দু ব্রা্ষণ। অবস্থায় তিনি চলে আসতে পারেন ন'। তাই তাকে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরেই থেকে যেতে হলো সাময়িকভাবে পুজোর দায়িত্ব ঘাড়ে নিলেন রামকুমার তৎক্ষণাৎ আর তার ফের! হলে! ন।।

বড় ভাইকে খুঁজতে এখানে এসে পৌছোলেন তরুণ গদাধর। মন্দিরে ছু'ভাইয়ে দেখা হলো।। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দাদাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এসেছেন গদাধর। এই পৃজোয় প্রধান অংশ নেওয়ায় তাদের কুলমর্ষাদায় হানি হচ্ছে। তাদের বংশের অপমান হচ্ছে। এই মন্দিরের পূজোর ভার এক্ষুণি ছেড়ে দেওয়া! উচিত।

ছু' ভাইয়ে মহা তর্ক সুরু করলেন। ছোটে! ভাইয়ের কথা শেষ হলে বড় ভাই তখন তাঁকে বোঝাতে সুর করেন। তার কাজে কোনে! প্রকারেই বংশের মর্ষাদা লাঘব হচ্ছে না, কারণ এই কাজ সম্পূর্ণ শান্ত্রসম্মত। গদাধর কিন্তু দাদার যুক্তি মানতে রাজী নয়। তখন মীমাংসার জন্য মধ্যম পন্থ। অবলম্বন করা হলে ! ঠিক হলো ধধর্মপত্র পরীক্ষা” করে স্থির করা হবে, কার মত গ্রহণযোগ্য হবে।

'ধর্মপত্র পরীক্ষা” ব্যাপারটা প্রাচীন দৈব বিশ্বাসের জ্বলন্ত প্রমাণ। যখন কোনো বিষয়ের ওপর যুক্তিতর্কের দ্বারা মীমাংসায় পৌছানে! সম্ভব হয় না, তখন দৈবের ওপর নির্ভর করে জানতে হয় এব্যাপারে দেবতার ইচ্ছা কি? কয়েকটি ছোটোখাটো টুকরো কাগজে বা বিল্বপত্রে “হী” বা না” লিখে পাত্রের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। তারপর কোনে। শিশুকে ওই পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটুকরো কাগজ তুলতে বলা হয়। শিশু 'হা' লেখা কাগ্জ তুললে বুঝতে হবে বিষয়ে দেবতার সম্মতি আছে। আর “ন।, লেখ। কাগজ তুললে বুঝতে হবে, দেবতার সম্মতি নেই।

দৈবের রায় কিন্তু রামকুমারের পক্ষেই গেল ভগবানে বিশ্বাসী গদাধরের ভূল ভাঙলে। বোধহয় তিনি আর আপত্তি করলেন ন|। তখন চল গেলেও কিছুদিন বাদে তাকে ব্ড ভাইএর কাছেই দক্ষিণেশ্বরে চলে আসতে হলো

কিস্তু বড় ভাই-এর কাজ্জে মন থেকে কিছুতেই সাড়া পাচ্ছেন ন। গদাধর, এতর্দিনকার সংস্কার এত চট করে মন থেকে মুছে ফেলবেন কি করে? মন্দির প্রাণে থাকলেও মন্দিরের ঝোনো কিছু এমন ক্রি প্রসাদ পরধন্ত গ্রহণ করতে ইচ্ছক নন। তখন রামকুমার গঙ্গার তীরে ভাই-এর জন্য রান্নার ব্যবস্থা করলেন পতিত পাবনী গঙ্ত!। গঙ্গার পুণ্যস্পর্শে কোনো কিছু অশুচি থাকে না। ভালো-মন্দের দ্বন্ব মেশানো একটি সবুজ মন নিয়ে তরুণ গদাধর এসেছিলেন দক্ষিণেশ্বরে পদ্মের ছোট কুঁড়িটি হয়ে তিনি এসেছিলেন এখানে দারুণ সমস্যার মধ্যে দোল! খেলেন কিছুদিন। দাদার মত ঠিক, ন! পিতা-পিতামহের আদর্শ ঠিক__পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় ছিলেন গোড়া। ব্রাক্গণ। এই ছুটি মতকে চট করে এক করে নিতে পারেননি গদাধর। |

কিন্ত মত পরিবর্তন হলো ভার দক্ষিণেশ্বরের রমণীয় পরিবেশ, প্রাণময়ী প্রতিমা, নহবংখানার মনমাতানে। ঝংকার। পঞ্চবটার

৬৩

মৌন সম্ভাষণ সব মিলিয়ে একাস্তভাবে পরম পবিত্রতার মধ্যে ঢুকে গিয়ে হারিয়ে গেলেন গদাধর। আস্তে আস্তে বদলে গেলেন বিদ্রোহী অভিমানী গদাধর। কোনে মিথ্যা অভিমানের আর ধার ধারলেন না

দরক্ষিণেশ্বরের মন্দির প্রতিষ্ঠার পর, রাসমণির জীবনের প্রধান ঘটনাবলী এই মন্দিরকে কেন্দ্র কবেই স্থতি হয়েছে ধর্ম ব্যাপারে রাণী রাসমণির কোনে গৌড়ামি ছিল না। সংসারের সাধারণ লোক মনে করে তার ধর্মটাই সত্য,--মহৎ আর অন্য সব ধর্স মিথ্যা রাণী রাসমণির কিন্তু ধারণ! ছিল ন1। রঘুনাথ্জী ছিলেন তার গৃহদেবত। | কিন্তু যেদিন তিনি স্বপ্ে মগাকালীর আদেশ পেলেন, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সেদিন থেকেই ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।

অ'মাদের দেশে শক্তি সাধনায় খুব প্রবল শবরূগী শিবের বুকে প। তুলে দিয়ে লজ্জায় জিহ্বা প্রসারিত করে ছাড়িয়ে রয়েছেন মহ্াকালী ধ্বংসলীলায় মেতে স্বামীর বুকেই পা তুলে দিয়েছেন লম্বা চুল তার সার পিঠে ছড়িয়ে পড়েছে গলা নর মুণ্মালা, হাতে রয়ছে ধারালে। খাঁড়া দীপ্ত চোখের বিছ্যতৎ্ময়ী চাহনী : শিহরণ আনে দেহ-মনে শক্রর কাছে তদবী ভীষণা, প্রলয়-রূপিণী | কিন্তু ভক্তের কাছে তিনি মা। তক্তকে সর্দাই রক্ষা করেন। তাই তার একহাতে খড়গ থাবলেও অন্য হাতে বরাভয়।

দক্ষণেশ্বরে মহাকালীর মূতির মধ্যদিয়ে মাতৃপুর্জার উদ্বোধন করলেন রাণী রানমণি। মা--যি'ন অস্থুর দমন করেন অকল্যাণ নাশ করেন। ভক্তের ব৷ সন্তানের তিনি সর্বদ। মঙ্জল কামন। করেন ! এছাড়াও দক্ষিণেশ্বরে দ্বাদশ শিবমন্দিরে শিব পুজোরও সুচনা হলো কালী-কৃষ্ণ-শিব এই তিন দেবতার সমন্বয় ঘটলো। মন্দিরে

জমিদারীর বছ কাজেই রাসমণির নিজ্বের সই করা শীলমোহর ব্যবহার হতো। পরে এই শীলমোহর নতুন করে তৈরী করলেন

৬৪

এই নতুন শীলমোহরে খোদাই করা হলো--“কালীপদ অভিলাবিণী রাণী রাসমণি*--এই কথা কয়টি

সব ধর্মই সমান। সব ধর্মকেই শ্রদ্ধা করা উচিত। সকল ধর্মে সত্য, সর্ব ধর্ম মিলনের এই বীজটি প্রথম অন্কুরিত হলে। দক্ষিণেশ্বরের এই ঠাকুর বাড়িতে

বাংলা দেশের সকল ধামিক, সঙ্জন ব্যক্তিই এখানে প্রণাম নিবেদন করে গেলেন। সকলেই পরিচিত .হলেন দক্ষিণেশ্বরের এই মন্দিরের সঙ্গে, জ্বলস্ত ভগবৎ বিশ্বাস আর ঈশ্বরবোধে সব মানুষের সেবা, এই ছুই প্রান্তের মধ্যে যোগসুত্র রচন। করে মূর্ত হয়ে উঠলেন শ্রীরামকৃষ্চ পরমহংসদেব। ক্রমে পরমহংসদেবের সাধনায় ধর্মবিশ্বাসটি আরে প্রসারিত হলো ছোটো! অঙ্কুর শিশুবৃক্ষে রূপ নিল।

মন্দির প্রতিষ্ঠার পর রাসমণির জ্রীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটন! হলো শ্রীরামকৃষ্ণকে আপন মন্দিরের সীমানার মধ্যে পাওয়া এইখানেই নুরু হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের প্রবল আবেগময়ী সাধনা শ্রীভগবানকে একাস্ত সত্য বলে অনুভব করা, যেমন সত্য বলে মনে হয় নিজের শরীর কিংবা আশেপাশে দেখা বা ধরে থাকা নানা মানুষ, নানা দ্রব্যসম্তারকে অগজ্জননী মহাকালীকে লোকে এই জগতের স্যষ্টি আর ধ্বংসের দেবী জেনে দূর থেকে তাকে ভয়ে প্রণাম ছ্রানায়। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ বারবার তাকে অনুভব করেছেন, আমাদের মাটির পৃথিবীর নেহময়ী জননী বলে।

রাকুষ্ণদেব একদিন রাসমণিকে বলেছিলেন-_জমিটি কালীমন্দিরের পক্ষে উপযুক্ত হয়েছে কারণ দক্ষিণেশ্বরের এই স্থানটি ছিল কৃর্মপুষ্ঠ তুল্য বা কচ্ছপের পিঠের মতন, আর পাশে ছিল মুসলমানদের কবর গাজী সাহেবের পীরের দরগা শ্াশানের পাশে কচ্ছপের পিঠের মতে? জায়গাতেই নাঁকি শক্তি সাধনা বা কালীপুজা ভালে হয়। একথ। বল! হয়েছে 'শক্তি-সাধনা? গ্রন্থে এমন একটি জমি

৬৫ রাসমণি- «

মা'র পুক্জোর জন্য কিনতে পেরে রাসমণির আর আনন্দের সীম! ছিল না।

দক্ষিণেশ্বরৈর নহবংখানায় বিভিন্ন সময়ে মূর্ত হয়ে ওঠে নান! রাগ-রাগিনী। এক এক সময় এক এক নুরের ঝংকার ওঠে। প্রভাতে দেবতার মঙ্গলারতির সময় বাজে এক মুর। তার পর বেলায় পুর্জোর সুরুতে আবার নিনাদিত হয়ে ওঠে নহবৎখান|। দিপ্রহরে বিগ্রহের ভোগারতির পর বিশ্রামকালে শোনা যায় নহবতধবনি। তারপর আবার নহবৎ বেজে ওঠে বিকেলে দেবতার গাত্রোখানের সময়। ক্রমে সন্ধ্যার আধার নামে দক্ষিণেশ্বরে। দেবতার সন্ধ)ারতি হয়। নহবংতেও ধ্বনিত হয় সেই স্ুর। ধীরে ধীরে রাত্রি বাড়ে। বিগ্রহের শয়নারতিও শেষ হয়। শয্যা রচন। হয় তার। নহবৎ ছড়িয়ে দেয় অপুৰ প্রশাস্তি আর গাস্তীর্য।

দূক্ষিণেশ্বরের মন্দিরফে চলতি কথায় লোকে বলতো প্লাসমণির ঠাকুর বাড়ি। ষোড়শ শতকে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণব ধর্মের বান ডেকোঁছল। কাব্য সাহিত্যে তার প্রভাব পড়েছিল যথেষ্ট কত ধর্মমন্দির প্রতিঠিত হয়েছিল দেশে। তীর্ঘক্ষেত্রে পরিণত হলো বাংলার নবদ্বীপ ধর্মপ্রাণা রাণী রাসমণির কালী মন্দিরকে কেন্দ্র করে মাতৃপূজোর নব উদ্বোধন হলো নতুন তীর্ঘক্ষেত্রে পরিণত হলে! দক্ষিণেশ্বর। বাংলাদেশে ধর্ম সাধনার নতুন একট ইতিহাস রচন। হলো রাণী রালমণিতে য। সুরু তা একট আশ্চধ সুন্দর পরিণতি লাভ করান শ্রীরামকুঞ্চ বিবেকানন্দের সাধনায়।

নান। ধর্মমতের মধ্যদিয়ে সকলে এক ভগবানকেই পাবার চেষ্টা করছে। সব নদীই তে। গিয়ে মিলেছে সাগরে তাই নদী বা পথের গভিপথ বিভিন্ন হলেও সবার অন্তরে যিনি বিরাজ করছেন তিনি সকল সময়ে এক। মানুষে-মান্ুষে, ধর্মেশ্ধর্মে এই যে মহামিলনের ইংগিত, গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণের এই বাণী বিশ্বের দরবারে

৬৬

বয়ে নিয়ে গেলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্বদেশ ভারতেও প্রচার

করলেন এই মহামন্ত্র। ধর্ম জাতিতে এক্যের সাধনা আরে বড় হয়ে উঠলো!

এগারো

প্রধান মন্দিরগুলো! ছাড়াও বাঁধানো উঠানের দক্ষিণে একতলা অনেকগুলে। ঘর ছিল এখানে দেবসেবার ধরণের ভাড়ার ঘর, লুচি ঘর, বিষ্ণুর ভোগঘর, মায়ের ভোগঘর, তাছাড়া আরো ছিল ঠাকুরদের রান্নাঘর, খাজাঞ্চিঘর এবং অতিথিশাল1 ইত্যা্দি। উঠানের পশ্চিম কোণে অর্থাৎ দ্বাদশ শিবমন্দিরের ঠিক উত্তরে ছিল ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের ঘর। রামকষ্ণদেব যখন জননী ভবতারিণীর সেবাব্রতী হয়ে দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন, তখন তারই চরণ ধুলিতে পৃত হয়েছে এই কক্ষ। দক্ষিণেশ্বরের এই দাঁধকের, ভাবুকের, তী্থ- যাত্রীদের চিরকালের আনন্দ নিকেতন।

রামকৃষ্খদেবের ঘরের পাশেই গেলোপ, গন্ধরাঞ্জ, মল্লিকা, জবা, কত পরিচিত সৌরভময় পুষ্পের প্রাচুর্য রাণী রাসমণি যখন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন হয়তো এই শোভা, সৌন্দর্য সম্পুর্ণ হয়ে ওঠেনি কালে কালে ক্রমে ক্রমে গড়ে উঠেছে এইসব। দক্ষিণেশ্বরের বাগিচার মধ্যে সবচেয়ে ম্মর্ণীয় পঞ্চবটী। এখানে বট অশ্বথের ছু'টি পুরণো গাছ ছিল। এরই পাশে রামকৃষ্চদেব পরে গড়ে তুলেছিলেন ত্বার পঞ্চবটী। নিম, আমলকী, বিন্ব, বট অশ্বথ গাছের এক অপুর্ব সমাবেশ করা হয়েছিল এখানে এখানে কুটীর নির্মাণ করে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভগবৎ চিন্তায় মগ্ন হয়ে যেতেন।

অদৃশ্য দেবতা বা দেবীকে আমাদের চেন। জগতের সম্বোধন দিয়ে ডাকা, এক কঠিন সাধনার বিষয়। ভগবানকে ডাকার এই হে

৬৭

কঠিন পথ, সাধারণ ভক্তরা পথ দিয়ে যান না। ত্যাগ কষ্ট স্বীকার করতে হয় খুব। অনেকদিন আগে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব এই পথে ব্যাকুলভাবে ভগবানকে পাওয়ার জন্য আরাধন। করেছিলেন নীলাচলে।

কয়েক শ' বছর কেটে গেছে তারপর উনিশ শতকে আর একজন ভক্তকে দেখা গেল।

দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ যখন এই পথে সাধনা সুরু করলেন, সাধারণ লোক তখন তাকে পাগল বলে ঠাট্টা বিদ্রপ করতে লাগল তার এই আবেগময়ী সাধনায় নানাভাবে বাধা দিতে চেষ্টা করে তারা কিন্তু বেশী বাধ ত” স্থষ্টি করতে পারে না তারা। কার্ণ এই ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ 1ছলেন রাসমণি। জামাই মথুরনাথও সর্বদা সজাগ ছিলেন। তাদেরই সদা সতর্ক দৃষ্টির জন্য অবাধে নিজের সাধন-পথে এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন রামকুঞ্চদেব ,

শ্রীরামকৃষ্ণ যখন দক্ষিণেশ্বরে প্রথম এসোছলেন এখানে তখন তার মন বসেনি এক' থাকেন নি তিনি কোনদিন। এখানে সমবয়সী সঙ্গীর একান্ত অভাব ছিল। এর আগে তিন নিজেদের বাড়ি ব৷ কামারপুকুরে বা যেখানেই খাকুক না! কেন কখনও তার বন্ধুর অভাব হয়নি। সকলকে আপন করে নেবার একট! অদ্ভুত আকর্ষণ ক্ষমত! ছিল তার। তার ওপর তার ছিল খুব মিষ্টি গানের গল1। অল্পদিনের মধ্যেই সঙ্গী যোগাড় হয়ে যেত। এখানে প্রথম দিকে ত1। হয়নি।

অল্পদিনের মধ্যেই তার মনের এই অশান্তি দূর হলো, ভাগ্নে হাদয় এসে উপস্থিত হলেন দক্ষিণেশ্বরে। হৃদয়ের পুরো নাম হাদয় মুখোপাধ্যায়। শ্রীরামকৃষ্ণেরই সমবয়সী তিনি। বেশি লেখাপড়া শেখেন নি। কলকাতায় এসেছেন চাকরীর আশায় কাক কারবার তো একটা করতে হবে। বড়মাম। রামকুমার রাণী রাসমণির মন্দিরের পুজোর ভার নিয়েছেন। ছোটমাম! গদীধরও সেখানে

৬৮

রয়েছেন। তারও একটা! ব্যবস্থ। হয়ে যেতে পারে। হৃদয়ের সঙ্গে এই শ্রীরামকৃষ্ণের আগেই বন্ধুত্ব ছিল। নতুন জায়গায় পুরনে। বন্ধুকে পেয়ে খুশী হলেন খুব।

রামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে আছেন সত্যি কিন্তু কোনে। কাঞ্জের ভার নেননি তখনও নিজের মনে ঘুরে বেড়ান। গান করেন। মুতি গড়ে গুজে! করেন। ধ্যানমগ্র হন। দাদার সঙ্গে তখনও মতের মিল হয়নি তার। মন্দিরের মধ্যে ঢুকতেন কিন্তু তিনি পুজোর দায়িত্ব নিতে রাজী নন।

হৃদয়কে নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের দ্রিন আনন্দেই কাটছিল এমনি সময় একদিন সুন্দর মুখশ্রী সম্পনন মাত্মভোলা এক যুবককে গঙ্গার তীরে ঘুরে বেড়াতে দেখলেন মথুরনাথ। স্থূর্য ঢলে পড়েছে তখন পশ্চিমে গাছের গোড়ায় গোড়ায় আধারের ছায়া নেমেছে। জলের একটান! শ্রোতের দিকে হয়তে৷ তাকিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব। তার বড় বড় চোখের শাস্ত দৃষ্টি, গম্ভীর ভাব, মথুরনাথের মনে একট! ছাপ একে দিল।

মন্দিরের ভেতরে এসে তিনি খোজ খবর নিয়ে জানতে পারলেন, এই সুদর্শন যুবকর্টি কালী মন্দিরের পূজারী রামকুমারের ছোটভাই ছেলেটির সম্পর্কে অনেক কথাই জানলেন তিনি। যুবকটি লেখাপড়। কিংবা অগ্ত কার্জকর্ম কিছুই করে না। খুব আত্মভোল! দেবদেবীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা

সেদিনই মথুরনাথ রামকুমারকে তার ঘরে ডাকলেন। রামকুমার এর বিন্দু-বিসর্গ জানেন না তখনও বাবুর ডাক শুনে দেখা করতে গেলেন কথা বলার দরকার থাকলে মন্দিরেই তে। তিনি বলতে পারতেন নিরিবিলিতে কি আর হঠাৎ আলোচনা হবে তার সঙ্গে হাতের কাছ ফেলে হস্তদস্ত হয়ে ছুটে গেলেন রামকুমার।

ঘরের মধ্যে অন্ত আর কেউ নেই মথুরনাথ একাই একট! চেয়ারে বসে আছেন। রামকুমারও একটা চেচারে এসে বসলেন.

৬৯

-আগনার ভাইটিকে তো দেখে খুব শান্ত মনে হলে! মন্দিরের কাছে তে৷ তাকে লাগাতে পারেন। বললেন মথুরনাথ।

--ও তে! এখনও ছেলেমানুষ দায়িত্ব জ্ঞানই হয়নি এখনও |

রামকুমার তার ভাইকে চেনেন ভালো করে। গদাধরকে দেখতে যত শান্ত আর নিরীহ দেখায়, আসলে কিন্তু সে তত নয়। কারোর কথায় ব৷ প্র্গোচনায় পড়ে কিছু করতে রাজী নয়। নিজের কাজকর্ম সম্বন্ধে তার নিজন্য মতামত রয়েছে শাসন ব। প্রলোভনে সে মতকে দাবানা যাবে লী ভীবণ খেয়ালী ছেলে

কিছুদিন আগে, রামকুমার তাঁকে একটু বোঝাতে গিয়েছিলেন; তাঁর উত্তরে শ্রীরামকৃষ্ণ যা বলেছেন, তাতে তার ন্বভাবের দৃঢ়তার পরিচয় পেয়েছেন তিনি! কামারপুকুর থেকে এনে ভাইকে নিজের কাছে রেখেছিলেন তিনি ভেবেছিলেন লেখাপড়া শেখাবেন গদাধরকে। কারণ পিতা ক্ষুদিরামের মৃত্যুর পর কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের গেখাপড়া। একদম হচ্ছিল না। কলকাতায় তার কিছু যজমান রয়েছে পড়াশুনা করে শ্রীরামকৃঞ্চ যদি এই ব্যাপারে সাহ।য্য করতে পারেন তে। ভাল হয়। ভাই-এর সম্পর্কে হুশ্চিন্তীও কেটে যায় তাহলে উচ্চবংশীয় ব্রাহ্মণের সন্তান। পুঙ্ছো-অ1 ছাড় অন্ত কাজ শোভ। পাবে ন।।

শ্রীরামকৃষ্চ কলকাতায় এলেন সত্যি ।, দাদার কথা অমান্য করলেন ন!। কলকাভায় আসার খুব একট? ইচ্ছে ছিল না তার দ্রাদার কথা এড়াতে না পরে যদিও বা এলেন কিস্তু লেখাপড়ায় মন বসলো! না তীর খেলাধুলা, আমোদ,প্রমোদে সময় কেটে যায় তার। রাজকুমার ছোট ভাইকে কিছু বলেন না, পাছে তিনি মনে আঘাত পান বা বিরক্ত হন।

শেষে একদিন আর ন। বলে পারলেন না রামকুমার। ভাইয়ের স্বভাবের কোন পরিবর্তন হতে ন। দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লেন তিনি একদিন ভাইকে ডেকে বললেন।

-এবার পড়াশুনার দিকে একটু মন দে।

হ্যা, 'দব।

বলতে হয় বললেন শ্রীরামকুষ্ণ।

--ব্রাক্মণ বংশের ছেলে তৃই লেখাপড়া তোকে শিখতেই হবে। নইলে পরে খাবি কি করে?

ভাইকে বোঝান রামকুমার। লেখাপড়া না শিখলে লোকে বামুনের ঘরের যূর্থ ছেলে বলে ঠাট্রা করবে' অনুতাপ আর অন্থশোচনায় মন বিষিযে উঠবে তখন ভাই কিছু পুজে। পাঠ শিখে নেওয়া তার খুব প্রয়োজন। নিজের অন্ন সংস্থান যাতে ভবিষ্যতে নিংজই করে নিত পারেন “সইজন্য এই বয়সে পড়াশুনা] তাকে করতেই হবে।

প্রীরামকুঞ্চ বড় ভাইকে পিত'র মত ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন। ভালোও বাসতেন খুব প্ীববে শুনলন দাদার কথ! কোনদিন দাদার কথা 'অমান্থ করেননি কিন্তু এবার আ'র একমত হতে পারালন ন। স্তিনি। নিজের মত স্পট করে জানিয়ে দিছে একটুও কুষ্টিত হলেন ন'। খুব ধীরে ধীরে সেদিন ভিনি ছবাব দিতেছিজেন, যে বিদ্যা, চালকল। বাঁধতে শেখায় তা তার শিখাত একটুও আগ্হ নেই। সত্যিকারের শিখতে হলে এমন বিদ্। শিখবেন যাতে ঈশ্বরকে পাওয়! যায়। জীপনের সব পাওয়ার প্রয়োজন মিটে যায়।

ধর্মের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ভক্তি ছিল বরাবর। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকারের একটি মানুষ। বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল খুব কম। নির্জনে নিরিবিলিতে ভগবানের নাম গানে মগ্ন থাকতেন বেশি খুব মিষ্টি ছিল তাঁর গল]।

চললে! লুকোচুরি খেলা মথুরনাথ দক্ষিণেশ্বরে এলে গ্রীরামকৃ্ণ গা ঢাক! দিতেন। তিনি মথুরনাথকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। মথুরনাথের মনের ইচ্ছাট। তিনি জেনেছিলেন। তার ওপর পুজোর

৭৯

ভার দিতে চান তিনি। মথুরনাথ মানী লোক। মুখোমুখি দেখ! হয়ে গেলে মন্দিরের কোৌনে। কাজ নিতে অনুরোধ করলে ঠেলতে পারবেন না তখন

দাদ! অবশ্য তাঁর মনের কথ। জানিয়েছেন ইচ্ছে ন। হলে কোনো কাজই তাকে দিয়ে করানো যাবে না তা ছাড় এখন তার মনোমাগও নেই মন্দিরের ব্যাপারে তার ওপর এখন কোনে। ন্দিরের কাজ্জের ভার দেওয়া উচিত হবে না। তবে যদি তার মত বদলায়, রামকুমীর যথাসময়ে জানাবেন তাকে সে কথা

মথুরনাথ বেশি জোরাজুরি করলেন না। কাজ তে তার চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই যুবককেই পুজারী হিসেবে পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই ইচ্ছার বিরুদ্ধে অহেতুক চাপ দেওয়ার গ্রয়োজন নেই।

জ্রীরামকৃষ্ণদেৰ এভাবে আর বেশিদিন দূরে থাকতে পারলেন না। কারণ তার মনের স্বাভাবিক গতিই ছিল ঈশ্বরের অভিমুখী। ,নিক্ষের অজান্তেই ক্রমশঃ মন্দিরের কাজে ধরা পড়তে লাগলেন

সময়ে ঘটলে। একটি সুন্দর ঘটনা

প্রীরামকঞ্চদেব ভাল মৃতি গড়তে পারতেন আর তা বেশভূষায় সাজিয়েও তুলতেন অপূর্বভাবে মাঝে মাঝে নিজের খেয়ালে মৃতি গড়ে পুজে। করতেন তিনি ধ্যানে আত্মমগ্ন হতেন

একদিন সকালে গঙ্গা থেকে মাটি এনে শিবঠাকুর গড়তে সুরু করলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সকালট। সেদিন তার এই কাজেই কাটছিল মৃতি গড়া শেষ হলে পুজোয় বসলেন তিনি তন্ময় হয়ে গেলেন শিবের ধ্যানে।

* মথুরনাথ দূর থেকে দৃষ্ঠ দেখতে পেলেন। শ্রীরামকৃ্ণকে

তিন অনেকদিন দেখেন না। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের পেছনে এসে দাড়ালেন।

৭২

অন্যদিন মথুরবাবুর আসার টের পেলে গ। ঢাক! দেন শ্রীরামকৃষ্ণ কিন্ত জাজ তিনি টের পেলেননা। তিনি ধ্যানে তখন মগ্ন ছিলেন। তার কাছে কেউ এসে দ্লাড়িয়েছেন খেয়াল করতে পারেন নি তিনি।

বৃষের পৃষ্ঠে মহাদেব হাতে তার ত্রিশূল আর ডমরু | চচ্গু র্‌ টি অর্ধনিমিলিত। মু্িটি ছোটো হলেও অঙ্গ-প্রতাজ, সাজ সংগা একেবার নিখুঁত হয়েছে পাক! শিল্পীর নিপুণ শিল্পস্থপ্টি যেন। খুব ভালো। লেগেছে মথুরনাথের।

তিনি কিছুক্ষণ নিস্তব্ধভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের পেছনে দাড়িয়ে থাকেন। দেবতার ধ্যানে কতটা একাত্ম হয়ে যেতে পারলে, মান্ুষ এভাবে আত্মমগ্ন হতে পারেন। কোনে খেয়াল নেই। তিনি কতক্ষণ আর দাড়িয়ে থাকবেন। ফেরার সময় হাদয়কে বললেন, পুজোর পর মুতিটি গঙ্গায় না ফেলে যেন তার হাতে দেওয়া হয়। মৃতিটি তিনি বাড়িতে নিয়ে যাবেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যানের ব্যাথাত করলেন না তিনি প্রীরামকৃষ্ণকে প্রথম দেখার পর থেকেই তার খুব ভ'লো লেগেছিল। এই আত্মভোলা, নিষ্ঠবান, ভগবং বিশ্বাসী যুবকের ওপর তার আকর্ষণ আরো অনেক বেশি বেড়ে গেল। মথুরনাথ ভাবতে লাগলেন এই তরুণ ব্রাহ্মণকে কি করে মন্দিরের পৃজজকরূপে পাওয়া যায়।

পূজো শেষ হলে কথা! মতে হৃদয় শিবমূতিটি নিয়ে এলেন মুর নাথের কছে। তার হাতে তুলে দিলেন মৃতিটি। এমন সুন্দর গড়ন মথুরনাথ নিয়ে গেলেন বাড়িতে রাসমণিকে দেখাবার জন্য মুত্তিটি রাণীরও খুব ভালে! লাগে। তিনি কৌতুহলী হয়ে উঠলেন এই শিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। জামাইয়ের যুখে শুনলেন শ্রীরামকৃষ্ণের একাগ্রতার কথা।

রাসমণির জীবনের শেষ পর্ব শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবোন্মাদ সাধনার প্রথম সুত্র একই জায়গায় এসে মিশেছে তাই রাসমণির জীবন

৭৩

কাহিনী বলতে গেলেই বার বার শ্রীরামকৃষ্ণের কথা এসে পড়বে র/সমণিই এই মহাপুরুষটিকে প্রথম চিনেছিলেন। ভার সাধনার পথ খানিকট। সহঙ্ব হয়েছিল রাসমণির আন্তরিক সাহায্যে। রাসমণি তীকে ঠিকই চিনেছিলেন ; জনহুরী যেমন জহর চেনে

বারে

স্থযোগের প্রতীক্ষায় ছিলেন মথুরনীথ। কয়েক মাস তো কেটে গেছে তারপর রামকুমারও কথায় কথায় এর মধ্যে একদিন ব্গছিলেন, শুভ লক্ষণ দেখ। গেছে গদাধরের মধ্যে মন্দিরের মধ্যে আমে আঙ্গকাল। মনোযোগ দিয়ে পুজোর রীতিনীতি লক্ষ্য করে। কখনও একৃষ্টে চেয়ে থাকে কালীমূতির দ্কে। কি যেন ভাবে তখন।

স্ুধোগ খুদ্রছিলেন মথুরনাথ। একদিন তিনি কলকাতা থেকে দক্ষিণেশ্বরে আসছিলেন ফটক পেড়িয়ে ভেতরে প্ৃকতেই দুর থেকে তিনি দেখজে পেলেন এই সুদর্শন যুবককে গদাধরের নাম তখনও শ্রীরামকৃষ্ণ হয়নি। গদাধরকে দেখে তখুনি তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন বিশেষ প্রয়োজন। গুরুতর বিষয়ে একট! আলোচন। আছে তার সংগে।

শ্রীরা মকৃষ্ণ স্পষ্টই বুঝতে পারলেন, তাঁকে ডাকার কারণ কি? দক্ষিণেশ্বরে এলেই তার খোঞ্ করেন একবার। দেখে যখন ফেলেছেন, না গেলে তাকে অপমান করা হবে। তাই ভাবতে লাগলেন, যাবেন কি না? মন্দিরের কাজের ভার খাড়ে চাপাবেন।

ভাগ্নে হৃদয় কাছেই ছিল। তিনিও মথুরনাথকে দেখেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ইতস্ততঃ ভাব দেখে তিনি বিব্রত বোধ করলেন। এত বড় একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির ডাক অবহেলা করা উচিত হবে ন!। তিনি ছোটে মামাকে বললেন।

৭8

--ডেকেছেন যখন, না গেলে বড় খারাপ দেখাবে

__ওখানে গেলেই তো! মথুরনাথ চাকরির কথা বললেন।

--চাকরিতে। করতেই হবে। ন! গেলে মথুরবাবু অসন্তুষ্ট হবেন। বললেন ভাগ্নে হৃদয় |

মামি কাউকে ভয় করি নাকি? শয়ং মা আমার সহায়। বললেন শ্রীরামকৃষ্ণ |

হৃদয় তখন শ্রীরামকৃষ্ণকে বোঝাতে থাকেন। রাণী রাসমণি এবং তার জামাই মথুরনাথ, ছু'জনেই খুব দয়ালু এবং উদার প্রকৃতির মানুষ। এই পুণ্য দেবভূমিতে যদি কোনে চাকরি নিতে হয়, তাতে আপত্তি করার কি আছে? দেবতার সেব ছাড়! অন্ত কাঁতো। তাকে করতে বলছেন না মথুরনাথ। তিনি এখন না গেলে রামকুমার৪ খুব অসস্তষ্ট হবেন তার ওপর।

হৃদয়ের কথাগুলে। মনযোগ দিয়ে শুনলেন শ্রীরামকৃষ্ণ এবার আর তার আপন্তি থাকলে! না; তিনি যেতে রাজী আছেন। পুজোর ভার নিতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু সব ঠাকুর দেবতার গায়েই রয়েছে দামী দামী গয়ন।। পুজোর ভার নিলেও এইসব গয়নাগাটির ভার তিনি নিতে পারবেন না। গুলে! সামলাতে গেলে তার সাধনার ব্যাঘাত ঘটবে। হৃদয় যদি এসবের দায়িত্ব নিতে রাজা থাকে, তাহলেই মন্দিরের চাকরি তিনি গ্রহণ করবেন হৃদয়ের হয়ে তিনি মথুরবাবুকে বলবেন। বাজী করাবেন তাকে তার কথা নিশ্চয়ই উপক্ষে! করবেন না মথুরবাবু

হৃদয়ের খুশী আর ধরে না। হাতে আকাশ পেলেন যেন। চাকরির খোজেইতো দূর গ্রাম থেকে এখানে এসেছেন। একা রয়েছেন। বড় হয়েছে চাকরি না করলে চলবে কেন? হঠাৎ এই সুযোগ এসে উপস্থিত হওয়ায় তিনি আনন্দের সংগে রাজী -হয়ে গেলেন। সংগে ষেতে তার কোনো আপত্তি নেই।

হাদয়কে সংগে নিয়েই শ্রীরামকৃষ্ণ এলেন মথুরনাথের কাছে। যা!

৭৫

ভেবেছিলেন তাই হলো হৃদয় ঘরে ঢুকলেন না। তাকে তো ডাকেন নি। তিনি বাইরে অপেক্ষা করলেন। গোবেচারীর মতো! শ্রীরামকৃষ্ণ এসে দাড়ালেন মথুরবাবুর সামনে তাকে বসতে বলে মথুরবাবু বললেন,

' একটা কথা আপনাকে অনেকদিন থেকেই বলবো বলবে। ভাবছি

--নিশ্চয়ই বলবেন কেন বলবেন ন1।

খুব নম্র গলায় বললেন শ্রীরামকৃষ্ণ

--আপনার দাদার সংগে ব্যাপারে আমি আলোচনা করেছি। দাদার সম্মতি রয়েছে মন্দিরের পুর্জোর ভার আপনাকে নিতে হবে।

বেশ জোর দিয়েই বললেন মথুরবাবু।

-_দাঁদা কালীপুজেো। করছেন। আমি এখনও দীক্ষা নিইনি। শাস্ত্র মতে কালীপূজে! আমি করতে পারি ন।।

যুক্তি টেনে কথ বললেন শ্রীরামকৃষ্ণ

মথুরনাথ তখন তাকে দেবদেবীর অঙ্রাগ সাজ-সঙ্জার ভাঁর নিতে বললেন। এই অলঙ্করণ বা সাজানে। গোছানে। ব্যাপারে শ্রীরামকৃষ্ণ যে কত দক্ষ, মথুরনাথ তার প্রমাণ পেয়েছেন সেদিনকার গড়া শিবঠাকুর থেকে হৃদয়ের কথ তুললেন শ্রীরামকৃষ্ণ মথুরনাথ সহজেই রাজী হলেন এই প্রস্তাবে

মন্দিরের কাজে হছ'বন্ধু শ্রীরামকৃষ্ণ হৃদয় এক সংগে যোগ দিলেন। কালীমন্দিরের ভার নিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ রামকুমার ছিলেন ওই মন্দিরের পুরোহিত দাদার কাজে সাহায্য করতে লাগলেন তিনি। দেবীর সাজসজ্জা, বসন-ভূষণ এসবের প্রতি তীর দৃষ্টি ছিল তখন। ভাগ্নে হৃদয় তুই মামার প্রয়োজন মত সাহায্য করার কাজ

মন্দিরের কাজ নেবার পর থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ মনপ্রাণ ঢেলে দিলেন দেব সাধনায় বকবক করে মা'কে যেন কি বলেন তিনি।

৭৬

কখন ব। দেবীকে ধমক দেনঃ কখন ব। আবদার করেন। নিজের ইচ্ছামত বেশ মা'কে পরিয়ে দেন।

রামকুমার দেখেন। মনে হয় মা যেন হাদেন। গদাধরের কাজে কৌতুক অন্ুভব করেন। মন্দিরের আর কেউ না বুঝলেও, রাসমণির চোখে ধরা পড়ে এই নতুন ঠাকুরের একাগ্রতা, দেবীর প্রতি অন্তরের ব্যাকুলতা। মথুরনাথও বোঝেন ঠাকুরের আন্তরিকতা |

মথুরনাথের কাছে নালিশ যায়। রাপমণির কাছেও এই নালিশ যায়। ছোট ভটচায কোনো নিয়ম মানেন না। যা খুশী তিনি তাই করেন। দেবীকে নিয়ে ছেলেখেলা

মথুরনাথ এই নালিশ কানে তোলেন ন'। তিনি বলেন, ছোট ভটগায যা করছেন, করুন। রাসমণিও জামাইয়ের কথায় সায় দেন। তিনি বলেন--মন্দিরের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়। হয়েছে ঠাকুরকে তোমর। তাকে বাধ! দেবে না।

দিন যায় রাত আসে। রাত যায় দিন আসে। এমনি করে প্রাকৃতিক নিয়মে সময় চলে। পৃথিবী তার কক্ষ পথে এগিয়ে চলে কালের দিকে--যুগের দিকে কিছুদিন কাটলে! মন্দিরের বেশকারী হিসাবে গদাধরের | |

রামকুমার গদাধরকে শক্তি-মন্ত্রে দীক্ষা দেবার কথা ভাবলেন গদাাধরের মত বদলেছে মন্দিরের পুজারী হতে এখন আর তার আপত্তি হবে না। শ্াক্ত-মন্ত্রে দীক্ষা না পেলে শক্তি-পুজ্জার অধিকার হয় নাঁ। গদাধরের ওপর দেবীর পূজার ভার অর্পণ করে রামকুমার নিশ্চিন্ত হতে চান। তার তে। বয়স হয়েছে।

রামকুমার কেনারামকে ধরলেন। গদাধর বড় হূয়ছেন। দেবীর প্রতি ঠার-ভক্তিও অনীম। গদাধরকে শততিমন্ত্রে দীক্ষা

দিতে হবে। কেনারাম রাজী হলেন। একট! শুভদিন দেখে শুভ কাজ সম্পুর্ণ

হলে।। কেনারাম দীক্ষা! দিলেন গদাধরকে। ভবিষ্যৎ জীবনে, ৭৭ ্‌

কালীর শ্রেষ্ঠ সাধক শ্রীরামকৃষ্ণ শক্তি-মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করলেন কেনারামের কাছ থেকে

পূজা পাঠ ওখনও পর্যন্ত জানতেন না তিনি। হৃদয়ের আস্তরিকতা ঢেলে দেবীর আরাধন1 করেছেন এতদিন। অন্তরের আকুলত! দিয়ে দেবীর সেবা করেছেন।

রামকুমীর ভাইকে দেবী পুজা? চণ্রীপাঠ যত্ব করে শেখাতে সুরু করলেন। ছুপুরে অবসর সময়ে ভাইকে পড়ান তিনি। গদাধরের স্বুরণশক্তি ছিল খুব। দাদা একবার যা বলতেন, ভুল হতো না তার। গদাধর মনে রাখতেন তা, ছ'বার বলতে হতে। না তাকে

রামকুমার মথুরনাথের সংগে আলোচনা করেন। গদাধরের হাতে তিনি পুজার ভার দিতে চান। গদাঁধর শক্তি-পুর্জার উপযুক্ত এখন। তিনি গদাধরকে সব শিখিয়ে দিয়েছেন। শক্তি বড় জাগ্রত। কোনো অনাচার-অবিচার হলে দেবীর কোপ পড়বে।

মথুরনাথ আপত্তি করবেন কেন ? তিনি গদাধরকে শ্রদ্ধা করেন। স্নেহ করেন। সাধক ভক্তের ঠাতে দেবীর পুজার ভার পড়বে এখন থেকে। দেবী খুশী হদেন। নিজের পৃজ1 পাওয়ার জন্যই তো! দেবী প্রীরামকৃষ্ণকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। রাসমণিও এখবর শুনে খুব খুশী হলেন তিনি দেখা করতে এলেন মন্দিরে রাণী রাসমণি নিশ্চিন্ত হলেন--দেবী এখন থেকে তার পুজ। প্রতিদিন গ্রহণ করবেন। রঃ

প্রীরামকৃষ্ণ কোনো (দ্ধ! করলেন না কোনে। আপত্তি করলেন না। বরং তিনি খুশী মনেই এই গুরুদায়িত্ব মাথা পেতে গ্রহণ করলেন। তিনি পুজারী হলেন। দেবীর নিথর চোখের কোণে ন্সহ যেন ফুটে উঠল।

৭৬

০৩

বনের উড়ন্ত পাখী খাঁচায় বন্দী হলে।। এবার স্বেচ্ছায় তিনি ধর! দিলেন মায়ের মন্দিরে। ভার নিলেন পুর্জার। গদাধর পুজারী হলেন। দিনের অনেকটা সময় তার মন্দিরেই কাটে মায়ের কাছেই তিনি পড়ে থাকেন। মায়ের সেবাই তিনি করে চলেন সর্বক্ষণ

দাদ। রামকুমার নিশ্চিন্ত হলেন। ভাই তার পাক। পূজারী হয়ে উঠেছে। আর তার অস্থিরতা নেই। এবার তিনি ছুটি নিতে পারেন বিদায় নিতে পারেন দক্ষিণেশ্বর থেকে বয়সও তাঁর অনেক হয়েছে। গর্দাধর থেকে সাইত্রিশ বংসরের বড় তিনি

হঠাৎ একদিন রামকুমার মারা গেলেন, গদাধর খুব আঘাত পেলেন।. দাদাকে তিনি খুব ভালবাসতেন, শ্রদ্ধাও করতেন অপরিসীম জ্ঞানতঃ দাদার অবাধ্য তিনি হননি কখনও বিদেশে দাদার নেহ ছায়ায় তনি ছিলেন।

দাদার মৃত্যুতে ক'দিন তিনি গন্তীর ছিলেন। মন্দিরের কারোর সংগে তেমন কথ বলেন নি! ভাগ্নে হৃদয়ের সংগে পর্যস্ত প্রাণ খুলে কথ। বলেন নি। এই নশ্বর পৃথিবীতে কেউ কারোর নয়! কেউ কারো। অপেক্ষায় থাকে না। বেঁচে থাকাই এই পৃথিবীতে এক বিরাট বিশ্ময়।

দাদার স্সেহের কত নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। প্রতি মুহুর্তে দাদার কথ। মনে পড়ে কিন্তু তিনি নেই। দাদার মৃত্যুতে গদাধর যেন আরে উদাস হয়ে উঠলেন। লোকে ভাবে দাদার শোকে বেচার। বুঝি পাগল হয়ে যাবে। সবাই সাস্বন1! দেয়, প্রবোধ দেয়। কিন্ত কারোর কোনো কথ কানে ঢোকে না গদাধরের। গদ্ধাধর নিধিকার।

বিশ্ব সংসার ভূলে গদাধর জগদম্বার পূজায় মন প্রাণ ঢেলে দিলেন। কোনদিকে তার ভ্রপেক্ষ থাকে না। শুধু মা আর মা।

৭৯

মায়ের গানে মেতে থাকেন। সুমিষ্ট কণ্ঠের অন্তরের আকুল নিবেদন ছড়িয়ে পড়ে গঙ্গার বুকে।

মথুরনাথ উৎকীর্ণ হয়ে শোনেন সে গান। শুনতে শুনতে রাসমণি তন্ময় হয়ে যান। ভাবাবেগে কখনও কখনও নিজের সত্বাকে জামম়িকের অন্য হারিয়ে ফেলেন গানতে। নয় যেন মাতৃনামের ঝরণ। ধারা যেন অন্তরের আকুল কামনা যেন গদাধরের বুক নিঙড়ান কান্না যে মনে এত ব্যাকুলতা, সে মন তো সাধারণ নয়। দিব্য পুরুষ, এর দর্শনেও পুণ্য আছে।

কিছুদিন যেতেই রাণীর কাছে নালিশ যেতে থাকে ছোট ভটচায কিছু জানেন না। নিয়ম রীতি তিনি মানেন না। দেবীর মৃতি তার কাছে যেন মাটির পুতুল। যেদিন যেমন খুশী তেমন পুজো করেন। কোনো আচার নেই, নিষ্ঠা নেই। পাগলের মত প্রলাপ বকেন। দেবীর সামনে বসে কখনও কাদেন, আবার কখনও হাসেন। কখনও ব। হাত তুলে মারতে যান। হিন্দু হয়ে দেবীর গায়ে হাত। ঘোর নাস্তিক তিনি। শুণ্য ঘরে আপন মনে বিড় বিড় করে বকে যান।

রাদমণি রোজ দক্ষিণেশ্বরে আসতে পারেন না। তার ঘাড়ে দায়ি তো। কম নয়। কাঞ্জের চাপে তাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। মথুরনাথ প্রায়ই আসেন।

মথুরনাথের কাছে নালিশ করে কোনে। সাড়া না পাওয়ায় রাণীর কাছে তারা অভিযোগ করলেন বিজ্ঞের মতে। মাথ। নেড়ে বলেন-- ধর্ম রসাতল গেল। শক্তিপুজজা কি এতই সহজ। অমঙ্গল সুনিশ্চিত।

মথুরনাথ মনে মনে হাসেন গদীধরের লীল। সাধারণ লোকের বোঝবার ক্ষমতা নেই। সেই জ্ঞান-চক্ষু কোথায় এদের। শাস্ত্রের নিরস নিয়মগুলোই এর। আকড়ে ধরে বসে আছে।

৮৩

রাণী এদের কথায় কান দেন না। বড়মুখ করে বলতে এসে মাথ। নীচু করে মন্দিরে ফিরে আসে রাসমণির এক কথা-_ছোঁট যা করছে করুক, তোমরা কেউ কিছু বলবে না।

ভাবসাগরে এই ভাবের ঠাকুর ক্রমশই যেন তলিয়ে যাচ্ছেন, ম। ছাড়া আর কোন কথ। নেই যুখে, নিজের খেয়ালে মায়ের আরাধানায় মগ্ন থাকেন সবক্ষণ। মায়ের মৃতি সামনে বসে কখন গানের পর গান গেয়ে চলেন; হুশ থাকে না সময়ের। কুশ থাকে ন। পরিবেশের আর হু'শ থাকে না পরিধেয় বাস্ত্রর

কেমন যেন হয়ে যান মাঝে মাঝে

বাসমণি 'মাসতে না পাঃলেও জামাই এর মুখ .থকে সব খবর সংগ্রহ করতেন। বৈষয়িক ব্যাপারে তিনি খুব জড়িয়ে পড়েছিলেন এই সময়। বয়সও হয়েছে খাটবার ইচ্ছ। খুব, কিন্তু ক্রাস্ত হয়ে পড়েন অল্পতেই বড় মেয়ে পদ্মমণ তার খুব অবাধ্য হয়ে পড়েছেন গার সবু কাক্দেই তিনি একমত হন না। মনে ভীষণ অশান্তি, রাসমণির |

শাম্ত পাবার জন্য তবু ৩1৭৯ ফাকে ছুটে আচসন সাসমাণি। গদাধাপর মন কাপানো, ব্যাকুল করা, প্রাণ ঢালা, দবদ মেশানো গান শোনেন। “ওগো মানন্দমময়ী হরে মা আমায় নিরানন্দ করো না, ( ওম। ) দু'টি চরণ বিনে আমার সন অন্য কিছু আর জানে না ।”

গদাধরের গানের সুধায় রাণীর মনের ক্ষতে মধুর প্রলেপ পড়ে সান্ত্বনার বাণী খুঁক্ষে পান। আক ভরে নামের অমৃত সুধা পান করেন। সময়ের জ্ঞান থাকে না। ভাবে বিভোর হয়ে যান।

রাসমণি পদ্মমণিকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। পণ্মমণি মায়ের সব কথা শুনতে চান না পদ্মমণি হিসেবী মহিলা, তিনি পাঁক। গৃহিণী দানপত্রে স্বাক্ষর করতে তিনি রাজী নন। অপর মেয়ে জগদম্বার কোনে! আপত্তি নেই

দ্ানপত্রে যদি সব উত্তরাধীকারীর স্বাক্ষর না থাকে, তবে দানপত্র

৮১ রাসমণি--৬

পাক। হবে না। ভবিব্যৎ উত্তরাধিকারীর স্বাক্ষর প্রয়োজন। দক্ষিণেশ্বরের দানপত্রের দলিলে পদ্মমণি স্বাক্ষর করতে চান না। বড় মেয়ে অবাধ্য হওয়ায় দানপত্র পাক। করতে পারছেন ন। রাসমণি, তার সাধের দক্ষিণেশ্বর, তার কল্পনার ত্বর্গরাজ্য, ম। মহামায়ার গীঠস্থান অনিশ্চয়তার মাঝে পড়ে থাকবে জগদম্বা মার খুব বাধ্য। তিনি স্বাক্ষর দিতে ইতস্ততঃ করেন নি। অয্লান মনে মার অনুরোধ রক্ষা

করেছেন। এই এক মেয়ের জঙ্ঠ রাণীর মনে এক মহ অশান্তি দানা বেধে থাকে

রামকৃঞ্জের মধ্যে আরো পরিবর্তন দেখা দিল। লোকে ভাবলে দাদার শোকে বেচারী গদাধর নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যাবে। হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে উঠেছেন কথা বল! প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। পৃূজে! শেষ হয়ে যায়, কিন্তু তার তন্ময়তা কাটে না। মায়ের গানে আত্মহারা হয়ে যান। রাত্রিতে পঞ্চবটার পাশে জঙ্গলে বসে ধ্যান করেন।

রামকৃষ্ণের ওপর মন্দিরের কেউই সন্তুষ্ট নন। ক্রমশঃ ভার! আরো! ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মথুরনাথের এট] পক্ষপাতিত্ব কেউ কেউ ভাবেন ঠিক আছে পাগলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, টের পাবে এর পর। ধর্ম নিয়ে খেলা নয়। আবার কেউ ভাবেন বড়লোকের খেয়াল। খ্যাতির মোহে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে কেউ বা গদাধরের উপর ঈর্ষান্বিত হল বশীকরণ বিদ্যা জানেন হয়তো। গদাধর।

মন্দিরের লোক ভাবেই, গদাধরের ভাগ্নে হৃদয়েরও মামার এই খেয়ালীপন। ভালে! লাগে না। মুখে অনশ্য মামার খুব সুখ্যাতি করেন। মামাকে বিদ্রুপ করলে কাউকে ছেড়ে কথা কন না।

হাদয়ের মনে মহা ছুশ্চিন্তা দান। বাধতে থাকে মামাকে সামলাবার চেষ্টা করেছিলেন খুব। সর্বদা মামার কাছে কাছে থাকেন। গভীর রাত্রে রামকৃষ্ণ জঙ্গলে ধ্যান করতে গেলে হ্হাদয়

৮২

ভয় দেখাতে চেষ্টা করেছেন। দূর থেকে টিল ছু'ড়েছেন জঙ্গলে মামা হয়তে। ভূতের ভয়ে জঙ্গলে আর যাবেন না। কিস্তু কোনে ফল হয়নি তাতে

একদিন গদাধর পঞ্চবটী বনে গেলেন। হৃদয়ও মামার পিছু নিলেন। জঙ্গলে ঢুকবার সাহস হলে। না তার। মামাকে ভৃতের ভয় দেখালেও নিজের কিন্তু সে ভয়ট। বেশ পুরোদমেই ছিল। তিনি বাইরে দাড়িয়ে উকি মারলেন।

গদাধর বসে আছেন আমলকী গাছের নীচে তিনি দিগম্বর। পৈতে কাপড় সব খুলে ফেলে দিয়েছেন দৃশ্ট দেখে মনে মনে ভাবলেন হৃদয় আর পারা গেল না। মাম নিশ্চয়ই ঘোর উন্মাদ হয়ে গেছেন শেষ পধস্ত মাম! তার একেবারে পাগল হয়ে গেল! মন্দিরের কাজটি বুঝি আর থাকল না? কিন্তু এমনি করে মামাকে ফেলে তো! আর চলে পাওয়া যায় না। শত হলেও মামা তো। ভালমদ্দ হলে আমাকেই তে। দেখতে হবে।

ছেলে যেমন মায়ের সঙ্গে বাবহার করে, আবদারের সুরে কথা! বলে, মায়ের ওপর জোর খাটায়, গদাধরের পুজোর পদ্ধতিও সেরকম হতে লাগল যখন যে ফুল দিয়ে ইচ্ছা, যেরকম করে ইচ্ছা! মা'কে সাজায়। কখনও ঝগড়া করে, কখনও বা অভিমান করে। রাগ করে হাত তোলে, আবার ছোটশিশুর মতো কখনও একনাগারে বসে কাদেন।

মথুরনাথ এসে মাঝে মাঝে দেখে যান। দিব্যজ্ঞানে ঠাকুর উন্মাদ প্রায়। লোকে যাই বলুক। ওদের তে। জ্ঞানচক্ষু নেই। রানী বোঝেন, আর বোঝেন মথুরনাথ। সাধারণ লোকের কতটুকুইব! ত্ঞান। অষ্ট শক্তির এক শক্তি মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন রাণী রাসমণি। তিনি বুঝবেন না তো। কে বুঝবে ?

মাকে অন্নভোগ নিবেদন কর! হবে। পুজো তখন চলছে। গদাধর ভাত নিয়ে দেবীর মুখের কাছে এনে বললেন--খা, খা,

৬৩

তাড়াতাড়ি কর। বলে একটু পরে সেগুলো নিজেই খেয়ে ফেললেন হাতের ওপর তখনও থালাট! রয়েছে অন্থযোগের স্বরে বললেন -" এই ত”, আমি খেলাম, এবার তুই খা, খাবার সব্ট তো। তোর জন্য আন।।

মন্দিরের সামনে প্রচণ্ড হৈচৈ পড়ে যায়। হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ে সকলে অনাচার ঠাকুর সইবে না। নির্থাৎ মৃত্যু পাগল ঠাঁকুক ঠে] নরবেই, সেই সাথে তাঁদের সকলকেও মারবে ক্ষেপে যায় সকলে এই মারে তো এই মারে।

হৃদয়ের যত সমস্তা , তাকে সকলে গালাগালি দে মামাকে তিনি আগলাবার চেষ্টা করেন খুব। ম'নাকে তিনি ভালবাসেন খুব। £লাকদের ঠেকানে গিয়ে হৃদয় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। গার সামনে কেউ গদাধরকে বিদ্রপ করতে পারতো না প্রাতিবাদ করতেন তি'ন জোগ গলায়

মামার এই কাজে তিনিও ঘাবড়ে গেলেন খুব ঠাকুধ নিয়ে খেলা নিক্রের খাওয়! দ্রব্য দেবীকে নিবেদন করা "ষ মহাপাপ দেবীর কোপে যে বশ ধ্বংস হয়ে যাব। মামার গার নিস্তার নেই

মথুরবাবুকে খবর দিতে লোক ছোটে পাগলকে প্রশ্রয় দিলে তাঁর ফল এই হয়! গদাধর আর নুস্থ নেই। লোকট। উন্মাদ হয়ে গেছে। এক্ষুনি একে ছাটাই কর। প্রয়োজন

এক একজন এক একরকম মন্তব্য করে মথুরবাবুর কাছে। কাছারী ঘরে কাক্ধ করছিলেন তিনি নীরবে শুনলেন সব কথ! মথুরবাবু নিরুত্তর |

এদ্রিকে মামার কথ। ভেবে হৃদয় চিস্তিত হয়ে পড়েন। তিনি সংসারী লোক। ভাবেন--একথা রাণীর কানে গেলে মামাকে আঁর এখানে কাজ করতে হবে না। মামার দোষ-ক্রটি তিনি ঢাকবার চেষ্টা করতেন। এক একদিন দেবীকে ন! শুইয়ে দেবীর

৮৮৪

সিংহাসনের পাশে মাম। শুয়ে থাকেন নিজের মনে ফাঁক! ঘরে কথা বলছেন।

মামাকে তিনি সাবধান করেছেন অনেক মামার এই পাগলামে। ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে ! আচার, নিষ্ঠা, নিয়ম, রীতি- নীতি কিছুই মানছেন ন। আর। পুজায় বসেন, কিন্তু শাস্ত্রমত কিছু করেন না। করেন নিজের ইচ্ছেমত

আর বুঝি মামাকে রক্ষা করা গেল না। রাণী হয়তো মামার বেরাদপি আর সহা করবেন না। তীর মন্দিরে বসে তার ঠাকুরকেই অপমান। এ'টে অন দিয়ে ঠাকুরের ভোগ নিবেদন।

চৌদ্দ

চাদিকে শুধু এক কথা-গেল গেল ছোট ভটচায সব নষ্ট করে ফেললো ধর্ম আর রইল না। দেবীর পূজো, ভোগ কিছুই মানেন না তিনি গ্নেচ্ছের মতো কাজ সুর করেছেন।

শুধু মথুরনাথকে বলে তৃপ্ত নয় এরা মধুরপাবু ভটচাষের দোষ দেখেন না বড় একটা লোকটা তাকে নির্থাৎ বশ করেছেন। রাণীর কাছে ছুটে আসে অন্যায়ের প্রতিকার তাকে করতেই হবে। এসব অনাচার চোখে দেখা যায় না। গদাধর তে! তাদের শক্রু নয়! ছোট ভটচাযকে তারাও ভালবাসে, কিন্তু তা বলে অধমকে তে। প্রশ্রয় দেওয়! যায় না। দেবীর পূজা তো! ছেলেখেলা নয়।

রাণী সব শোনেন যদিও রাণী সব জানেন, সব বোঝেন। দিব্যজ্ঞানে ঠাকুরের বাহাজ্ঞান লোপ পেয়েছে রীতি-নীতির উধ্ৰে তিনি। সাধারণ লোকের কতটুকু বা জ্ঞান। মোহে অন্ধ, দর্পে কুটিল, লোভে অস্থির তার!

৮৫

রাণী আশ্বাস দিলেন। তিনি দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে রামকৃ্ককে শাসিয়ে আসবেন। প্রতিদিন এত নালিশ, এত অভিযোগ আসতে সুরু করেছে, একেবারে চুপ করে থাকলে চলবে নাতার। লোকে বলবে গদাধরের ওপর রাণীর পক্ষপাতিত্ব আছে। রাণীর ধর্মে-কর্মে মতি নেই। সবই লোক দেখানো মুখে শুধু ভগবানের নাম '

রাঁণী বললেন-_লোক যাবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে।

সবাই খুশী। এবার আর পাগল ঠাকুরের মুক্তি নেই !

মথুরবাবু এলেন কাউকে না জানিয়ে চুপি চুপিই এলেন তিনি মন্দির দর্শনে লোকজন সব তটস্থ! যে যার কাছে ব্স্ত সবাই। কাজের ফাকে ফাকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে একজন আর একজনের ওপর।

কথা খুব কম বাঙ্গন তিনি, গম্ভীর খুব। রাসমণি আসতে পারেননি ! জামাইকে পাঠিয়েছেন তিনি মন্দির পরিদধন করে দেবীর দ্বারে এসে দাড়ালেন মথুরবাবু। পরনে ধুণ্ত পাঞ্জাবী গায়ে আলোয়ান'

গদাধর ভাবে বিভোর তার কোনো ভ্রুক্ষে নেই : কে আছে কোথায়, তার তা খেয়াল নেই দিনরাত তার কিছুই জ্ঞান নেই দেবীর সিংহাসনের কাছে বসে ছেলের মতই আবদার করেন। অভিমান করেন। কখনও বা মাকে ধমকণ্ড দেন। মাটির যুতি তো নয়, যেন জাগ্রত প্রতিমা কখনও কাদেন, কখনও কথা বলেন দেবীর সঙ্গে

মথুরনাথ শোনেন সে কথা তিনি স্তম্তিত হন। ষুগ্ধহন। দিব্যভাবের কথা শুনেছিলেন, কিন্তু চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হয়নি সব চিহ্ন মিলে যাচ্ছে। মায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন ঠাকুর। মথুরনাথ শিক্ষিত ইংরাঁজী নবীশ হলেও দেব-দেবীর ওপর তার ভক্তি ছিল অবিচল। তিন্ন নির্বাক হয়ে যান, বাকশক্তি রহিত হয়ে যায়।

৮৬

ুপ্, স্তম্ভিত, আত্মবিস্থৃত মথুরবাবু দাড়িয়ে আছেন। এক দৃষ্টে তিনি দাড়িয়ে দেখেন। এদিক ওদ্দিক কর্মচারীরা কান খাড়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ বা কাজের অজুহাতে বারবার আসা-যাওয়। করছে। আক আর নিস্তার নেই গদাধরের।

হৃদয় কাঠ হয়ে যায়। মামার কাজ তো গেলই, তার চাকরিও বুঝি আর থাকলে! না। মন্দিরের সবাই একজোট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে তিলকে তাল করে তাদের নামে আরও অনেক রঙ চড়িয়েছে নিশ্চয়ই কাঠগোড়ার আসামীর মতো নিবাক থাকেন হৃদয়। নিজের কাক করে যান বিরস বদনে।

মথুরবাবু চুপচাপ এসেছিলেন, নীরবে দেখলেন সব। কপালে হাত ঠেকিয়ে শ্রদ্ধায় মাথা নত করলেন। দেকীকে প্রণাম করলেন, সেই সাথে গদাধরকেও নমস্কার করলেন তিনি যেমনি এসেছিলেন তেমনি নীরবে চলে গেলেন আবার

কারোর আশাই পূর্ণ হলে! না। কর্মচারীর! অবাক হলেন ! সেম্জবাবু কিছু বললেন না৷ গদাধরকে বরং যাবার সময় ভক্তিভরে নমস্কার জানিয়ে গেলেন পাগলের কথা শুনে এরাও বোধহয় পাগল হয়ে গেছে।

রাসমণি শুনলেন সব জামাইকে তিনি খুব বিশ্বাস করেন। ভার মথুর মিথ্যে কথা বলে না। মন রেখে তোসামোদ করতে জানে না। যা সত্য তাই বলবে অকপটে মথুর তার শুধু জামাই নয়, ছেলের মতো পেটের সন্তানও হয়তো তার মার জন্য এত করে না।

রাসমণি মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম জানালেন রামকৃষ্চের উদ্েশ্টে আদর্শ পুরুষ তিনি। মর্তের মানুষদের জ্ঞানচক্ষু ফোটাতে ধরায় জন্মেছেন যেন। মা'র প্রতিষ্ঠা সার্থক হয়েছে। দেবীর অশেষ কৃপা না হলে এমন পৃঙ্জারী তিনি পাবেন কেন? ধন্ত ছোট ভটচায, ধন্য সাধক রামকুষ্ণ। তার ডাকার আকর্ষণে মা

৮৭

নেমে এসেছেন তার মন্দিরে সর্বকালের পুণ্যতীর্থ পীঠস্থান হয়ে উঠলো দক্ষিণেশ্বর। ভক্তির বান ডাকলে।। রাণীর মনে আনন্দের জোয়ার এল দেবীর পাথরের মুতি জাগ্রত হয়ে উঠেছে

রামকৃষ্ণের কাছে ছুটে আসার জন্ত মনটণ খুব ব্যাকুল হয়ে ওঠে রাণীর। হাতে অনেক কাজ্জ। এই জরুরী ফাজ ফেলে এখন কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। তবু ছ'দ্রিন পর বাসমণি ছুটে আসেন

রাণীকে দেখে মন্দিরের কর্মচারীরা খুব খুশী হলো। তারা রাণীকে ঘিরে দাড়াল। নিশ্চয়ই পাগল ঠাকুরকে শায়েস্তা করতে এসেছেন তিনি। প্রত্যেকেই পাগল ঠাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে। রাদীর কাছে অল্পবিস্তর সকলেই ক্ষোভ প্রকাশ করলো একটু-আধটু মথুরবাবু গোড়া থেকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন

হৃদয় অদূরে দাড়িয়ে আছেন এতগুলে। লোকের বিরুদ্ধে তর্ক- যুদ্ধে নামবার মতো! তর্কবিষ্ঠ। তার জানা! নেই অহেতুক মাঝখান থেকে তিনি রাণীর কাছে খারাপ প্রতিপন্ন হবেন :

কারোর কোনো কথায় সাড়। না দিয়ে রাসমণি মন্দিরে এলেন। পুর্দো শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ কিন্তু গদাধরের তন্ময়তা তখনও কাটেশি। বিশ্ব সংসার ভুলে জগদম্বার পুজোয় মনপ্রাণ ঢেগে দিয়েছেন তিনি। হৃদয় এক ফাকে এসে মামাকে খবর দিয়ে গেছেন। রাণী এসেছেন মন্দির দর্শনে কথাট। হয়তে। গদাধরের কাঁনে যায় নি। ভার মন হয়তো তখন কোন্‌ অসীমের আকরধণে হাগিয়ে গেছে। ঠার চেতন হয়তো! লোপ পেয়েছে মায়ের ধানে বিভোর হয়ে আছেন তিনি

রাণী অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থ'কলেন। মায়ের একনিষ্ঠ সেবককে তিনি আকুলত। দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন। তাকে তক্ষণি কলকাতায় ফিরতে হবে রামকৃফ্চকে ডেকে তিনি তার ধ্যান ভাঙলেন না: কর্মচারীদের ওপর আবার তিনি কড়া! আদেশ দিলেন --ছোট ভটচাষ যা খুশী করবে, তার কাজে কারোর বাধা. দেওয়া

৮৮

চলবে না। যে তাকে বিরক্ত করবে, তিনি স্বহস্তে তাকে শাস্তি দেবেন।

রাণীর এই নির্দেশে কর্মচারীরা খুব অবাক হয়ে যায়। ভয়ও পায় তারা! মথুরবাবুর মতো রাসমণিও এসে একই আদেশ দিয়ে গেলেন অদ্ভূত ব্যাপার !

হৃদয় যেমনি অবাঁক হলেন, তেমনি খুশীও হলেন মনে মনে। মামাকে মন্দির থেকে দ্উে সরাতে পারবে না আর। নালিশ করতে গেলে উল্টে। ফল হবে। "আর ছুশ্চিন্তার কারণ সেই খুব ভালোই হলো এবার কেট কিছু লতে এলে বেশ কডা করে ছু'কথা শুনিয়ে দিতে পারবেন ' আর তে! তাকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না। সেজবাঁবু মামাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। ত্বয়ং রাণীম! তার মামার পক্ষে বয়েছেন। চুনোপুটির কথা কনে না তুললেই চলবে

পন্দের

সমস্ত জগৎ আন্ত রাণী রাসমণির নাম শ্রদ্ধাভরে ম্মরণ করে। ঠাকুরের মর্তলীলার সহচরী হিসাবে তিনি অমর হয়ে আছেন আছে মানুষের মনে ঠীকুরের চরম সিদ্ধিলাভে রাণী রাসমণি ছিলেন অন্যতম সহায় তিনি রামকুফের সাধনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন, বড হাতে ভার সাধন পথের বাধ! দূরে সরিষে দিয়েছিলেন তার সতর্ক দৃষ্টিব জঙ্গ কোনো চক্রান্তের জাল দানা সঁপে উঠতে পারেনি তার মতবাদ এবং ভগবৎ গেম ছিল অটুট। রাণী ছিলেন অসামান্য! ছোট ভটচাষকে তিনি প্ররুক্ষি মায়ে সাধক রূপে চিনতে পেরেছিলেন।

রাণীর কড। নির্দেশে কর্মচারীরা দমে যায় খুব' তারা আর অহেতুক গোলযোগ করতে একজোট হয় না। হৃদয়ের সংগে তাদের

৮৯

ঝগড়া লাগে না। হৃদয় ভাবেন, তার মাম! সাধারণ মানুষ নন। মামাকে তিনি যা ভেবেছেন, তা হয়তো নয় ! মথুরবাবু শিক্ষিত বুদ্ধিমান লোক অনেক জানেন। এত বড় জমিদারী চালাচ্ছেন, বিরাট ব্যবসার তদারক করছেন--তার চোখে ধুলো দেয়াতো। সহজ কথা নয়৷

গদাধরের সুখ্যাতি তখন বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। একজন সিদ্ধপুরুষ হিসাবে তার খুব নাম-ডাক অনেক লোকের সমাগম হয় দক্ষিণেশ্বরে কালীমন্দিরে

জগৎ সংসারের ত্রাণকর্তা গদাধর হলেন রামকৃ্চ। কে দিল নাম? কেউ কেউ বলেন পরম ভক্ত মথুরনাথ নাম রেখেছিলেন গদাধরের রাণী রাসমণির কাগজপত্রে লেখা হয় রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ঠাকুরও অবশ্য সে কথা বলেন-_মথুরবাবু লিখতেন রামকৃষ্ণ বলে সৌম্য শাস্ত এই মানুষটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন অনেকেই

রাণীর বরাদ্দ লিপিতে রামকৃষ্ণ নামের উল্লেন আছে।

১৮৫ খুঃ-১২৬১ সাল

শ্রীশ্রীকালী-_ কাপড়-- কত্রীরামতারক ভট্টাচার্য -৫২ রামতারক জোড়া-_9॥ শ্রীরাধাকান্তজী রামকৃষ্ণ জোড়া---৪॥ শ্রীরামকষ্ণ ভাট্রাচার্--৫২ হৃদয়রাম জোড়া-7৪॥০ পরিচাঁরক খোরাকীসিদ্ধি চাউল-_-/॥*

শ্রীহদয়রাম মুখোপাধ্যায় ৩।* ডাল /৮/* পোঃ, পাত খানি, তামাক ছটাক, কাষ্ঠ /২॥ আবার কেউ কেউ বলেন, তোতাপুরী প্রথমে গদাধরের নাম রামকৃষ্ণ রাখেন। কিন্তু তোতাপুরী দক্ষিণেশ্বরে আসেন বাংল। ১২৭১ সালে। তার অনেক পূর্বে ১২৬২ সালে ঠাকুর যখন রাধাকান্তজীর মন্দিরে পূজারী, তখন থেকেই রাণী রাসমণির বরাদ্দ লিপিতে লেখ। ছিল শ্রীরামকৃষ্ণ ভটচাঁষ বলে।

১৩

প্রসঙ্গে আরো একটি মত চালু আছে। কেউ বলে ভৈরবী নাম রেখেছেন গদ্াধরের, ১২৬৮ সালে তিনি দক্ষিণেশ্বরে আসেন নাম নিয়ে যতই তর্ক হোক, রামকৃঞ্চ এখন মোটেই সুস্থ নন ঠাকুরের প্রায় উন্মাদ অবস্থা জলে গল! ডুবিয়ে বসে থাকেন। গায়ে জ্বালা মথুরবাবু চিন্তিত হয়ে পড়েন। চারদিকে লোক ছুটলো৷ ভালে কবিরাজ্জ চাই গঙ্গাপ্রসাদ সেন এলেন! দেখলেন রামকুঞ্ষকে। তিনি বললেন--সারাবার চেষ্টা করবো মারাত্মক বায় রোগ এই সময় দক্ষিণেশ্বর এলেন ভৈরবী চঠ্গরিকবসন ত্রহ্মচারিণী ভৈরপী ব্রান্মণী যোগেশ্বরী ভৈববী এসে দাড়ালেন মন্দির প্রাঙ্গনে সংগে মথুরবাবু রামকু$ বসে আছেন পাগল মানুষ নিজের খেয়ালেই বসে থাকেন। ভৈরবী দেখলেন আগ্রহ ভরে, পাগল! কে বলে পাগল? ভৈরবী মথুরবাবুকে বললেন, £ক বলে বামু রোগ ? একো দেখছি মহাঁভাব। ভাব সকলের হয় না। হয়েছিল শ্রীরাধার। আর হয়েছিল মহা প্রভূ গ্রীচৈতন্যদেবের ইনি অসতার ! কলির দেবত ! ৈরবী স্থান কাঁল ভূলে গেয়ে উঠলেন-- “করতালি দিয় মাগী নেচে নেচে বলে এইত গৌরাঙ্গ দেব নিতাইয়ের খোলে হৃদয় আনন্দময় তাহার উচ্ছ্বাসে যথা তথ পুরীমধ্যে এই বার্তা ঘোষে। এই রামকুঞ্জ সেই গৌর গুণধাম। সাবাস্ত সহ দেয় শাস্ত্রের প্রমাণ মথুরনাথ রামকষ্ণকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন! ভালও বাসেন। রামুর সংগে তিনি একদিন কথা বলছিলেন সময় আর স্থুযোগ পেলে তিনি মন্দিরে চলে আসতেন রামকুষ্ণ মথুরনাথকে বললেন জানিস, ভগবান ইচ্ছ। করলে সব কিছু করতে পারেন

৯১

রামকুঞ্চ সকলকেই তৃই-তোকারী করে কথা বলতেন। আপনি 'তুমির ধার দিয়ে একবারও হাটতেন না। বিরক্ত হলে শাল! সম্বোধন করতেন ছোট বড় কেউই বাদ যেত না।

রামকৃষ্ণের সব কথাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন যুক্তি- তর্কের ধার ধারতেন না ঠাকুরের ক্রিয়াকবাপ যুক্তির দ্বারা বিচার করা যাবে না। বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসের মাত্রাটাই বাড়বে তাতে কি খেয়াল বশত? সেদিন তিনি ঠাকুরকে বললেন,

--আপনার ভগবান ইচ্ছচ করলে সব করতে পারেন?

-আলবাৎ পারেন

বেশ জোর দিয়ে বললেন রামকৃষ্ণ

--বেশ।

অদূরে একটা জবা গাছ দেখা যাচ্ছিল। টকটকে লাল জবা ফুটেছে অনেক পাতা দেখা যায় না এই জবা গাছট। দেখিয়ে মথুরবাবু বলঙ্গেন,

গাছের €কট। ডাঁনদে এই লাল জপার সাথে সাদা জব! ফোটাতে পারেন আপনি ?

মথুরবাবু মুখ টিপে টিপে মুচকি হাসলেন

--পারিরে শাঙ্া পারি কাল ভোরে আমসিস। আমার ম! সব পারেন

রামকুষ্ের গলা! দিধাশৃণ্য যেন একট! খুব সহজ কাজ

কথা আর শ। বাড়িয়ে চল গেলেন মথুবনাথ। কাল ভোরে এসে কি দেখবেন কে জানে? রামকুষ্জ তো মিথ্যে কথা বলেন না এর অসম্ভব ঘটনা কি কার সম্ভব হবে ভীষণ এক চিস্তার মধ্যে পড়েন তিনি পবের দিন ভোর হতেই মথুরবাবু ছুটে এলেন। 'জবা গাছের কাছে এস দাড়ালেন

একি দেখছেন তিনি? স্বপ্ন দেখছেন নাতো? চোখ রগড়ে নিয়ে আবার দেখলেন মথুরনাথ। না, একই দৃশ্য না, কোনে।

৯২

ভূল নয়, এক বোটায় ছুটি ফুল, একটি লাল একটি সাদা। অন্য ডালে আগের মত লাল ফুল ফুটেছে প্রচুর

মথুরনাথ ছুটে এলেন রামকৃষ্ণের কাছে। পায়ের ধুলে। নিলেন তিনি ছোট ভটচাষের।

--কিরে শালা, কি দেখে এলে

রামকৃষ্ণ গঙ্গার তীরে বসেছিলেন। প্রভাতের শান্ত সমীরণে মায়ের নাম গান করছিলেন তিনি

--আপনার কথা কাল আনি বিশ্বাস করিনি, তার জন্য খুব অন্ভুতপ্ত।

মথুরবাবু বললেন তাকে।

--দেখলি তে! এখন। ভগবান ইচ্ছে করলে সব পারেন

রামকৃষ্ণের যুখে একট। খুশীর হাসি খেলে গেল |

রাঁণী রাসমণি খুব ভাবেন, তিনি জীবিত থাকতে থাকতে মন্দিরের একট! মর্দিষ্ট মায়ের ব্যবস্থা কর রাখ! প্রয়োজন। মৃত্যু তে! মানুষকে জ্রানিয়ে আসে না। ভকিষ্যতের কথ। ভেবে তার হত দুশ্চিন্তা তার অবর্তমানে রামকুষেের 2৫ হবে? ঠাকুর কষ্ট পানেন খুব হয়তে। পুজা বন্ধ হয়ে যাবে।

দশ হাঁজার টাকার আয়ের সম্পত্তি ঠাকুরের নামে দঙ্গিল করে দিলেন রাণী। আর তার চিন্তার কারণ নেই। দানপত্রটি নিয়ে মখুরবাবু এলেন দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের হাতে তুলে দি;লন দকিজিটি |

রামকু্জ প্রথমে বুঝতে পারেননি ব্যাপারটা তিনি অন্যমনস্ক ছিলেন। পরে দলিলটি ছুড়ে ফেললেন মাটিতে ঠাক্‌র বাশ তুলে তেড়ে এলেন,

তবে রে শালা) আজ তোর মাথ! গুড়ে। করে ফেলবে আমাকে বিষয়ী করতে চাস।

মথুরবাবু ছু'পা৷ পেছনে সরে এলেন। তার লোকজন হাহা করে উঠল। কেউ কেউ মারমুখে। হয়ে এগিয়ে আসে মথুরবাবু হাতের

৪৩

ইশারায় তাদের থামতে বললেন। বৃথাই তার! ঠাকুরের ওপর উত্তেজিত হচ্ছে। দলিলটি টুকরে৷ টুকরো! করে ছি'ডে ফেলে হাত জোর করে মথুরবাবু, সামনে দাড়ালেন,

--আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।

ঠাকুর বাশ নামালেন। শান্ত হলে অগ্নিমূতি |

আাঁনবাজারে বসে রাণী শুনলেন সব কথা ঠাকুরকে তারা সত্যিই চিনেছেন। বহু স্ুকৃতির ফলে তারা এই পরম পুরুষকে পেয়েছেন। তিনি ঠাকুরের সাথে দেখা করতে এলেন দক্ষিণেশ্বরে | তিনি খুব বেশি আসতে পারেন ন1।

ক'দিন বাদে মথুরবাবু এলেন খুব বিমর্ষ বদনে। তার স্ত্রী জগদন্বা অন্ুস্থ। শ্ত্রী তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় জগদন্বার শুকনে। মুখ তিনি একদম সহ্য করতে পারেন নী তার অন্তর ব্যাকুল হয়ে ওঠে তখন।

অন্ুুখটা ক্রমশই বেড়ে চললো, কলকাতার কোনো 'ডাক্তার কবিরাজ তিনি বাদ দিলেন না দেশী-বিদেশী সকলকেই বাড়িতে ডেকে আনলেন। চিকিৎসা চললো পুকোদমে কিন্তু রোগ সারার কোনে! লক্ষ্মণ নেই কিছুতেই কিছু হয় না।

মায়ের প্রাণ, স্বামীর মন, যে যা বলে তারা তাই করেন, ওষুধ পথ্যের ক্রটি নেই। কিন্তু জগদন্বার কোন উন্নতি হয় না। দিনে দিনে অন্ুুখ বাড়তেই থাকে অবস্থ। এমন হলে যে বাঁচার আর আশা রইল না। প্রদীপের ক্ষীণ শিখার মতে। প্রাণটুকু সম্বল রইল দেহে। যে কোনে মুহুর্তে নিভে যেতে পারে প্রাণের স্পন্দন। শেষ মুহূর্তের জন্য সবাই প্রস্তুত এখন

রাণীর চোখে ঘুম নেই। সময় মতো! খাওয়। হয় না। কম্ঠার শিয়রে অতন্দ্র প্রহরীর মতে! জেগে থাকেন তিনি। একটি বন্তা তার মারা গেছে আগে। ভগবানের পায়ে শত কোটি প্রণাম জানান। অস্তরের আকুলত। দিয়ে তার নাম গান করেন।

৯৪

মথুরবাবুর মনের অবস্থাও তাই চোখে ঘুম নেই। মনে শান্তি নেই। যতবারই জগদস্বার শেষ মুহূর্তের কথ! মনে পড়ে-_ রামকৃষ্জ চোখের সামনে এসে দাড়ান বেশ স্পষ্টই দেখতে পান যেন। একবার ছু'বার নয় প্রতিবারই একটা ছায়া মৃতি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠিন। রামকৃষ্ঞ যেন দু'বাহ্ু প্রসারিত করে তাকে কাছে ডাকছেন শান্ত হতে বদছেন। মনত্ভার প্রবোধ মানে না।

রাপমণিও দেখেন সেই একই মুতি। চোখ বুজলেই অস্তর দৃষ্টিতে দেখতে পান রামকৃষ্ণকে ' সেই সৌম্য শান্ত আদর্শ মানুষটি যেন তার সামনে এসে দাড়িয়েছেন। রাণী আর নীরব থাকতে পারলেন না। জামাইকে বললেন সে কথা

মথুরনাথ আর স্থির থাকতে পারলেন না অনেকদিন দক্ষিণেশ্বরে তার যাওয়। হয়নি হয়তে। ঠাকুর তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বারবার এই দেখা দেওয়া কেন? মুমূর্ষু পত়্ীকে রেখে ভিনি, ছুটলেন দক্ষিণেশ্বরে |

মন্দিরের গায়ে হেলান দিয়ে রামকৃষ্ণ বসেছিলেন মথুরবাবু এসে দাড়'লেন সামনে

-_-এসেঁছিস যখন মাকে প্রণাম ইপে যা। কানে চিন্তা নেই। (দেখগে ভালে। হয়ে গেছে।

রামকৃষ্ণ আপন খেয়ালে বলে উঠলেন।

মথুরবাবু অবাক! অবাক হ'বারই “তা কথা। তিনি তো এখনও কিছু জানান নি। ছোট ভটচায দি অন্তর্ধামী? রামকৃষ্ণ মানুষ নন! দেবতা। তিনি রামকৃষ্জের প1 ধরে প্রণাম করলেন। রামকৃষ্ণ তাকে ছু'হাত দিয়ে সরাবার £চষ্টা করহেন। কিন্তু তান পারবেন কেন মথুরবাবুর সংগে

দেরী না করে বাড়ি ফিরলেন মথুরবাবু। বাড়ি ফিরে দেখেন তীর প্রিয় জগদস্বা৷ উঠে বসেছে এখন অনেক সুস্থ যাবার সময় পর্যস্ত জগদন্বা তার সংগে একটি কথাও বলতে পারেনি। ন্ড়বার

৯৫

ক্ষমত। তার হিল না। কি করে অসম্ভব কাজ সম্ভব হলো? ঠাকুর তো! কোনে। ওষুধ দেননি তাকে শুধু মুখের কথায় এত অল্প সময়ের মধ্যে কি করে ভালো হলো ? মানুষের কর্ম নয় এটা! স্বয়ং ভগবান ধর কাছে ধরা দিয়েছেন, তাঁর অসাধ্য কি থাকতে পারে?

এই ঠাকুর, একবার শ্রীম! অসুস্থ হয়ে পড়লে খুব কাতর হয়ে পড়েছিলেন প্রাণ ঢেলে তিনি খন সেবা! করেছিলেন শ্্রীমার কন্তাৰ প্রাত জামাইয়ের এই কর্তব্য বোধ দেখে শ্রীমার বাবা খুব খুশী হয়েছিলেন ?

--কে বলে আমার জামাই পাগল? আমার জামাই আদর্শ ক্বামী। বহু ভাগ্যে খামার সার মা] এমন স্ব!মী পেয়েছে

'€ই সময় ঘটলে। এক অঘটন সারা মন্দিরের প্রতি মানুষের টনক নড়ে উঠলে। | কি করা যায় এখন? কি করা উচিত হবে? পূজারী ক্ষেত্রনাথ নোবা হয়ে গেছেন একেবারে

সে'দন “ছল আনযাত্রার দিন বাগা গেবিন্দেশ মন্দিরের পৃজারী মৃতি নিয়ে যাচ্ছিপলন গঙ্গার ঘটি ঠাকুরকে স্নান করাবেন তিনি। সকাল পেকে বৃষ্টি হ'চ্ছিল। পথঘাট জলে ভিক্রে গেছে। মাটি ভীষণ পিছল হয়েছে. কোথাও শ্যাওস', কোথাও বা কাদ। হয়েছে

ক্ষেত্রনাথের হাতে গোবিন্দের মুতি। অতি. সযতত্ব তিনি পথ দিয়ে হাটছিলেন। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলেন ভিনি। মৃতি হাত থেকে ছিটকে গিয়ে পড়লে। মাটিতে নিজের ব্যাথা ভুলে ক্ষেত্রনাথ চটপট উঠে পড়েন

চারিদিকে হৈ হৈ পড়ে যায়, ছুটে আসেন অনেকে, কী সবনাশ একী অলক্ষুণে কাণ্ড দারুণ অমঙ্গলের চিহ্ন ভগবান নিশ্চয়ই রুষ্ট হয়েছেন কারোর ওপর ভালয় ভালয় এখন বছরট? কাটলে হয়।

গোবিন্দের একটি পা ভেঙে গেছে সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। ক্ষেত্রনাথ ভয়ে কাপতে থাকে। ছর্ডাবনার তার:

৭৬

প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে ক্ষেত্রনাথের মুখে কোনো কথা নেই। তিনি একেবারে নির্বাক:

তুমুল আলোড়ন পড়ে ষায়। খবরট। সংগে সংগে রাণীর কাছে শিয়ে পৌছয়। খবর পেয়ে রাসমণি জানবাক্ার থেকে ছুটে আসেন দক্ষিণেশ্বরে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় তার মন অস্থির হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে তার এক মেয়ে কঠিন অস্থুখ থেকে উঠেছে আবার হয়তো! কোনে অশুভ ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে তীকে 1.

ক্ষেত্রনাথ মাথা নীচু করে এসে রাণীর সামনে দাড়ান। যা হবার হয়ে গেছে খুব সাবথানেই তিনি হাটছিলেন। ভাগ্যের লিখন খগ্ডাবে কে?

মাথা গরম হলেও রাণীর বিবেচনা-বুদ্ধি লোপ পেত না। বুঝলেন--£ট1 একট। হুর্ঘটনা। ক্ষেত্রনাথ নিরপরাধ যে কেউ জল কাদায় পা পিছলে পড়ে যেতে পারতে! ক্ষেত্রনাথকে তাই তিনি কিছুই বললেন না।

বৈষ্ণবাচার্ধদের সভা বসছে]! ভারা একবাক্যে রায় দিলেন, ভাঙ্গ। মৃতির পুজা হতে পারে না। গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া? উচিত নতুন মৃতি স্থাপন করচ্ে হবে সিংহাসনে শান্ত্রের বিধান মেনে শাস্ত্রমতেই নির্দেশ দিলেন রাণীকে

বাসমণির মন£পুত হল না সেই বিধান। আদেশ মেনে নিতে ভার মন চায় না। এতদিন ধাকে গোবিন্দ জ্ঞানে পুজো করলেন, তাকে বিসর্জন দেবেন কি করে? গোবিন্দ বিসর্জন দিলে আর বাকি রইলো! কি? খুব নির্মম বলে মনে হল এই নির্দেশ

রাসমণির মনে হলো--রামকৃষ্ণ কি বলেন প্রসঙ্গে? ভার মত নেওয়া খুব প্রয়োজন। তিনি তে! নিজে কোন ব্যাপারে মাথ। ঘামান না। নিজের খেয়ালে বিভোর সর্ক্ষণ। তিনি জীবন্ত বিগ্রহ তিনি য। নির্দেশ দেবেন, তাই মেনে নেবেন রাসমণি

নিরালায় রামকৃঞ্ণের কাছে এসে বসলেন রাণী। জানালেন তিনি তার মনের অভিপ্রায় পণ্ডিতদের বিধানের কথাও বললেন তাকে

৯৭ রাসমণি--৭ .

এক মনে প্রথমে শুনলেন রামকৃঞ্ণ। তিনি বললেন--পড়ে গিয়ে তোমার কোন জামাইয়ের পা ভাঙ্গলে কি করতে তুমি? আর একট। নতুন জামাই আনতে, না, পা সারিয়ে নিতে?

তাইত ! এই সহঙ্জ কথাটা ভার মাথায় আসেনি রাসমণির মনের উদ্বেগ দূর হলো রামকৃষ্ণ তে। ঠিক কথাই বলেছেন। সত্যিই তো, জামাইয়ের পা'ট। সারিয়ে নিতেন তখন। তাকে ত্যাগ করার কথাই আসে না।

রাসমণি রামকৃষ্ককে ধরে বসলেন। তাকেই সারাতে হবে। ভাঙ্গা পা নিখুতভাবে জোড়া লাগিয়ে দিতে হবে। দেখে যেন কেউ বুঝতে ন। পারে।

রামকৃষ্ণের শিল্পপ্রতিভা ছিল অদ্ভুত।

বৈষ্বাচাধদের অভিমান হলো। তার! ক্ষুপ্ন হলেন। তার শান্ত্রজ্ঞ। তার! পণ্ডিত। তাদের নির্দেশ অবহেলা করলেন রাণী। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। রাণীর দেওয়া নি সিধে এগুলি কম নয় চলার পথে

রামকৃঞ্ষকে অতি সম্মানের সংগে রাণী সার জানবাজারের বাড়িতে এনে তুললেন। অনেক দিনের সাধ পুর্ণ হলে! এতদিনে মানুষটিকে তিনি নিজের হাতে সেবা করবেন। কাছে বসে খাঁওয়াবেন। নিরিবিলি ধর্মালোচনা। করবেন।

আত্মলোভা মানুষ তন্ময় হয়ে থাকেন প্রায়ই। কখন কথ বলেন, কখন ভাবে বিভোর হয়ে থাকেন। মথুরবাবুঃ শ্রীজগদস্বা আর রাণী রাসমণি রামকৃষ্ণের অন্থুগত ভক্ত। জীবন্ত বিগ্রহের মতো শ্রদ্ধা করেন তারা

অঘটন ঘটলে। হালদারকে নিয়ে হালদার হ'চ্ছেন রাণীর বাড়ির পুরোহিত জানবাজারের জমিদার বাড়ির পুরোহিত তিনি। দাপট কম হবে কেন? তার ভীষণ অহঙ্কার

হালদার মশাই শুধু অহঙ্কারী নন, তার স্বভাবটাও ছিল খুব হিংসুটে। লোভও ছিল খুব। এই আধপাঁগল। লোকটার এত

৪১৮

খাতির যত্ব সহ হলো না। আদর যত্বের ঘট! দেখে তাঁর খুব হিংসে হলো। রাণী, জামাই, মেয়ে সকলেই হাত ছোড় করে রয়েছেন।. কখন পাগল কি বলে সে কথ। শোনার জন্য উদগ্রীব তারা গুরুকেও মানুষ এত খাতির করে না এক এক সময়।

রামকৃষ্কে দেখার পর থেকেই হালদারের চোখে ঘুম নেই। অনেক ভেবেচিন্তে হালদার মশাই ঠিক করলেন--এ পাগল! নিশ্চয়ই মন্ত্র জানে। হতভাগা পাগলাটা শেষ পর্যস্ত পুরোহিত ন। হয়ে বসে। লোকটির জন্য তার প্রভাব প্রতিপত্তি সব নষ্ট হয়ে যাবে একবার সুবিধা মতে। বাগে পেলে বশীকরণ মন্ত্র শিখে নেবেন তিনি

কিন্তু স্বযোগ পাওয়া মুক্কিল। . এক পাওয়া যায় না তাকে। রাণী, জামাই, মেয়ে কেউ না কেউ কাছে কাছে থাকেন। হালদার মশাই ঘুর ঘুর করে ঘুরে বেড়ান। তিনিও তালে তালে থাকেন।

সুযোগ একদিন এসে গেল রামকৃষ্ণ বসে আছেন বৈঠকখানায়। কি ভাবছেন কে জানে। তন্ময় ভাব। সুযোগ পেয়ে হালদার তেড়ে এলেনু। শুনতে আকাশের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়েছিলেন ঠাকুর কদিন ধরে নিজের হাতে মায়ের পুজো। দিতে পারছেন না। মনট! রামকৃষ্ণের এমনিতেই অস্থির হয়ে উঠেছে ।--.এই পাগল। বামুন।

হালদার খুব রেগে গেছেন তার ওপর

রামকৃষ্ণের কানে কথা পৌছল না। তিনি তখন ভাবে বিভোর ভীষণ তন্ময়

হালদার আরেো। রেগে গেলেন। ভাবলেন তার কথ। কানে নিচ্ছে না। গ্রাহা করছে না তাকে !- আমর আর মানুষ নয়) না। রাজা, রাণী ছাড় বুঝি কথার যুগ্যি আর কেউ নয়।

রামকৃ্চ কোনে। উত্তর দিলেন না। রামকৃষ্ণের নীরবতায় হালদারের রাগ আরো বেড়ে গেল।

--কাল। নাকি? কথা কানে যাচ্ছেনা নাকি? এক খাবি বুঝি সব? সেটি হচ্ছে ন7া। আমাকে ভাগ দিতে হবে। নইলে ব্যবসার গণেশ উল্টে দেব। আমি বাড়ির পুরোহিত

৪১৪)

কথা বলার মোটেই ইচ্ছে নেই রামকৃু্ণের। তারপর ধরণের কথ! শুনতে অভ্যস্ত নন। কি জবাব দেবে এর

রাগে ফেটে পড়লেন হালদার।

--তবে রে শালা কথার জবাব দিবিনে। তবে দেখ।

রামকৃষ্ষকে ধাকা দিয়ে মেজেয় ফেলে লাথি মারতে মারতে হালদার আবার বললেন--দেখ শালা, কেমন লাগে। মন্দির হাতিয়ে আবার এখানেও হাত বাড়ানোর মতলব।

যাবার সময় হালদার শাসিয়ে গেলেন,

-৮সজবাবুর কানে তুললে নির্থাৎ মারা পড়বি। তোকে আর এখান থেকে ফিরে যেতে হবে না। মনে রাখবি, আমি হালদার ঠাকুর, তোর মতো! অনেক বিটলে বামুন চড়িয়েছি।

রামকৃষ্ণ গায়ের ধুলো! ঝেড়ে উঠে বসলেন। কাউকে কিছু বললেন না। অযথা কোলাহল করে কি লাভ! সব মাম্থৃষ কি আর সমান হয়। ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করিলেই কি আর ত্রান্ষণ হওয়া! যায়?

কথাট। কিন্তু গোপন রইল ন1। রাণীর কানে গেল। মধুরবাবুও শুনলেন। রাসমণি মথুরনাথকে বললেন-.

--এ অন্যায়ের বিহিত তোমায় করতেই হবে। রামকৃ্জের প1 ধরে তাকে ক্ষম। চাইতে হবে। নতুবা '****"

--আপনি ব্যস্ত হবেন না মা। আমি এখন জীবিত

মধুরবাবু বেরিয়ে আসেন। রাগে কাপতে কাপতে তিনি রামকৃষ্ণের সামনে এসে দাড়ালেন

সব কি শুনলাম ঠাকুর? হালদার আপনাকে লাখি মেরেছে? আজ ওর নাথ কেটে গঙ্গায় ভাপসিয়ে দেব তবে আমার নাম মথুর।

রামকৃষ্ণের মনে কেনো ক্ষোভ নেই। কোনে ছুঃখ নেই। ভার সুখে প্রশান্তির হাসি

--এত চটছে! কেন সেজবাবু?

২৩০

আপনার গায়ে হাত! আমি ওকে হত্যা করবো।

মুরবাবু ভীষণ রেগে গেছেন। ধাঁকে ইঠ্ট-জ্ঞানে ভক্তি করেন তার গায়ে পা তুলেছে!

তাইতো তোকে বঙ্িনি আমি। যাঁই করে থাক, লোকট। রাগের বশে করে ফেলেছে রাগ পড়লে বুঝবে তখন। রাগলো বলে কি আমরাও রাগবে। ?

রামকৃষ্ণ শান্ত নিগ্ধ হাসিতে যুখখান। ভরে তুললেন

মথুরবাবুর ক্রোধ শাস্ত হতে চায় না।--এর চেয়ে আমাকে হঃখ দিলে আমি ওকে তবু ক্ষমা করতে পারতাম আপনি আমাকে নিষেধ করবেন না। ওজানে নাকি চরম অগ্তায় করেছে।

রামকৃষ্ণ মথুরবাবুর গায়ে শ্রীহস্ত বুলিয়ে দিলেন।

--সেজবাবু, মানুষের মানুষকে ভালবাসাই হলো একমাত্র ধর্ম, সাধন, শক্ন সব। শত্রুকে বশ করবে ভালবাসা দিয়ে ক্রোধকে দমন কুরতে হয় প্রেম দিয়ে। তুমি ওকে ক্ষমা কর। নতুবা আমি দুঃখ পাবো খুব

হালদারকে আর শাস্তি দেওয়া হালে না মথুরবাবুর। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন তিনি রামকুঞ্ককে ছোট ভটচাষ মানুষ নয়; দেবত।, অবতার

ষোল

রামকৃষ্ণকে দিয়ে আর নিয়মিত মন্দিরের পুজে। চালানে। সম্ভব নয়। তিনি দেবীর পুজোর দিকে লক্ষ্য রাখবেন কি, এখন তার যে অবস্থা তার উপরেই লক্ষ্য রাখা ভীষণ প্রয়োজন কেবল সর্বক্ষণ মা-মা। কখন কোথায় পড়ে থাকেন খেয়াল নেই। তিনি এখন সমস্ত কাংজর বাইরে দেহ ভীষণ ভেঙে পড়েছে।

আবার পুরোদমে তীর চিকিৎসা শুর হলো। গঙ্জাপ্রস।দ সেন এলেন। বার.জন্য রানীর এত আয়োজন, এত ছুশ্চিন্তা, তিনি

৯০৯

একেবারে নিবিকার। কোনে কিছুই গ্রাহহ করেন না। যেহা করে আপত্তিও করেন ন1।

দেবীর মন্দিরে নতুন পুজারী এলেন। রামকৃষ্ণের খুড়তুতো ভাই রামতাঁরক চট্টোপাধ্যায় ভার নিলেন মায়ের পূজার। রাণী নিশ্চিন্ত হলেন। ভালই হলে!। ঠাকুরের লোক পাওয়। গেছে। রামকুমার মন্দির প্রতিষ্ঠ। করেছিলেন। তারপর দেবীর ভার নিলেন গদাধর। এবার ভার ছোট ভাই রামতাঁরক নতুন পুজারী হয়ে এলেন। সংগে ভাগ্নে হৃদয় রইলে। রামকুঞ্ণ সুম্থ ন। হওয়া পর্যস্ত ইনিই পুজারী থাকবেন

সবাইয়ের দৃষ্টি এখন রামকৃষ্ণের ওপর মথুরবাবু সাবধান করে দিয়েছেন- ছোট ভটচাষের ভালমন্দ কিছু হলে, তিনি একজনকেও মন্দিরে রাখবেন না। সবাইকে দূব করে দেবেন। মথুরবাবু নিজে খোঁজ-খবর £নন। কিন্তু রামকৃষ্ণের দৃষ্টি নেই কারোর উপর। তার য। কিছু আলাপ, মান, অভিমান, পরামর্শ সব মায়ের সংগে

প্রায় একমাস হলে। রামতারক মায়ের পুঞ্জে করছেন। ভিন্ওি ভাইয়ের উপর নজর রেখেছেন এখন বেশ নিয়ম-রীতি মেনে পুজো হচ্ছে মন্দিরের কর্মচারীর! খুশী হঠাৎ দেশ থেকে খবর এলো, তার ছেলে মারা গেছে। রামতারক দেবী-পৃজে। ছেড়ে দিলেন তিনি রাধ। গোবিন্দজীর পূজোর ভার নিলেন এর পর থেকে অগত্য। হৃদয়ের উপর মায়ের পৃঙ্জোর ভার পড়লে!

ব্যবস্থাট। হৃদয়ের মনঃপুত হয়। বেশকারী থেকে পৃজারী হলেন, পদ্দোন্নতি হলো হৃদয়ের |

যতদিন যেতে লাগল ততই রাণী মথুরবাবু আরো! বেশি করে ঠাকুরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে লাগলেন। রাণী ভাবেন-- ছোট ভটচাষ কি ভালে। হবেন না? মন বলে, নিশ্চয়ই হবেন গদাধর আবার সুস্থ হবেন আগের মতো! রাণী নির্ধেশ দিলেন-_- যত খরচ হয় হোক, ছোট ভটচাধের চিকিৎসা যেন বন্ধ ন। থাকে।

ঠাকুর জানবাজারে মথুরবাবু যে ঘরে শুভেন, সে ঘরেও তিনি

১০২

মাঝে মাঝে রাত কাটাতেন। রাণী যদ্দি ঠাকুরের প্রতি এত আকৃষ্ট না হতেন, তাহলে অনেক অত্যাচার সহা করতে হতো রামকুঞ্কচকে রাণীর ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও কেউ গদাধরের .উপর অত্যাচার করতে সাহস করতো না। মনে মনে তাকে অন্ান্ত কর্মচারীরা খুব হিংসে করতো

দক্ষিণেশ্বর তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠল সার! পৃথিবীর কাছে পরিচিত হলো। সে। দক্ষিণেশ্বর হলে। সিদ্ধগীঠ গদাধর এখানে সিদ্ধিলাভ করে ঠাকুর রামকৃ্চ হলেন এখানেই অবিশ্বাসী নরেন স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে বিশ্বজয় করেন। পাশ্চাত্য জগতের লোক চমকে উঠল। ভগ্মী নিবেদিত। এলেন ভারতের ছুহিতা হয়ে।

মন্দির তৈরী করে গদাধরকে সহায়তা করে রাণী রাসমণি স্মরণীয় হলেন জানবাজারের মাহিষ্য জমিদার বংশ ধন্য হলো। গয়, কাশী, প্রয়াগ, বৃন্দাবনের মতে। পূর্ণ ক্ষেত্র হলো দক্ষিণেশ্বর

সরই রাণী রাসমণির পুণ্য কর্মের ফল। সার্থক হলে রাণী রাসমণির দান উদ্ভম, সার্থক হলে! মথুরবাবুর চেষ্টা যত্বু, ধন্য হলে। ভারতবর্ষ যুগবতার গ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাবে। লোকে বিস্ময়ে, সম্ভ্রমে ঠাকুরের পায়ে শরণ নিতে ছুটে এল দক্ষিণেশ্বরে তৃপ্ত হলো ঠাকুরকে দর্শন করে, মন্দিরের মাকে দর্শন করে, অসৃতের স্বাদ পেয়ে।

রাণী এখন প্রায়ই আসেন ঠাকুর বাড়িতে ছোট ভটচাষের গান শোনেন। গান তে। নয় যেন স্ুধার-ধারা। রাসমণি গান শুনতে শুনতে অন্ত জগতে চলে যেতেন। ভাব-সাগরে ডুবে যেতেন

রাণী আজ দক্ষিণেশ্বরে এসেছেন গঙ্গায় আান করে পবিত্র হয়ে এলেন। মাকে দর্শন করতে মন্দিরে যাবেন বিষয়-কর্মের কালিম। সব গঙ্জায় বিসর্জন দিলেন। রাসমণি প্রণাম করে মার মুতির সামনে এসে আহিছে বসলেন।

ছোট ভটচায সামনে বসে মার নাম গান করতে থাকেন। গেয়ে উলেছেন গঙ্গার শআ্োতের মতো!। গদাধর ভাবে বিভোর হয়ে

১০৩

গেলেন। হঠাৎ রামকৃঞ্ণর গান বন্ধ হয়ে গেল। ন্থুর রাজতে বাজতে যেন চট করে সেতারের তার ছিড়ে গেল। ঠাকুর ধমকে উঠলেন --এখানেও ভাবনা, চিন্তা

কর্মচারীর! অদূরে ভিড় করেছিল! পাগল ঠাকুর সকলকেই চমকে দিলেন কাকে ধমকালেন তিনি ? কর্মচারীরা মন্দিরে অন্ত কাউকে আর দেখতে পায় না। সামনে তে রাণী মা বসে! রাণীমাকেই বুঝি ধমকালেন পাগল ঠাকুর?

রামকৃষ্ণ শুধু ধমকেই চুপ করলেন না, রাসমণির পিঠে একটা চড়ও মেরে বসলেন। তিনি যেন তীর অবাধ্য শিষ্তাকে শাসন করলেন কর্মগরীর! হৈ হৈ করে উঠল। সর্বনাশ, পাগল ঠাকুর কার গায়ে হাত দিয়েছে |

কর্মচারীরা দৌড়ে এল! এর একটা বিহিত করা দরকার তাদের মধ্যে কয়েকজন মথুরবাবুকে খবরট। দিতে গেল। সেজবাবুর হুকুম--ছোট ভটচাষ যাই করুক, তোমরা' কিছু বলবে না! শুধু আমাকে জানাবে তাই তার! জানাতে ছুটলে।। এত বড় একট! ঘটন। কি না! জানিয়ে থাকা যায়? বড় লোকের মেজাজ খুশী হতেও সময় নেই, আবার বিগড়াতেও দেরী হয় না। এবার পাগল ঠাকুর গেল। আর নিস্তার নেই। অনেক পাগলামে। তারা এতদিন সহ্য করেছে। পাগলকে প্রশ্রয় দিলে শেষ পর্যস্ত এরকমই হয়। কা সাংঘাতিক অপমান! ভাবলেও গ! শির শির করে।

রাণীর দামী, চাকর, কর্মচারি, দারোয়ান যে যেখানে ছিল হৈ হৈ করে ছুটে এল। হৃদয় আর রামতারক অসহায়ের মঙেো। একপাশে দাড়িয়ে রইলেন।

রামকৃষ্ণের মুখে প্রশান্ত হাসি। রাণী মাথা নীচু করেবসে আছেন, অন্থুতাপে তাঁর অন্তর জলে যাচ্ছে কোনে! বিকার নেষ্ট ছু'নের মধ্যে জগজ্জননীর সামনে বসে একি ভাবছিলেন তিনি ।. রামকৃ্চ অন্তর্যামী। সব জেনে তাকে শাসন করেছেন। বিপথ থেকে তাকে টেনে আনলেন

বড় নেহ করেন তাকে এইতো গুরুর কাজ রাণী হাত তুলে সকলকে সরে যেতে বললেন।

_চুপ করে তোমর! সবাই দুরে থাকো

কর্মচারীর! খুব ক্ষেপে গিয়েছিল। তার! পিছু হটতে যেন রাজী নয়।

রাণী তখন সকলকে উদ্দেশ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

--ভটচাষ মশায়কে কেউ কিছু বললে, আমি তাকে 'ভীষণ শাস্তি দেব। মায়ের সামনে পুজোয় বসেও আমার মন বিষয়-চিস্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছিল। ভটচাঁষ অন্তর্ধামী। মনের কথ। টের পেয়ে আমাকে শাসন করেছেন। ভটচায আমার গুরু তাকে কেউ কিছু বললে আমি শক্ত হাতে তার বিধান করবো

মথুরবাবুও এসে উপস্থিত হলেন একটু পরেই। তাঁর কানে খবরটা বেশ বিরাট হয়ে পৌছেছে বোধ হয় তিনি রাণীমাকে গিয়ে আর জীবন্ত দেখবেন না। পাগল ঠাকুর খুব ক্ষেপে গেছে বেদম প্রহার করেছেন তিনি রাশীমাকে। জীবিত থাকলেও এখন অনেকদিন ডাক্তার বাড়ি দৌড়াতে হবে।

মথুরবাবু এসে সব শুনলেন রাণীর কাছ থেকে তিনি হস্তদস্ত হয়ে ছুটে এসেছিলেন তিনিও সেই একই নির্দেশ দিলেন বর্চারীদের |

কর্মচারী, দাস-দাসী সকলেই অবাক হলে খুব! রাণীর গায়ে হাত দিয়েও ভটচাঁষের কোনে শাস্তি হলো না। তাকে কিছু বলতে পারা যাবে না কিজানি বড়লোকের কি খেয়াল! এবার যদি তাদেরকেও লাঠি পেট? করে. তখনও মুখ বুজে সইতে হুবে। কিছু বল। যাবে না। |

অবাক হলেন হাদয়, অবাক হলেন রামতারক |.

রামকৃষ্ক বলতেন-_রাসমণি হলেন ম! জগদম্বার অষ্ট-সথীর এক সধি। আট শক্তির এক শক্তি। রাসমণিকে তিনি খুব স্মেহ করতেন। শ্রন্ধাও করতেন। এত তেজ, এত দয়া, এত রূপ সাধারণ মানুষের হয় না।

দক্ষিণেশ্বরে বছ গুনী-জ্ঞানী ব্যক্তির আগমন হতে লাগল। ঠাকুর রাণীর আশ্রয়ে নিজের সাধন পথে এগিয়ে চললেন তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণ তার সহায় হলেন। এক রামাইত সাধু এলেন দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণ জটাধারী সাধুর কাছে নিলেন রামমন্ত্রে দীক্ষা সবধর্স সমন্বয় তোতাপুরীর কাছ থেকে সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করলেন। স্মৃফি গোবিন্দরাম এলেন রামকৃঞ্চকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষ। দিতে

১২৬৮ সালের ৮ই ফাল্তুন। রাণী দক্ষিণেশ্বরের দানপত্র স্বাক্ষর করলেন মানসিক দিক থেকে নিশ্চিন্ত হলেন তিনি

কিছুদিন আগে হঠাৎ একদিন রাসমণি পড়ে যায় মেঝেতে। ততটা তখন খেয়াল করেন নি। তেমনি ব্যথা! তে! লাগেনি। পড়ে গেলে কি হবে তেমন গ্রাহা করেন নি প্রথমে কাজের মানুষ, আবার কাজের মধ্যে ডুবে যান। কিন্তু জ্বর হয় রাসমণির।

জ্বর মানুষেরই হয়। তার জন্য ভাবনার কি আছে? জ্বর হয়, কমে আবার হয়, আবার কমে, রাণী গ্রাহ্থ করেন না, ওষুধও খান ন1।

রাণীর শরীর তুর্বল হয়ে পড়ে বয়সও হয়েছে। পেটের দোষ হলে একটু বেশি রকমের দাড়াল। ডাক্তার দেখে বলে গ্রহণী রোগ

চিকিৎসা শুরু হলে। | কিন্তু কোনে উপশম নেই মথুরবাবু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রাণীও এবার চিস্তিত হলেন। ডাক্তার- কবিরাঞজ আসল ওষুধ দিয়ে যান। আশ্বাস দেন। কিস্ত রোগ কমছে না। ওষুধে কোন উপকার হয় না। স্ুলক্ষণ দেখা যায় , ন1। ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়েন রাণী

রাসমণি বুঝতে পারেন। গার সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই সবার আগে দক্ষিণেশ্বরের দানপত্রটি ঠিক করে ফেললেন। তবু রাণীর মনে একট। বিরাট ছঃখ রয়ে গেল কেউ কোনদিন তার বিরোধিতা করেনি। বড় মেয়ে পদ্মণি গে ছাড়লেন না। তিনি উইলে থ্বাক্ষর করলেন না। ম। কি সবই দান-ধ্যান করে তাদের পথে

১০৬

বসিয়ে যাবেন। অস্তিমশব্যায় শুয়ে রাসমণির মনে তাই শাস্তি নেই।

রাণী বললেন মথুরনাথকে।

--আমাকে কালীঘাটে নিয়ে চল। মায়ের পায়ের কাছেই শেষ নিঃশ্বাস পড়ক।

: মথুরবাবু কোনে ছিরুক্তি করলেন না। দেরী করলেন ন৷

তিনি একটুও রাণীকে কালীঘাটের বাড়িতে আন। হলে!

একথা রাসমণি তো! বলবেনই | কালীঘাট মায়ের এক লীঠস্থান মায়ের অষ্ট সেবিকার একজন তিনি।

দৈনিক কত লোক আসে রাণীর পরিচিত (লোকের সংখ্যাও তম ছিপ না। একে একে সকলে আসেন অন্যরা রাণীর বাড়ির দরজায় দাড়ি'য় থাকে তাদের চোখে-মুখে ব্যাকুল দ্রিজ্ঞাস1-- রাণীম। কেমন আছেন ?

শ্মভিতস্তায়ন করা হলো। হোম, যাগ-যজ্ঞ,। পুজা-পাঠ

তানুষ্ঠানের কোনো ক্রটি হলে। না। কিন্তু রাণীর শারীরিক উন্নতি আর হলে না।

কালীঘাটে সেবার মেলা ছিল একটা হয়তে? কোনো যোগ ছিল। রাঁসমণির কুশল সংবাদ শোনবার জন্য বাড়ির সামনে ভিড় জমে যাঁয়। তিনি ছিলেন সকলের রাণীমা1। কেউ বা আসে হ্েেঁটে কেউবা গাড়ীতে, কেউবা আসে পাক্ষীতে। সকলের যুখে এক গন _রাণীম! কেমন আছেন?

মথুরবাবু মায়ের মতই শ্বাশুড়ির দেবা করে চলেন। তিনি মাথার কাছে বসে থাকেন। ছৃঃখট। তারই বেশি। তিনি নিজের মায়ের মতই ভালবাসতেন রাণীকে। সম্পর্কট। খুন মধুর।

মথুরবাবু এবাড়ির আজ সেজ জামাই | তিনি প্রথমে এসেছিলেন মেঅজামাই হয়ে। স্ত্রীমারা যান। মথুরবাবু তখন চলে যেতে চেয়েছিলেন। কেন থাকবেন আর শ্বশুর বাড়িতে; যার জন থাক তিনি চলে গেলেন।

১০৭

কিন্ত রাসমণি ছাড়লেন না। রাণী ভালবেসে ফেলেছিলেন। ছেলে নেই। ছেলের মতই নেহ করতেন এই জামাইকে। মথুরনাথ চলে গেলে তাঁর ডান হাতট। ভেঙে যাবে। সেজ মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলেন মথুরবাবুর। আবার নতুন করে আর এক প্রীতির বাধনে বাধলেন মথুরনাথকে বাঁধন খোলা পড়েনি

সেই শ্বাশুড়ি আজ মৃত্যুশ্য্যার। মধুরবাবুর মনে হলে। সব হারাতে বলেছেন পরামশের প্রয়োজন হলে কার কাছে যাবেন? কে মায়ের মতো নেহ দিয়ে আড়াল করে রাখবে তাকে

ক্রমশই মৃতু।র দ্িন ঘনিয়ে আসে রাণীমা! তে। যাবেনই, যে কদিন নিজেদের সেবাযত্বে ধরে রাখা যায়। বাঁচার আর কোনে। আশ। নেই।

নবম দিন বুঝি আর কাটতে চায় না। গ্রামাইরা বিষপ্-বদনে শিয়রের কাছে বসে রয়েছেন আর মেয়ের মায়ের পায়ে কাছে বসে নীরবে চোখের অল ফেলছেন। এরকম মা ক'জন মেয়ের ভাগ্যে হয়।

রাণী জ্ঞান হারাননি। তিনি সজ্ঞানে আছেন। গুরু পুরোহিতের পায়ের ধুলো মাথায় নিলেন। মায়ের নিমাল্য মাথায় রাখলেন ছোটদের আশীবাদ করলেন সাস্বন। দিলেন।

রাণীর অবস্থার কথ। সহরে ছড়িয়ে পড়ে না, আর কোনে। আশ। নেই আজ টিকবেন কিনা সন্দেহে। লোক আসতে শুরু করে। বিষণ্ন মুখে রাণীকে দেখতে আসে তারা, কোনে। কোলাহল নেই, কোনো গুপ্তন নেই স্তব্ধ, বিষপ্ূ মৌন সকলে

চরম উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কার মধ্য দিয়ে সারাটা দিন কেটে “গেল। ঘড়িতে রাত আটট1 বাজলো বাড়ির আনাচে-কানাচে কোথাও একটুও অন্ধকার নেই। বাড়ির সব আলো জ্বলছে। অন্ধকাঁরকে বাড়ি থেকে খেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে যেন। দিনের আলোর মতে। উজ্বল সমস্ত বাড়িটা

রাসমণি চোখ বুদ্ধে আছেন। সবাই উৎকণ্ঠ।' নিয়ে তাকিয়ে

১০৮

আছেন তার দিকে। বোধহয় কারোর পলক পড়ছে না। কি জানি যদি সেই পলকের মধ্যেই রানীম। দেহত্যাগ করেন! কারোর কোন কাজের তাড়। নেই। সব কাজের বড় কাজ রানীর শেষ সময়টির জন্য নীরবে প্রতীক্ষা কর!।

ধীরে ধীরে ঘড়ির কাট। এগোতে থাকে রাত বাড়তে থাকে হঠাৎ কয়েক মুহুর্তের অন্য রাণী চোখ মেললেন। তাকালেন তিনি সকলের দিকে সবাই ঝুঁকে পড়েন কথা বলার অন্য রাসমণির শেষ কথ।-_-কি হবে, পদ্মমণি তে। উইলে স্বাক্ষর করলে ন।।

আবার পর মুহুর্তে চোখ বন্ধ করলেন রাণী। আলো আর ভালে লাগছে না। কাতরকঠে বললেন,

-আলে। নিভিয়ে দে। ওসব রোশনাই আর ভালো লাগছে না। এখন আমার মা আসবেন আমি তার দিব্যক্্যোতি দেখতে পাচ্ছি।

মায়ের সেবিকা মাতৃমূতির দর্শন পেলেন সঙ্ঞানে। প্রিয় সেবিকাকে স্বর্গলোকে নিয়ে যেতে দেবী নিজে এসেছেন। রাত গভীর হলো রাণী স্থির হলেন। মহাপ্রস্থানের পথে পা বাড়ালেন রাসমণি

শোকে মুহামান সকলে বাংলার আকাশ থেকে এক উজ্জল নক্ষত্র খসে গেল। একটি অগ্নিশিখ। নিবাপিত হলো

রামকৃঞ্চ ধ্যানে আত্মমগ্ন ছিলেন তখন। তিনি আছেন দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের দিব্যদৃষ্টির সামনে একটি মুতি হঠাৎ ভেসে উঠলো রামকৃষ্ণ স্পষ্ট করে তাকালেন।

কে?

--আঘমি বাবা,

রাণী রাসমণি তার সামনে দাড়িয়ে

রামকৃষ্ণ বুঝলেন সব। শিব শিব বলে যুক্ত কর নিজের কপালে ঠেকালেন।

পরের দিন ভোত্র মথুরবাবু এলেন দক্ষিণেশ্বরে রামকৃ গঙ্গার

১৬৪

'ভীরে- পাথরের যুত্তির মতো! বসে আছেন। রানী আর মর্তলোকে নেই। মধুরবাবুকে দেখে রামকুঞ্ণ বললেন, --আমি জানি। রামকু্ণ গেয়ে উঠলেন-- ভেবে দেখ মন কেউ কারুর নয় মিছে ভ্রম ভূমণ্ডলে ভূলে ন। দক্ষিণ! কালী বন্ধ হয়ে মায়াজালে ॥” রাণী রাসমণির অতি প্রিয় গান। মথুরবাবু বিশ্মিত হলেন না। রামকৃষ্ণ জানবেনই তো, তিনি 'ষে অন্তর্যামী। তিনি যে দেবতা তার মুখ দিয়ে কথা সরলে। বেশি রাস্তার ছু'ধারে লোক দাড়িয়ে গেছে সবাই শেষবারের মতো রাণীকে একবার দেখবে রাণীর শেষ যাত্র।। আদি গঙ্গার পুণ্য- তীরে নিয়ে যাওয়া হবে। ধীরে, ধীরে বাহকের এগিয়ে চলেন। কতটুকুই ব। পথ। কিন্তু মানুষের ভিড় ঠেলে এগোতে হবে আজ সময় লাগবে। পালক্ষে শুয়ে আছেন মহারানী। ফুলে ঢাক। পড়ে গেছে তার! দেহ। শুধু শ্বেত চন্দনে সাজানো মুখখানা ফাক রয়েছে। একটু একটু করে এগোচ্ছেন। নাম কীর্তন হচ্ছে। হচ্ছে মায়ের নাম। যুঠো মুঠো খই, আর টাকা-পয়সা ছড়ানে। হচ্ছে আদি গঙ্গার কূলে জলে উঠলো অগ্নিশিখা। ধীরে ধীরে রাণীর নশ্বর দেহ সর্বগ্রাসী অনল গ্রাস করে ফেললো অমর রামীর আটযট্রি বছরের দেহটি নিঃশেষ হয়ে মিলিয়ে গেল। কিন্ত রাণী কি নিঃশেষ হয়ে মিলিয়ে গেছেন আমাদের মন থেকে? ] কোন রাক্বংশের মেয়ে বা বউ না হয়েও তিনি ছিলেন সেকালের রাণীম।।

১১৬